GANASHAKTI EDITORIAL FOR 5 FEBRUARY

মোদীদের আদানি বাঁচাও অভিযান

সম্পাদকীয় বিভাগ

editorial adani bengali news

মোদী সরকারের বিভিন্ন নজরদারি সংস্থার ফসকা গেরোর সুযোগ নিয়ে আদানি গোষ্ঠীর রাতারাতি ভারতে কর্পোরেট জগতে মহীরুহ হয়ে ওঠার রহস্য মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ফাঁস করে দেবার পর থেকে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার দর টানা কমতে কমতে অর্ধেকে এসে ঠেকেছে। 

হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছে, সম্পূর্ণ বেআইনি পথে কৃত্রিমভাবে আদানি গোষ্ঠী  তাদের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার দর ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ঢোল করে তুলেছে। বাস্তবে তাদের সংস্থার শেয়ার মূল্য অতটা হবার কথা নয়। জালিয়াতির হাওয়ায় শেয়ার দর ফুলে ওঠার দৌলতেই আদানি বিশ্বের তিন নম্বর ধনী হয়ে উঠেছিলেন অতি অল্প সময়ের মধ্যে। আদানিদের এমন বাড়বাড়ন্তে নরেন্দ্র মোদীর যে অনুপ্রেরণা আছে তা প্রশ্নাতীত। কারণ ভারতের শিল্পগোষ্ঠী ‍হিসাবে আদানির উঠে আসার ক্ষেত্রে ঘনিষ্ট বন্ধুরূপে বরাবর পাশে ছিলেন মোদী। আজও তিনি যে বন্ধুর পা‍‌শেই আছেন সেটা প্রমাণ করে দিচ্ছে তাঁর এবং তাঁর সরকারের আচরণ।


এত বড় একটা ঘটনা, যাকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে নানা প্রতিক্রিয়া অথচ মোদী নীরব। কোনও প্রতিক্রিয়া নেই সরকারের তরফ থেকে। অবশেষে দিন দশেক কেটে যাবার পর নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে সরকার। অবশ্য আদানিদের বিরুদ্ধে ওঠা গুরুতর অনিয়মের তদন্ত বা কড়া পদক্ষেপের লক্ষ্যে নয়। বরং আদানিদের ব্যবসায়িক বিপর্যয় ঠেকাতে মোদী তাঁর সরকারকে কোমর বেঁধে নামিয়েছেন। সংসদের অধিবেশন চালু থাকা অবস্থায় সংসদে কোনও বিবৃতি না দিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা আদানিদেরই সংবাদ চ্যানেলে গিয়ে আদানিদের হয়ে ব্যাট ধরেছেন। আদানিদের সংস্থায় বিনিয়োগ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং এলআইসি বিপদের মুখে পড়লেও তাদেরকে দিয়ে বলানো হচ্ছে কোনও সমস্যা নেই। আদানি গোষ্ঠীর পতনে বিনিয়োগকারী ও ঋণদাতা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার উপর নাকি কোনও প্রভাব পড়বে না। এদিকে আদানিদের যাবতীয় দু’নম্বরী কারবার নিয়ে সংসদে আলোচনার জন্য বিরোধীদের দাবি ফুৎকারে  উড়িয়ে দিচ্ছে সরকার পক্ষ। 

অর্থাৎ আদানিদের ‍ নিয়ে সংসদে কোনোরকম আ‍‌লোচনা বা বিতর্ক চায় না মোদীর দল। তেমনি আদানিদের কারচুপি নিয়ে সংসদীয় কমিটির তদন্ত বা সুপ্রিম কোর্টে নজরদারিতে তদন্তের জন্য বিরোধীদের দাবিও মানতে রাজি নয় সরকার। আদানিদের নিয়ে টানা-হ্যাঁচড়া হোক, কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসুক তা কোনও অবস্থাতেই চায় না মোদী সরকার। সব দিক থেকেই সরকার ও শাসকদল আদানিদের দুর্নীতি আড়াল করায় এবং আদানিদের রক্ষা করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।


আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে সন্দেহ ও অভিযোগ অতীতেও বার কয়েক শোনা গেছে। কিন্তু সেসব নিয়ে কোনোরকম উচ্চবাচ্য না করে চাপা দেওয়া হয়েছে। লগ্নির বাজার ও ঋণের বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি। তাদের নাকের ডগায় আদানিরা যা খুশি বেআইনি কাজ করে গেছে। সেবি দেখেও দেখেনি, শুনেও শোনেনি। হয়তো প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট বন্ধু হবার কারণে সেবি সক্রিয় হবার সাহস পায়নি। তেমনি সেস্ট ব্যাঙ্ক সহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি চোখ বুজে আদানিদের অকাতরে ঋণ দিয়েছে ঝুঁকি যাচাই না করে। এলআইসি কিনেছে আদানিদের বিপুল শেয়ার।

বোঝাই যাচ্ছে সরকারে চাপ না থাকলে এলআইসি বা সরকারি ব্যাঙ্ক এমন ঝুঁকি নিতে পারত না। আরও লক্ষণীয়, আদানি যখন গাড্ডায় পড়ে তখন তাদের ধসে যাওয়া শেয়ার অতি উচ্চমূল্যে কেনে অন্য কর্পোরেট গোষ্ঠী ও তাদের মালিকরা এবং দেশের অতি ধনী ব্যক্তিরা। কার  অঙ্গুলি হেলনে ভাঙা নৌকায় পাড়ি দেবার সখ হয়েছে কর্পোরেট মালিক ও ধনপতিদের তা আমজনতার জানা দরকার। আর একটি বিস্ময়কর ঘটনা আদানিকাণ্ডে সম্মিলিত বিরোধী দলের যৌথ কর্মকাণ্ডে তৃণমূল অনুপস্থিত। মোদীদের গোপন বার্তায় কি তৃণমূল আদানি প্রশ্নে নীরব হয়ে গেছে? নবান্নে আদানিদের আপ্যায়নের গোপন রহস্য কি এখানে লুকিয়ে।

Comments :0

Login to leave a comment