চা বাগিচা শ্রমিকদের জমির পাট্টা, ন্যূনতম মজুরি সহ বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে পাহাড়, ডুয়ার্স ও তরাইয়ের চা শ্রমিকরা ফের ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর আন্দোলনের পথে পা বাড়াতে চলেছেন। তারই প্রতীকি আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে শুক্রবার শিলিগুড়িতে মহকুমা শাসকের দপ্তর অভিযান কর্মসূচি হয়েছে। সিআইটিইউ অনুমোদিত চিয়াকামান মজদুর ইউনিয়ন দার্জিলিঙ জেলা কমিটির উদ্যোগে এদিনের অভিযানকে কেন্দ্র করে জেলার চা শ্রমিকদের নিয়ে মহানন্দা সেতুর নীচে থেকে একটি মিছিল মহকুমা শাসকের দপ্তরের উদ্দেশ্যে বের হয়। মিছিলটি হিলকার্ট রোড ধরে এগিয়ে গিয়ে শিলিগুড়ি জংশন পার করে এসডিও অফিসের সামনে পৌঁছায়। চা বাগান শ্রমিকদের ভূমির অধিকার এবং কর্পোরেটের হাতে চা বাগানের জমি হস্তান্তরের প্রতিবাদ জানিয়ে নিজেদের জমির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মিছিল থেকে আওয়াজ উঠেছে। এই প্রতিকী অভিযানকে সফল রূপ দিতে বুধবার বিভিন্ন বাগানের গেটে সভা, লাইন সভা ও ধর্না কর্মসূচি হয়েছে। এসডিও দপ্তরে অভিযান কর্মসূচিতে মোহরগাঁ—গুলমা, নিশ্চিন্তপুর, পুডিংবাড়ি, বেলগাছি, মানঝা, নকশালবাড়ি, মেরিভিউ, খড়িবাড়ি, সহ জেলার ২৫টি বাগানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন বাগানের চা শ্রমিকেরা অংশগ্রহণ করেন। এসডিও দপ্তরের সামনে বাগিচা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রদান, তাদের জমির অধিকার ও পাট্টা সুনিশ্চিত করা, ২০১৫ সাল থেকে চালু এক্সট্রা লিফ প্রাইস বাড়ানো, বাগিচা শ্রমিকদের অবসরের বয়স সীমা বৃদ্ধি সহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। বক্তব্য চলার সময় প্রতিনিধি দল মহকুমা শাসকের দপ্তরের ভেতরে গিয়ে এসডিও’র উদ্দেশ্যে আধিকারিকের হাতে দাবিপত্র তুলে দেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সংগঠনের দার্জিলিঙ জেলা সভাপতি সমন পাঠক ও সম্পাদক গৌতম ঘোষ, সুষমা লাকড়া, প্রতাপ কুজুর, ঝরিয়া ওঁরাও, ললিতা সাউরিয়া ও রেজিনা চামলিঙ। সংগঠনের দার্জিলিঙ জেলা সভাপতি সমন পাঠক ও সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ২০১৫সালে কলকাতার ত্রিপাক্ষিক বৈঠক থেকে সর্বশেষ মজুরি চুক্তি হয়েছিলো। সেই সময় রাজ্যের সরকার পক্ষে শ্রমমন্ত্রী ছয় মাসের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দশ বছর পরেও ন্যূনতম মজুরি কার্যকর হয়নি। এই সময়কালে চা বাগানের যৌথ মঞ্চের নেতৃত্বে ও বিভিন্ন ইউনিয়নের পক্ষে বহু লড়াই আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। সর্ব নিম্ম মজুরিতে কাজ করছেন বাগিচা শ্রমিকেরা। সংগঠিত শিল্পের শ্রমিক হিসোবে চা শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রাপ্য। এক্সট্রা লিফ প্রাইজও এই সময়ে এক টাকাও বাড়ানো হয়নি। গ্লোবার বিজনেস সামিটে মুখ্যমন্ত্রী আচমকাই ঘোষণা করলেন ৩০ শতাংশ জমি পূঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ফলে উৎপাদনমুখী শিল্পের জমি নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।
রাজ্য সরকারের চা বাগানের জমি পূঁজিপতিদের হাতে তুলে দেবার সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধীতা করে নেতৃবৃন্দ বলেন, ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত বাগিচা শ্রমিকরা। বংশ পরম্পরায় বছরের পর বছর ধরে চা শ্রমিকরা বাগানগুলিতে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু আজও চা শ্রমিকদের বসবাসের জমির ওপর শ্রমিকদের কোন অধিকার নেই। লিজহোল ল্যান্ডের মালিকরা যখন তখন শ্রমিকদের উচ্ছেদ করে দিতে পারে। বাগিচা শ্রমিকদের জমির অধিকার দিতে হবে। ৬০ বছর বয়েসে অবসরের কথা ঠিক হলেও আজ পর্যন্ত তা লাগু হয়নি। শ্রমিক বিরোধী শ্রম কোড বাতিল করতে হবে। বাগিচা শ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট দাবি ২০২৫ সালের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি কার্যকর করা সহ অন্যান্য দাবি বিষয়ে সরকার কোন সদুত্তর দিতে না পারলে আগামী দিনে রাস্তার বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে হুঁশিয়ারি দেন নেতৃবৃন্দ।
Comments :0