‘‘দয়া করে অনশন তুলে কাজে ফিরুন’’, ফোনের ওপার থেকে বললেন মুখ্যমন্ত্রী। পাল্টা আন্দোলনরত চিকিৎসকরা জানিয়ে দিলেন, ‘‘যতক্ষণ না পর্যন্ত সব দাবি মানা হচ্ছে ততক্ষন কোন ভাবে অনশন প্রত্যাহার করা হবে না।’’ধর্মতলা চত্বরে চিকিৎসকদের আন্দোলনকে সংহতি জানিয়ে আসা সাধারণ মানুষ জনও তখন আওয়াজ তুলছেন , ‘এই লড়াই চলবে।’
শনিবার ১৪ দিনে পা দিয়েছে জুনিয়ার চিকিৎসকদের অনশন। এদিন বেলার দিকে হঠাৎ করেই অনশন মঞ্চে যান মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সাথে ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী ও ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখার্জি। মুখ্যসচিবের ফোন থেকে এদিন আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা ব্যানার্জির সাথে কি কথা হচ্ছে তা যাতে সাধারণ মানুষজন জানতে পারেন তার জন্য মাইকের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ফোনের ওপার থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায় যে, ‘অনশন তুলে নাও। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসুক সব কিছু।’
জুনিয়ার চিকিৎসকরা – আমরা আপনার সাথে কথা বলতে চাই।
মুখ্যমন্ত্রী – আমার সাথে বসতে হলে মঙ্গলবার আসতে হবে।
জুনিয়ার চিকিৎসকরা জানান তারা আজই আলোচনায় বসতে চান।
মুখ্যমন্ত্রী – তোমাদের যেমন সময়ের দাম আছে, আমারও সময়ের দাম আছে। যখন ইচ্ছা তখন আসতে চাইলে হবে না। তোমার যদি অনশন চালিয়ে যেতে চাও তাহলে সরকারি চিকিৎসকরা যাবেন গিয়ে দুবেলা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আসবে।
মুখ্যমন্ত্রী যখন এই কথা বলছেন তখন সেখানে থাকা সাধারণ মানুষজন ক্ষোভের সাথে বলছেন, ‘ডান্ডিয়া নাচতে পারে আর ছেলে মেয়ে গুলোর সাথে বৈঠকে বসতে পারছে না।’ পরে অবশ, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে সোমবার বিকেল পাঁচটায় নবান্নে তিনি আন্দোলনকারিদের সাথে বৈঠকে বসবেন। তবে মাত্র দশজন সেই বৈঠকে আসতে পারবে।
এক আন্দোলনকারি ফোনে মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন– আট দিন হয়ে গেলো অনশন করছি। আমি মনে করি আমাদের দাবিগুলো ন্যায্য।
মুখ্যমন্ত্রী - দাবি গুলো পড়ো।
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির বৈঠকে এই দশ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, আর মুখ্যমন্ত্রী আজ ভাব করছেন যে তিনি জানেন না চিকিৎসকদের দশ দফা দাবি কি কি!
আন্দোলনকারিদের আটটি দাবি শুনেই ফোন রেখে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাদের যেই প্রথম দাবি, অভয়ার দ্রুত বিচার সেই দাবির সাথে তিনি একমত।
স্বাস্থ্য দপ্তরের দুর্নীতির দায় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে নিতে হবে এবং স্বাস্থ্য সচিবের অপসারন এই দাবি তিনি মানেননি। ফোনে তিনি রেগে গিয়েই বলেন, ‘‘সরকার কি করবে না করবে তা তোমরা কেউ বলে দিতে পারো না।’’
হাসপাতালে শূন্য পদে নিয়োগের দাবিও তিনি মানেননি।
শুক্রবারই জুনিয়র চিকিৎসকরা প্রেস বিবৃতি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। তাঁরা বলেন, আর কতদিন না খেয়ে মুমূর্ষু হয়ে থাকব সেটা আপনি আমাদের বলে দিন।
অনশনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা বলেছেন, "যিনি আমাদের রাজ্যের অভিভাবক তাঁর একবারও মনে হলো না আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখার। আমাদের বলতেও কষ্ট হচ্ছে। আমরা শুধু জল খেয়ে আছি। ওআরএস, নুন, চিনি কিছু না- কেবল জল। আর সেই জলটা আমাদের চোখ দিয়ে বেরনো খালি বাকি আছে। আমরা তো ওনার সন্তানসম। দুর্গাপুজোয় দেখলাম উনি মেতে আছেন মজে আছেন। উনি কেন এতো নিষ্ঠূর। এটা আমাদের নির্বাক করে।’’
Comments :0