মহানন্দার পাড় থেকে, বালাসনের তীর থেকে, তিস্তার কোল ছুঁয়ে শহরের প্রায় সব প্রান্ত তখন এসে মিশছে শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে। বনবস্তি থেকে চা বাগিচা, পাহাড় থেকে তরাই, বৈচিত্রের রঙে জমাট বাঁধা মিছিল। শনিবার দুপুরে অবরুদ্ধ শহর শুনলো উত্তরবঙ্গকে নিয়ে বারেবারে রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসকের ভাগাভাগির রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়।
বাঘাযতীন পার্কে উপচে পড়া সমাবেশে দাঁড়িয়ে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের আহ্বান, ফাঁদে কেউ পা দেবেন না। ঠিকই, উত্তরবঙ্গে অনুন্নয়ন আছে, ক্ষোভ অভিযোগও আছে। গত ৮ বছর ধরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বা ১১ বছর ধরে রাজ্যের তৃণমূল সরকার কী করেছে উত্তরবঙ্গের জন্য? মমতা ব্যানার্জি থেকে নির্মলা সীতারামন, উত্তরবঙ্গের চা বলয়ের জন্য কী করেছেন? বাগিচা শ্রমিকদের লড়তে হচ্ছে মজুরির জন্য, রেশনের জন্য। বাগানের জমি সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গে এইমস হলো না কেন? তিস্তা প্রকল্প বাতিল করা হলো কেন? এসব নিয়ে নিরুত্তর থেকে এখন ভাগাভাগির প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রশাসিত বা সীমান্তশাসিত অঞ্চলের কথা সামনে টেনে এনে আসলে উত্তরবঙ্গের মানুষের আবেগ নিয়ে খেলার চেষ্টা, স্রেফ ভোটের স্বার্থে। দেশভাগের যন্ত্রণা এখনও বয়ে চলেছি আমরা। ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের লড়াই তো দেখেছি আমরা, লড়েওছি। একা নয়, বাঁচতে হলে একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে লড়তে হবে সব ধরনের বিভাজনের বিরুদ্ধে। সিপিআই(এম) সেই লড়াইয়ে আপনাদেরই শরিক।
এদিন ছিল সলিল চৌধুরির জন্মদিবস। সিপিআই(এম) দার্জিলিং জেলা কমিটির ডাকে এযাবৎকালের অন্যতম সর্ববৃহৎ সেই সমাবেশের মেজাজে, উচ্চারণেও বারে বারে ফিরে আসছিলেন জীবন-গানের স্রষ্টা সলিল চৌধুরি। ‘‘..এদেশ আমার/আমাদের মাটি/এদেশে যেখানে/ যত কিছু খাঁটি/আমাদের কারখানা, আর আমাদের নদী, খনি ও পাহাড়/আমাদেরই ভরা সোনার খামার...’’ —শপথের ভাষায় বাঙ্ময় আসলে বৈচিত্র আর ঐক্যের সুরই।
গঙ্গারাম থেকে শুরু করে ভোজনারায়ন, সইদাবাদ, নকশালবাড়ি, মানঝা, সহ তরাইয়ের প্রায় সবকটি চা বাগানের শ্রমিকরা এদিন বাঘাযতীন পার্কের সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। সকাল সকাল ঘরের কাজ শেষ করে অনেকটা পথ পার করে শিলিগুড়িতে মহানন্দা সেতুর নিচে জড়ো হয়েছিলেন রুমা গোয়ালা, সীতা সবরিয়ারা। এয়ারভিউ মোড়ে চা শ্রমিক সহ মহকুমার গ্রামীণ এলাকার মিছিল এগিয়েছে। সেই সময়েই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বস্তিবাসী মানুষদের দৃপ্ত মিছিলও ঢুকেছে বাঘাযতীন পার্কে। আবার ব্যাঙাইজোত থেকে মিছিলে হেঁটে সমাবেশস্থলে এসেছেন হরিপদ বর্মণ ও সঞ্জয় বর্মণের মত শত শত কৃষক, খেতমজুর। দাবির ভিন্নতা আছে, লড়াইয়ের রঙের ফারাক নেই।
Comments :0