Editorial

মানুষ সতর্ক

সম্পাদকীয় বিভাগ

আর জি করের নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে সর্বস্তরের মানুষের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রতিবাদকে হিংসাদীর্ণ সঙ্কীর্ণ দলীয় রাজনৈতিক প্রতিবাদের দিকে ঘুরিয়ে দিতে সুপরিকল্পিত ছক কষে পা বাড়াচ্ছে আরএসএস-বিজেপি। আর তার মোকাবিলার অজুহাতে প্রকারান্তরে তাতে মদত দিয়ে চলেছে রাজ্যের শাসক তৃণমূল ও সরকার। আর জি কর মেডিক্যাঅল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ন্যায় বিচার এবং সর্বত্র সবসময় নারীদের জন্য নিশ্চিত নিরাপত্তার দাবিতে যখন গোটা রাজ্য ফুঁসছে, প্রতিদিন প্রতিবাদের ঢল নামছে, সব অং‍‌শের মানুষ রাস্তায় নেমে শান্তিপূর্ণ পথে অভিনব প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তখন একদিকে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ছে শাসক তৃণমূল অন্যদিকে ক্ষমতা দখলের লোভে জিব লকলক করছে আরএসএস-বিজেপি’র। তাই গণমানুষের গণপ্রতিবাদের আবহকে হাইজ্যাক করে তাকে দলীয় মোড়কে পুরে ফেলার ছক কষা হয়েছে। একইভাবে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে হিংসায় দীর্ণ করে আন্দোলনের ময়দান থেকে আমজনতাকে ঘরে ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা হচ্ছে। বদলে আন্দোলনের লাগাম হাতে নিতে চাইছে সুযোগ সন্ধানী বিজেপি। চাইছে প্রচারের সবটুকু আলো তাদের উপরই পড়ে। উত্তাল প্রতিবাদী বাংলার আমজনতার ভূমিকা যেন আড়লে চাপা পড়ে যায়। আরএসএস-বিজেপি’র এই পরিকল্পনাকে সফল করতে পরোক্ষে আসরে নেমেছে তৃণমূল বাহিনী ও রাজ্য সরকার। অর্থাৎ বামপন্থী এবং রাজ্যের অগণিত জনগণের লড়াকু ভূমিকাকে চাপা দিয়ে ফের জা‍‌গিয়ে তোলা হচ্ছে সেই দ্বিদলীয় ভাষা। অর্থাৎ রাজ্য রাজনীতিকে বিজেপি-তৃণমূলের দ্বৈরথ হিসাবে উপসংহার টানার চেষ্টা হচ্ছে। তৃতীয় কোনও পথ নেই। জনগণের ভূমিকা অর্থহীন।
সেই ৯ আগস্ট থেকে ক্রমপ্রসারমাণ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ রাজ্যের ইতিহাসে শুধু অভিনব নয় নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। কোথাও কোনও অসভ্যতা বা হিংসার লেশমাত্র ছিল না। সেই আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে হিংসা ও মারদাঙ্গার দিকে ঠেলে দিতে আরএসএস-বিজে‍‌পি’র পরিকল্পনার প্রথমে নবান্ন অভিযান এবং পরে বাংলা বন্‌ধ করা হয়। প্রত্যাশিতভাবেই এক ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে সাধারণ মানুষকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেবার কৌশল নেয় রাজ্য সরকার, পুলিশ ও তৃণমূলের বাহিনী। অভিযানকারী ও বন্‌ধপন্থী উগ্রকর্মী ও দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশ তৃণমূলের নকল যুদ্ধের মধ্যে বিচারের দাবিতে মানুষের আন্দোলন হয়ে যায় তৃণমূল বনাম বিজেপি’র আন্দোলন।
প্রথমে থমকে গেলেও এই শয়তানি ক্রমশ সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রতিবাদী মানুষ বিরক্ত, অসন্তুষ্ট। তাঁরা অভিযান, বন্‌ধের প্রতি সমর্থন জানাননি। বিজেপি’র কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে মানুষ নিজেদের মতো করে নিজেদের আন্দোলন জারি রেখেছে। নবান্ন অভিযানের দিন যেমন মানুষের প্রতিবাদ বন্ধ হয়নি তেমনি বন্‌ধের দিনও বড় বড় প্রতিবাদী মিছিল হয়েছে বন্‌ধের সঙ্গে সম্পর্কহীনভাবে। ডাক্তাররা, নার্সরা, মেডিক্যা ল রিপ্রেজেন্টেটিভরা আলাদা আলাদা মিছিল করেছে। এই দু’দিনই যে ক’জন আরএসএস-বিজেপি কর্মী সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন তার থেকে বহুগুণ বেশি মানুষ কলকাতা সহ রাজ্যের সর্বত্র নিজেদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন। অর্থাৎ হিংসাত্মক প্ররোচনায় সাধারণ মানুষের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমানো বা কক্ষচ্যুত করা যাবে না। মানুষ দাবি আদায় করেই ছাড়বেন।

Comments :0

Login to leave a comment