বাতিল হওয়া প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরিতে ঢুকিয়েছিল কে? এই দুর্নীতি করল কারা? এটা খুঁজে বের করতে হবে। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের রায় প্রসঙ্গে এই প্রশ্ন তোলেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট ২০১৪’র টেটে নিযুক্ত প্রশিক্ষণহীন ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করেছে। এদিন মুজফ্ফর আহ্মদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে সেই প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম বলেন, রাজ্য সরকার মজা দেখছে। তাঁরা ভাবছে ভালোই হল। ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে পার্শ্ব শিক্ষকের বেতন দিলেই চলবে। প্রশ্ন হচ্ছে, নিয়োগে এই দুর্নীতি করল কারা? আসলে এই দুর্নীতির রাজত্ব ভালো ভাবে চালানোর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ থেকে শুরু করে স্কুল পরিচালন কমিটি হয়ে কলেজ পরিচালন কমিটি, সমস্ত জায়গায় গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে তৃণমূল। যাতে সমস্ত স্তরে এই ধরনের নিয়োগ নিয়ে কোনও প্রশ্ন না ওঠে। শিক্ষা দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে দলদাসদের বসিয়েছেন। কেন বসিয়েছেন, তা আজ স্পষ্ট হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের মতো শিক্ষার পরিচালন সংস্থাগুলি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হওয়ার কথা। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারে এসে এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুরোপুরি তুলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, রাজ্য সরকার চাইছে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে হাত গুটিয়ে নিতে। শিক্ষার পরিকাঠামো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। নয়া জাতীয় শিক্ষা নীতি বা এনইপি’র নামে বিজেপিও একই কাজ করতে চাইছে। সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে খুন করার নীল নকশা আঁকা হয়েছে এনইপি’তে। তারজন্য সবার আগে প্রয়োজন সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার মান নিয়ে সমাজে প্রশ্ন তৈরি করা। তৃণমূল সরকার সক্রিয় ভাবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করছে। একই কায়দায় সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
সেলিম আরও বলেন, ময়না তদন্তে কারচুপি রুখতে ভিডিওগ্রাফির নির্দেশ দিয়ে থাকে আদালত। তৃণমূল দুর্নীতিকে এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছে, যে নতুন করে হতে চলা ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ক্যামেরাবন্দী করার নির্দেশ দিতে হচ্ছে আদালতকে। রাজ্য প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে তলানিতে এনে ফেলেছেন মমতা ব্যানার্জি।
সেলিম আরও বলেন, দুর্নীতির যেই হিসেব সামনে এসেছে, তা হিমশৈল্যের চূড়ামাত্র। কিন্তু সেই পথ খুব সহজ ছিল না। রাজ্য সরকারের তরফে সত্য আড়ালের চেষ্টা হয়েছে। এখনও দোষীদের আড়াল করার কাজ চলছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকা ব্যবহার করে দিল্লির সবথেকে দামী উকিল নিয়োগ করা হচ্ছে দুর্নীতির তদন্ত আটকাতে।
মহম্মদ সেলিম অভিযোগ করেন, নিয়োগ দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। একাংশের আইএএস এবং আইপিএস আধিকারিক ও শিক্ষাবিদ এর সঙ্গে জড়িত। তা নাহলে এই পরিমাণ দুর্নীতি করা যায়না।
সেলিম বলেন, চিট ফান্ড থেকে শুরু করে চাকরি, সমস্ত ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের টাকা লুঠ হয়েছে। শিক্ষিত বেকাররা চাকরি পাচ্ছেন না। গ্রামের মানুষের প্রধানমন্ত্রী আবাসের টাকা, একশো দিনের কাজের টাকা, বিধবা ভাতার টাকা চুরি হয়েছে। সেই সমস্ত টাকা ফেরানোর দাবিতে লড়াই চালাবেন বামপন্থীরা। আগামী দিনে সেই লড়াইয়ের ঝাঁজ আরও বাড়বে।
Comments :0