ত্রিপুরায় ফের নৃশংস হামলা চালালো বিজেপি’র দুর্বৃত্ত বাহিনী। হামলায় নিহত হয়েছেন শহীদ মিঞা নামে এক সিপিআই (এম) কর্মী। জখম হয়েছেন আরও অন্তত ১২ জন পার্টিকর্মী। তীব্র আক্রমণের মুখেও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সিপিআই (এম) কর্মীরা। বিজেপি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সিপিআই (এম) কর্মীদের পালটা মারে তাদের অন্তত ২০ জন জখম হয়েছেন। সিপিআই (এম)’র পক্ষ থেকে এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়েছে।
ত্রিপুরার সিপাহীজলা জেলার বিশালগড় মহকুমার চড়িলাম বিধানসভা কেন্দ্রে এদিন সিপিআই (এম)’র পক্ষ থেকে ব্লকে ডেপুটেশনের কর্মসূচি স্থির করা হয়। চড়িলাম রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মার কেন্দ্র। রাজ্যে বিজেপি’র সরকার আসার পর থেকে সেখানে পার্টির কোনও কাজ করতে দেওয়া হয়নি তীব্র সন্ত্রাস কায়েম করে। চড়িলামে সিপিআই (এম)’র আঞ্চলিক কমিটির দপ্তর গত পাঁচ বছরে বারে বারে আক্রমণ করা হয়েছে। আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকবার। বিজেপি দুর্বৃত্তদের তালা মেরে দেওয়া সেই অফিস খুলতে এবং রাজ্যের জনগণের দাবিদাওয়া নিয়ে ব্লক অফিসে ডেপুটেশনের ডাক দেওয়া হয়। এর জন্য সিপিআই (এম)’র পক্ষ থেকে আগাম পুলিশের অনুমতি নেওয়া হয় এবং ব্লকেও ডেপুটেশন দেওয়ার জন্য সময় নিয়ে রাখা হয়। সেটা জানার পরেই বিজেপি’র পক্ষ থেকেও এদিনই ব্লক দপ্তরের সামনে কর্মসূচি ঘোষণা করে দেওয়া হয়। সে কথা জানার পরে সিপিআই (এম) নেতৃবৃন্দ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ আশ্বস্ত করে সিপিআই (এম)’র কর্মসূচি হবে। সময়ের কিছু পরিবর্তন করে দেওয়া হয়।
বুধবার চড়িলাম পার্টি অফিসে এই কর্মসূচির জন্য সিপিআই (এম) কর্মীরা জড়ো হলে দেখেন, বিজেপি ব্লক অফিসের সামনে ঘিরে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে। চড়িলাম বাজারের একদিকে সিপিআই (এম)’র আঞ্চলিক কমিটি অফিস। অন্যদিকে ব্লক অফিস। দুটির মধ্যে দূরত্ব খুবই সামান্য। বিজেপি কোনও অশান্তির চেষ্টায় আছে বুঝতে পেরে সিপিআই (এম) কর্মীরা পার্টি দপ্তরের সামনে থেকে বাজারের মধ্যেই মিছিল করবে এবং ব্লকে কেবলমাত্র প্রতিনিধিত্বমূলক ডেপুটেশন দেবে এমনই স্থির করা হয়। সিপিআই (এম)’র মিছিল ব্লক অফিসের সামনে না যাওয়ায় তারা যে উদ্দেশ্যে জড়ো হয়েছিল, তা ভেস্তে যাচ্ছে দেখে বিজেপি’র দুষ্কৃতী বাহিনী অতর্কিতে বাজারের মধ্যেই সিপিআই (এম)’র মিছিলের উপর হামলা করে। অজস্ত্র ইট-পাথর, কাচের বোতল ছুঁড়তে থাকে। মুহুর্মুহ বোমা মারতে থাকে। বোমা এসে লাগে প্রবীণ পার্টিকর্মী শহীদ মিঞার গায়ে। বোমার আঘাতে জখম প্রবীণ শহীদ মিঞার মাথা এরপর ইট মেরে থেঁতলে দেয় বিজেপি দুর্বৃত্তরা। রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। ইট এবং বোমার আঘাতে জখম হন আরও কয়েক জন পার্টিকর্মী। পার্টির প্রবীণ নেতা, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বিশালগড়ের বিধায়ক ভানুলাল সাহাকেও ইট মারা হয়। ইটের আঘাতে তাঁর নাক দিয়ে ঝরঝর করে রক্ত ঝরতে থাকে। পার্টির জেলা কমিটির সদস্য প্রদেশ রায়ও জখম হয়েছেন।
আহত, রক্তাক্ত অবস্থাতেই সিপিআই (এম) কর্মীরা পালটা প্রতিরোধ গড়েন। স্থানীয় মানুষও ভয়কে সরিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। পালটা প্রতিরোধে পালানোর চেষ্টা করে বিজেপি দুর্বৃত্তরা। কিন্তু স্থানীয় মানুষের হাতে ধরা পড়ে এবং মারধরও খায়। জানা গেছে, বিজেপি’র হামলা থেকে বাঁচাতে স্থানীয়রা বহু পার্টিকর্মীকে রাত পর্যন্ত তাঁদের ঘরে লুকিয়ে রেখেছেন। অনেককে বেশি রাতে পুলিশ উদ্ধার করেছে। এদিকে প্রবল সংঘর্ষের পরে চড়িলাম বাজার এলাকায় পড়ে থাকা জখম ব্যক্তিদের উদ্ধার করে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এদের মধ্যে ১১ জনের অবস্থা গুরুতর হলে তাদের আগরতলা জিবি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বাকি আহতরা বিশালগড় এবং বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
রাতেই হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। মানিক সরকার জানান, আহত শহীদ শহীদ মিঞাকে জিবি হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়। জিবি হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁকে দেখেই জানিয়ে দেন আগেই মৃত্যু হয়েছে। আরও পাঁচ জন সিপিআই (এম) কর্মী জিবি হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে জানিয়েছেন মানিক সরকার। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজ্যে জঙ্গলের রাজত্ব চলছে। ফ্যাসিস্ত সুলভ সন্ত্রাসও অব্যাহত আছে। হামলা হিংসায় যুক্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। বিজেপি’র কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, মানুষ এইসব ভুলে যাবেন মনে করলে বিজেপি ভুল করছে। মানুষ নিশ্চয়ই জবাব দেবেন। সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেছেন, জনবিচ্ছিন্ন, দুর্নীতিগ্রস্ত বিজেপি আর কয়েক মাস ক্ষমতায় আছে। কিন্তু লুটের রাজত্ব কায়েম রাখার জন্য গোটা রাজ্যে কোনও বিরোধী দলকে কাজ করতে দিচ্ছে না। তিনি বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, মিছিল করে ব্লক অফিসে ডেপুটেশনটুকুও দেওয়া যাবে না! এদিনের হামলার ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন তিনি।
Comments :0