Justice Abhijit Ganguly

মানিকের লন্ডনের বাড়ির তথ্য দিলেন বিচারক

রাজ্য

Justice Abhijit Ganguly

 

নিয়োগকাণ্ডে ধৃত তৃণমূলী বিধায়ক, অপসারিত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের দু’টি পাসপোর্ট! তদন্তে সম্প্রতি উঠে আসা এই তথ্যই আদালতে জানায় সিবিআই। শুধু তাই নয় লন্ডনে রীতিমতো বাড়িও রয়েছে মানিক ভট্টাচার্যের!


আর তার পরিপ্রেক্ষিতেই এদিন কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় শুনানি চলাকালীনই বলেন মানিক সম্পর্কে অনেক তথ্য তাঁর নিজেরই জানা আছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এরপরেই মন্তব্য করেন, মানিক ভট্টাচার্যের লন্ডনে যাতায়াত ছিল। তিনি কতবার লন্ডনে গিয়েছিলেন। সেখানে কার বাড়ি আছে জানাবো। এমন কী সেখানে তিনি কার বাড়ির পাশে থাকতেন সে খবরও আমার কাছে আছে।
সিবিআই’র উদ্দেশ্যে এই মন্তব্য করার পরে ফের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘লন্ডনে তাঁর বাড়ির পাশে কার বাড়ি জানেন? আমি জানি।’ লন্ডনে মানিক ভট্টাচার্যের বাড়ির পাশে আরেকজনের বাড়ি রয়েছেন তিনি রাজনৈতিক নেতা, সেকথাও এজলাসে জানান বিচারপতি। 

 


নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত মানিক ভট্টাচার্যের দু’টি বৈধ পাসপোর্ট রয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, একাধিকবার লন্ডনে যাতায়াত করেছে। জেরার প্রথম পর্বে যা সম্পূর্ণ চেপে গিয়েছিলেন এই তৃণমূলী বিধায়ক, পর্ষদের অপসারিত সভাপতি। লন্ডনে রীতিমতো বাড়ি কিনেছেন। মমতা ব্যানার্জি সরকারে আসার পর থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদে ছিলেন তিনি। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দীর্ঘ দশ বছরে তাঁর আমলে তিনটি টেটেই দুর্নীতি, বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। এই সময়কালেই লন্ডনে বাড়ি হাঁকিয়েছেন। নিয়োগ দুর্নীতির টাকাই তাতে খেটেছিল বলে মনে করা হচ্ছে।


এদিনই কলকাতা হাইকোর্টে টেট নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই আদালতকে জানায়, মানিক ভট্টাচার্যের কিছু গোপন এসএমএস পাওয়া গেছে। এই এসএমএস তদন্তের কাজে লাগবে। তদন্তকারী সংস্থা আদালতকে জানায় মানিক ভট্টাচার্যের দু’টি বৈধ পাসপোর্ট আছে। সিবিআই’র এই রিপোর্ট পেয়েই বিচারপতি বলেন, আমার কাছে আরও বেশি খবর আছে, উনি লন্ডনে যাতায়াত করতেন। সেখানে কার বাড়ির পাশে তিনি থাকতেন সে খবরও আছে। তদন্তকারী সংস্থাকে আরও গতি বাড়াতে হবে। 


বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘দু’টি বৈধ পাসপোর্ট, কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল। ছিঃ ছিঃ। দিদি একা এত দুর্বৃত্ত সামলাতে পারছেন না। দুর্বৃত্তরা চারপাশে থাকলে কীভাবে কাজ হবে। রাজ্যটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এক জনের দু’টি বৈধ পাসপোর্ট। এটাও কী করে সম্ভব হচ্ছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কৌতুকের সঙ্গে বলেন, ভুপেন হাজারিকার একটি গান আছে, ‘‘হাজার টাকার বাগান খাইলো পাঁচ সিকার ছাগলে। এখানে এটাই হবে।’’


যদিও স্বাধীনতার পরবর্তী বাংলায় সবথেকে বড় শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেপ্তারির পরেও এখন তৃণমূলের নদীয়ার পলাশীপাড়ার বিধায়ক। এখনও নৈতিকতার খাতিরেও দল বা সরকারের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তাঁর বিরুদ্ধে। পার্থ চ্যাটার্জির মতো তিনিও বিধায়ক পদে রয়েছেন।


বিচারপতি মন্তব্য করেন মানিক ভট্টাচার্য এখনও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি, এটা লজ্জার বিষয়। তার মানে জেল থেকে জামিন পেয়ে ফিরে এসে আবার এ সব শুরু করবেন। রাজ্যটা কি এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে?’ এভাবে একের পর এক মন্তব্য, প্রশ্নবানেরর মুখে পড়া গোটা সরকারই।
ইতিমধ্যেই মানিক ভট্টাচার্যকে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার দুর্নীতির ‘কিংপিন’ বলে উল্লেখ করে মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তে অতিরিক্ত চার্জশিট দায়ের করেছে আরেক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। চার্জশিটে মানিক ভট্টাচার্যের পুত্র সৌভিক ভট্টাচার্যের দু’টি সংস্থার নাম রয়েছে। ইডি’র দাবি মানিক পুত্রের ঐ সংস্থায় ঢুকেছে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বিএড, ডিএলএড কলেজ থেকে টাকা ঢুকেছিল ওই দু’টি সংস্থায় যা আসলে সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে মানিক ভট্টাচার্যের ‘তোলাবাজি’ বলেই দাবি করে ইডি। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমকি শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির চেয়ারে বসা মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এই মানিক ভট্টাচার্যের মোট ৬১টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে। তদন্তে দেখা গিয়েছে, টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি করেই ২৯ কোটি টাকার বেশি সরাসরি তুলেছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। ২০১৪ সালের প্রাইমারি টেটে ৩২৫ জন অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীকে টাকার বিনিময়ে পাস করিয়েছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। একেবারে পেশাদার অপরাধী, ষড়যন্ত্রীর মতোই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য কাঁচা টাকার বিনিময়ে তাঁর পদ, প্রভাব কাজে লাগিয়েই এই অবৈধ নিয়োগ চক্র চালাতে।
আর এরই মধ্যে এবার সিবিআই’র তদন্তে উঠেছে এসেছে মানিক ভট্টাচার্যের দু’টি পাসপোর্ট, লন্ডনে বাড়ির তথ্যও। 


এদিকে মঙ্গলবারই আদালত সিবিআই’র কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে মন্তব্য করেছিল, মানিক ভট্টাচার্যকে অনেক আগেই সিবিআই’র গেপ্তার করা উচিত ছিল। উনি অনেক সময় পেয়ে গিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন। সমস্ত তথ্য লোপাট করার সময় এবং সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন। 
এদিন সিবিআই জেলবন্দি পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের গোপন এসএমএস তথ্য পেয়েছেন বলে আদালতকে জানিয়েছে। একই সঙ্গে সিবিআই আদালতের কাছে আবেদন করেছিল, যে অফিসারকে এই তদন্তের কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ হয়েছে তা কিছু দিনের জন্য প্রত্যাহার করা হোক। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আদালতের নির্দেশ প্রত্যাহার করা যাবে না। নতুন অফিসার দু’দিনের মধ্যে নিয়োগ করতে হবে। কাজে ঢিলেমির জন্য মঙ্গলবার সিবিআই’র সিট থেকে সোমনাথ বিশ্বাস নামে অফিসারকে সরিয়ে দেবার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এই অফিসারকেই তদন্তের কাজে রাখার জন্য আবেদন জানিয়েছিল সিবিআই।
 

Comments :0

Login to leave a comment