campain agginst superstition

চন্দ্রকোনায় কাঁঠাল গাছের রক্তক্ষরণ! কুসংস্কারের রোধে বিজ্ঞান মঞ্চ

জেলা

গত চারদিন ধরে গৃহস্থের কাঁঠাল গাছ থেকে গড়িয়ে পড়ছে লাল রঙের তরল। ঘটনায় এলাকায় ছড়িয়েছে আতঙ্ক। খামতি নেই অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারেরও। এই  তরলকে রক্ত বলে গুজব ছড়িয়েছে এলাকায়। গাছের তলায় মাটির ঘট, লাল সালু, ধূপ-ধূনা সিঁদুর দিয়ে চলছে পূজা। এমন ঘটনায় প্রশাসন, শাসকদল নির্বিকার। ঘটনাস্থলে বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মীরা।

এমনই ঘটনা ঘটেছে চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুন গ্রামে। এই গ্রামেরই এক মহিলা মমতা মিদ্যার বাড়ির উঠানে এক বড় ধরনের পুরানো কাঁঠাল গাছ রয়েছে। সেই গাছের গুড়ি থেকে এক ধরনের লাল রঙের তরল মাটিতে গড়িয়ে পড়াতেই ঘটনার সূত্রপাত। মুহূর্তের মধ্যে রক্ত গড়িয়ে পড়ার রটনায় শোরগোল পড়ে যায় এলাকায়। গ্রাম ভেঙে বহু মানুষ তা দেখতে ভিড় জমায়। স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পরে কৌতূহল। কেউ বলছেন যে দেবীর অলৌকিক উপস্থিতির ইঙ্গিত এটি। আবার কেউ বলছেন যে এটি কোনও অশুভ লক্ষণ। আর তাকে কাজে লাগিয়ে শুরু হয় পূজা অর্চনা।

ঘটনাটি প্রচারিত হওয়ার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মীরা। তারা গ্রামবাসীদের বোঝানো চেষ্টা করেন যে এটা কোনও অলৌকিক ঘটনা নয়। বিজ্ঞান সম্মত বিষয় থেকেই এমন ঘটনা ঘটেছে। বিজ্ঞান কর্মী বাবুলাল শাসমল বলেন, "আমাদের দেহে যেমন নানান হরমন উৎসেচক থাকে। তেমনই গাছের মধ্যেও নানান রকমের রঞ্জক পদার্থ সহ শর্করা প্রভূতি থাকে। মাটি ভেদে এমন তরল পদার্থের রঙ ভিন্ন হয়। আঘাত জনিত কারনে কাঁঠাল গাছের গুঁড়িতে ফাটল হওয়ায় সেখান থেকেই এমন তরল পদার্থ বের হয়ে গড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিভাগের অধ্যাপক ডঃ অমল কুমার মণ্ডল বলেন; "কাঁঠাল জাতীয় গাছে লেটেক্স নামক পদার্থ থাকে। এই গোত্রের সকল গাছের মধ্যেই লাল, সাদা, হলুদ বা বর্ণহীন যেকোনও এক প্রকারের তরল পদার্থ  থাকে। এখানে লাল রঙের লেটেক্স গড়িয়ে পড়তে  দেখা গেছে।"

বিজ্ঞান আন্দোলনের নেতা ও বিশিষ্ট জীব বিজ্ঞানী ডঃ তপন মিশ্র বলেন, "এটি অত্যন্ত সাধারণ একটি ঘটনা। কাঁঠাল গাছের কাণ্ড থেকে যে রস বের হয়, তাতে ক্যারোটিনয়েড নামক রঞ্জক পদার্থ থাকার জন্য লাল দেখায়। এর মধ্যে রক্তের কোনও উপাদান যেমন আরবিসি, ডব্লিউবিসি ইত্যাদি নেই এবং অক্সিজেন বহন করতে পারেনা এই তরল। ফলে লাল রঙের লেটেক্স গড়িয়ে পড়ার ঘটনা দেখা যায়। এই গোত্রের সকল গাছের মধ্যেই মৃত্তিকার প্রকৃতি অনুযায়ী ও জীন ভেদে লাল( রক্তের মতো),  সাদা(দুধের মতো), হলুদ বা বর্ণহীন(জলের মতো) ইত্যাদির মধ্যে যে কোনও  এক প্রকারের তরল পদার্থ থাকে। এখানে যা ঘটেছে তা সম্পূর্ণ ভাবে লৌকিক, বাস্তব ও বিজ্ঞানসম্মত।"

Comments :0

Login to leave a comment