নির্ভুল ভোটার তালিকা করার কাজ কমিশনের। কোনও বৈধ ভোটার নাম বাদ দেওয়া যাবে না। যারা মৃত, ভুয়ো তাদের নাম বাদ দিতে হবে। এসআইআর ঘোষণার পর রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠক এই কথা বললো সিপিআই(এম)। এদিন সিপিআই(এম) এর পক্ষ থেকে বৈঠকে ছিলেন সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ী, কল্লোল মজুমদার, পলাশ দাস।
সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘কমিশনের মনোভাব দেখে মনে হলো তারা এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয় এই কাজের জন্য। মানুষের মনে ভয় তৈরি করা হচ্ছে। আমরা দেখছি বিজেপি তাদের রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য সিএএ ক্যাম্প চালাচ্ছে। কমিশনের কাছে দাবি জানানো হয়েছে এই কাজ বন্ধ করার।’
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে রাজনৈতিক দলের বিএলএ দের নির্দিষ্ট পার্টের ভোটার হতে হবে। এই বিষয় আপত্তি জানিয়ে সিপিআই(এম) এর পক্ষ থেকে এদিন দাবি করা হয়েছে বিএলও যদি অন্য পার্টের থেকে হতে পারে তবে বিএলএ রাও অন্য পার্ট থেকে হতে পারেন। বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্য দল এই বিষয় সহমত জানিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
শমীক লাহিড়ী বলেন, ‘কমিশনকে কে অধিকার দিয়েছে একজন মানুষকে নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করার? তিনি বলেন, কামারহাটিতে নাম ছিল এমন একজন খরদাহ বিধানসভায় নাম তোলার জন্য আবেদন করেন। তার শুনানিও হয়। তারপর তার নাম তোলার আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়, কারণ দেখানো হয় যে তিনি নাকি ভারতের নাগরিক নন। কে এই অধিকার কমিশনকে দিলো। তিনি আরও বলেন, বিজেপি নাগরিকত্ব হারানোর ভয় দেখাচ্ছে। কমিশনের কাজ নয় সেই আতঙ্ক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার।’
কমিশন সূত্রে খবর এখনও পর্যন্ত সিপিআই(এম) এর পক্ষ থেকে ছয় হাজার বিএলএদের নাম কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে সাত হাজার এবং তৃণমূলের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার নাম পাঠানো হয়েছে।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে অরূপ বিশ্বাস বলেন, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে চাইছে কমিশন। ফিরহাদ হাকিম বলেন, বৈধ ভোটারের নাম বাদ দিলে তার বিরোধিতা করা হবে। কেন সিএএ ক্যাম্প হচ্ছে তার দায় কমিশনকেই নিতে হবে। উল্লেখ্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভুয়ো ভোটারদের নাম তালিকা রেখে দেওয়ার অভিযোগ বার বার করা হয়েছে বিরোধীদের পক্ষ থেকে। ডায়মন্ড হারবার সহ একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে তালিকায় ভুয়ো ভোটার, মৃত ভোটারদের নাম রয়েছে। সিপিআই(এম) এর পক্ষ থেকে বার বার অভিযোগ করা হয়েছে তৃণমূল ভুয়ে ভোটারদের নাম রেখে দিতে চায় যাতে তারা রিগিং করে ভোটে জয়ী হতে পারে।
এদিন বিজেপির পক্ষ থেকে শিশির বাজোরিয়া বলেন, এনআরসিসি জুজু মমতা দেখিয়েছে এই রাজ্যে। এখনও এনআরসি, সিএএ নিয়ে তৃণমূল হাওয়া গরম করছে। উল্লেখ্য বাজপেয়ী সরকারের সময় যেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন আনা হয়েছিল তাতে শরিক ছিল মমতা ব্যানার্জি। পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল মমতা। সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘২০০২ সালে ইআর হওয়ার পর ২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচন হয়। ইউপিএ ১ সরকারের আমলে মমতা এবং বাজপেয়ী ভোটার তালিকা নিয়ে সংসদে সরব হয়। দুজন আলাদা আলাদা দিনে ভোটার তালিকা নিয়ে আলোচনার দাবিতে সরব হয়। তখনই মমতা কাগজ ছুঁড়েছিল স্পিকারের উদ্দেশ্যে। বলে রাখা দরকার সেই সময় যেই তালিকা নিয়ে মমতা এবং বিজেপি প্রশ্ন তুলেছিল আজ সেই তালিকা ধরেই এসআইআরের কাজ হবে বলে কমিশন জানিয়েছে।’ নিজেদের সাংগঠনিক ব্যার্থতা ঢাকতে এদিন বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় কর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে বলে তারা সব বুথে বিএলএ দেয়নি।
Comments :0