SANDESHKHALI SHAHJAHAN

শাহজাহানের মেয়ের নামে সংস্থা খুলে কোটি কোটি টাকা পাচার

জেলা

ছবি সংগ্রহ থেকে।

সন্দেশখালির শাহজাহান কেবল ভোট বাক্সে মুনাফা দিতো  তা নয়, শাসক দলের দুই প্রভাবশালী নেতাকে এবং দলীয় তহবিলেও বিপুল অর্থ যোগাতো। কেন্দ্রীয় এজেন্সির হেপাজাত থেকে বাঁচাতে তাই শাহজাহান শেখের মত দুষ্কৃতীয় হয়ে সুপ্রিম কোর্টেও ছুটেছিল রাজ্য। যদিও শেষ পর্যন্ত ইডি হোপাজতেই সন্দেশখালির ত্রাস।
ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে আদালতে যে নথি জমা দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা গেছে সেই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে কয়লা পাচার, রেশন দুর্নীতির মতই মাছের ব্যবসার কারবারেও ভুয়ো সংস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছে। ভুয়ো কাগজপত্র তৈরি করে, ভুয়ো লেনদেন দেখিয়েই কোটি কোটি টাকা অন্যত্র পাচার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে শাহজাহানের মেয়ের নামে  সংস্থা ‘শেখ সাবিনা ফিশারি’কে। যদিও এই সংস্থাটি আসলে শাহজাহানের নিজের। তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্র থেকে জানা গেছে ২০১২-২৩’ পর্যন্ত এই দশ টি আর্থিক বছরে কেবলমাত্র দুটি সংস্থা থেকে শাহজাহানের এই কোম্পানিতে ঢুকেছিল ১৩৭কোটি টাকা । তার মধ্যে সাই ম্যাগনাম এক্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে ১০৪কোটি টাকা। বাকী ৩৩কোটি টাকা ঢুকেছিল ‘অনুপ কুমার সোম’ নামক একটি সংস্থার মাধ্যমে। শাহজাহান শেখের বাহিনী সন্দেশখালিতে কয়েকশো বিঘা ভেড়ির জমি দখল করেছিল। টাকার বিনিময়ে বেআইনী ভাবে আদিবাসীদের জমি হস্তান্তর করা হত। লিজের টাকাও পেতেন না জমির মালিকার। ইতিমধ্যে ইডি আদালতকে জানিয়েছে ৩১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার হিসাব এখনও পর্যন্ত পাওয়া গেছে। বিদেশে এই টাকা পাচার হয়েছে। শাহজাহান যে ভেড়ির ব্যবসা করত, তা তার নিজের নামে ছিল না। তার কন্যা সেখ সাবিনার নামে এই ব্যবসা চলত। বিশেষ করে কাঁচা চিংড়ির ব্যবসায় কালো টাকা খাটানো হতো।
আদালতে জমা দেওয়া নথিতে ইডি’র দাবি সাই ম্যাগনাম এক্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের বোর্ড অফ ডিরেক্টরসের অন্যতম সদস অরুন চক্রবর্তী ইতিমধ্যে জেরায় তদন্তকারী সংস্থার কাছে জানিয়েছেন নগদ টাকা দেওয়া হয়েছিল সাবিনা ফিশারি নামক শাহজাহানের সংস্থাকে। শাহজাহানের নির্দেশেই অরুপ কুমার সোমের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। বিনিময়ে চিংড়ি মাছের ব্যবসার ভুয়ো বিল তৈরি করা হত। শাহজাহান নিজে অফিসে সেই সেই নির্দেশ দিয়েছিল। ভুয়ো বিল দেখিয়ে টাকার লেনদেন করা হত। নগদ টাকা শাহজাহান দিয়ে যেতে। তার বিনিময়ে ভুয়ো ব্যবসার কাগজ তৈরি করে সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ফেলা হত। একেবারে সংগঠিত ভাবে মানি লন্ডারিং করা হত।শুধু তাই নয় গোটা সন্দেশখালি জুড়ে ফতোয়া ছিল, শাহজাহানের মেয়ের সংস্থা বাদ দিয়ে কোথাও চিংড়ি বিক্রী করা যাবেন। তাঁর মেয়ের সংস্থার কাছেই সবাইকে আসতে হবে।ভয় দেখিয়ে স্থানীয় মাছ বিক্রেতা এবং মাছ চাষীদের থেকে ৫০ শতাংশ চিংড়ি জোগাড় করত শাহজাহানের ওই সংস্থা। ১০-১৫ শতাংশ চিংড়ি আসত তাঁর নিজের মাছের ভেড়ি থেকে আর বাকি ৩৫-৪০ শতাংশ চিংড়ি আসত গ্রামবাসীদের থেকে জোর করে দখল নেওয়া ভেড়ি থেকে।
এই লেনদেনের বিপুল পরিমান টাকার একটা অংশ আবার যেত বাংলাদেশে হুন্ডির মাধ্যমে। শুধু তাই রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ইতিমধ্যেই ইডি’র হাতে ধৃত বনগাঁর তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্যের  ফরেক্স কোম্পানির মাধ্যমেও সেই টাকা পাচার হত। তদন্তকারী সংস্থার একটর সূত্রের দাবি গোটা এই নেটওয়ার্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিল ধৃত প্রাক্তন খাদ্য মন্রীকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
সন্দেশখালি, বসিরহাটের মানুষজন জানে শাহজাহানের এই ক্ষমতার উৎস কী! গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে অভিষেক ব্যানার্জির নবজোয়ার যাত্রা যখন বসিরহাটে এসেছিল তখন সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহতোকে নিয়ে ভাইপো সাংসদের সঙ্গে আলাদা ভাবে বৈঠক করতেও দেখা যায় শেখ শাহাজাহানকে। শাহজাহানে ভেট ফি মাসে পৌছানো দক্ষিন কলকাতার ঠিকানাতেও। কেবল মাছের কারবারের দুর্নীতিতেই একশো কোটি বেশি টাকার হদিশ মিলেছে। সন্দেশখালি মামলায় শাহজাহানের বিরুদ্ধে ইডি দুটি ইসিআইআর দাখিল করেছে। একটি রেশন বণ্টন দুর্নীতি নিয়ে আর একটি বেআইনি জমি দখল সংক্রান্ত। এখনও বাকী রেশন দুর্নীতির তদন্ত। সুন্দরবনের বিস্তীর্ন প্রান্তে শাসক তৃণমূল কী পরিমান লুটের রাজত্ব তৈরি করেছিল তা এতেই স্পষ্ট।  
 

Comments :0

Login to leave a comment