রাজ্য এবং রাজ্যপাল দ্বন্দ্বে রাজ্যের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। শেষ পর্যন্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে সার্চ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্য সরকার, ইউজিসি এবং রাজ্যপালকে নামের প্রস্তাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তিন পক্ষের সুপারিশ জমা পড়েছে।
রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিতে সচেষ্ট দু’পক্ষই। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, দখল নেওয়ার এই লড়াইয়ে উচ্চশিক্ষার সর্বনাশ হচ্ছে। রাজ্যের সব মানুষকে নিয়ে প্রতিবাদও জানানো হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্ট গত ১৫ সেপ্টেম্বর নির্দেশে জানায় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। কমিটির বিন্যাসও নির্দিষ্ট করে আদালত। বলা হয়, বিজ্ঞানী, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, প্রশাসক, শিক্ষা ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং প্রাক্তন বিচারপতিরা থাকতে পারবেন সার্চ কমিটিতে। অন্য ক্ষেত্রে বিশিষ্টদেরও সার্চ কমিটিতে রাখা যাবে।
রাজ্য সরকার, রাজ্যপাল এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসিকে ৩ থেকে ৫জনের নাম প্রস্তাব করতে বলে। তিনটি তালিকা থেকে সার্চ কমিটির সদস্যদের বেছে নেবে সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার তিন পক্ষ নামের তালিকা জমা দেয়। শুনানি চলছে বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত’র এজলাসে।
প্রসঙ্গত ২৮ জুন কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছিল, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হলেন রাজ্যপাল। সেই পদাধিকার বলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করে কোনও ভুল করেননি। রাজ্য এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।
রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়েছে, রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ না করেই অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন সিভি আনন্দ বোস। যা তিনি করতে পারেন না। রাজ্যপালের নিযুক্ত উপাচার্যদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এই মর্মে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে লক্ষ্য করে অভিযোগ তোলেন রাজ্যপাল। এই তরজা সমনে চলছে।
ইউজিসি’র নিয়ম অনুযায়ী সার্চ কমিটি গড়ে তার সুপারিশের ভিত্তিতেই উপাচার্জ নিয়োগ করার কথা। রাজ্যে সেই বিধি মানা হয়নি। কলকাতা হাইকোর্টে নিয়োগ বাতিলও হয়। পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে সার্চ কমিটি গঠন করেই উপাচার্য নিয়োগ করা হত। বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্রিক কাঠামোও ভেঙে দেয় তৃণমূল সরকার। বামপন্থীরা রাজ্যপালের ভূমিকারও বিরোধী। সেই সঙ্গে বলছেন যে রাজ্য সরকারের অরাজক নীতি রাজভবনকে বাড়তি সুযোগ করে দিচ্ছে হস্তক্ষেপে। এখন উপাচার্য নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টকে।
Comments :0