Wheat crisis

চাল নেই গুদামে, সঙ্কটে পড়তে চলেছে রাজ্যের রেশন

রাজ্য

মজুত ভাঁড়ারে টান, সঙ্কটের মুখে পড়তে চলেছে রাজ্যের রেশন।
খাদ্য দপ্তর সূত্রের খবর, রাজ্যের মজুতে এখন যে পরিমাণ চাল আছে তাতে কোনওভাবে চলতি ডিসেম্বর মাস চলে যাবে। মজুত চালের ভাণ্ডার এত কম যে জানুয়ারি মাস থেকেই রেশনে চালের সরবরাহ মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় খাদ্য দপ্তরের ভরসা বলতে চলতি মরশুমে ধান কেনা। ধান ঠিকমতো সংগ্রহ করতে না পারলে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে রাজ্যের রেশন ব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার বরাদ্দ চাল নভেম্বর মাসে গ্রাহকদের কাছে দেওয়া হয়নি। সঙ্কট মোকাবিলাতেই ওই বরাদ্দ ডিসেম্বর মাসে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। 
রাজ্য ও কেন্দ্র দুই রেশন কার্ডের গ্রাহকদের জন্য রাজ্যের ভাঁড়ারে পড়ে আছে ৩ লক্ষ ১৭ হাজার টন চাল। মাসে রেশন দিতে গেলে রাজ্য ও জাতীয় সুরক্ষা যোজনার রেশন কার্ডের গ্রাহকদের দরকার ৩ লক্ষ ১৮ হাজার টন চাল। মজুত ভাণ্ডারের আকালে আগামীদিনে সঙ্কটে পড়তে চলেছে রাজ্যের রেশন ব্যবস্থা।   


পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক জায়গায় আছে যে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনার রেশন বণ্টন করার চাল পর্যন্ত সরকারের ভাঁড়ারে নেই। খাদ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফি মাসে রাজ্যে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় (এনএফএসএ) প্রায় ৬ কোটি গ্রাহককে রেশন দিতে হয়। মাসে এরজন্য প্রয়োজন হয় ১ কোটি ৯৮ লক্ষ টন চাল। কিন্তু রাজ্যের ভাঁড়ারে চালের মজুত তার থেকেও কম। খাদ্য দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘সেন্ট্রাল পুল’এ মজুত চালের পরিমাণ এখন ১লক্ষ ৬২হাজার মেট্রিক টন।’’ চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে হিসাবে মজুত ভাঁড়ারের সঙ্গে চাহিদার ফারাক চিন্তায় ফেলেছে খাদ্য দপ্তরকে। 
একই অবস্থা রাজ্যের নিজস্ব রেশন বণ্টনেও। আরকেএসওয়াই ১, আরকেএসওয়াই ২ এই দুই রেশন কার্ড ছাড়াও জঙ্গলমহল, সিঙ্গুরের জমিদাতা ও আয়লায় বিধ্বস্ত পরিবারের জন্য স্পেশাল প্যাকেজ আছে রাজ্যের। সেই রাজ্যের ‘স্টেট পুল’এ মজুত চালের পরিমাণ কত?


খাদ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, স্টেট পুল’এ এই মুহূর্তে মজুত চালের পরিমাণ দেড় লক্ষ টন। কিন্তু রাজ্যের নিজস্ব রেশন দিতে মাসে প্রায়োজন হচ্ছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টন চাল। ফলে রাজ্যের রেশন চালাতেও সঙ্কটের মুখে খাদ্য দপ্তর। রেশনের এই সঙ্কটের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারেরও দায় আছে। ইউক্রেনের যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে রেশনে গম বরাদ্দ বন্ধ করে দেয় কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক। গমের বিকল্প হিসাবে রাজ্যগুলিকে চাল দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ফলে সেই চাল দিতে গিয়ে রাজ্যের ভাঁড়ারে টান পড়ছে বলে জানাচ্ছেন খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরাও। একইসঙ্গে এফসিআই’র কাছ থেকে পর্যাপ্ত চাল না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 
রাজ্যের প্রতিটি জেলার খাদ্য দপ্তরে গুদামে চালের মজুত ভাণ্ডারে এই পরিস্থিতিতে রীতিমতো টান পড়েছে। স্টেট পুল’এ রাজ্যের রেশন চালাতে গুদামে সাধারণ চাল ৫৭ হাজার টন চাল পড়ে আছে। ফর্টিফায়েড চাল আছে  মাত্র ১৬ হাজার ৩৫০ টন চাল। এরসঙ্গে গম না মেলায় কেনা চালের পরিমাণ স্টেট পুল’এ পড়ে আছে ৮০ হাজার টন। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনার জন্যও এএওয়াই, এসপিএইচএইচ, পিএইচএইচ রেশন কার্ড গ্রাহকদের জন্য সেন্ট্রাল পুল’এ গুদামজাত হয়ে আছে ১ লক্ষ ১৫ হাজার টন সাধারণ চাল, ফর্টিফায়েড চাল ৪৬ হাজার ৯৬৮ টন। 


সঙ্কটকে এড়াতে রাজ্যের হাতে সুযোগ বলতে চলতি মরশুমে ধান সংগ্রহই। কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার সঙ্গে সেই ধানকে রাইসমিলে পাঠিয়ে চাল তৈরি করে গুদামে আনতে হবে। কার্যত ধান সংগ্রহের ওপরই ভরসা খাদ্য দপ্তরের। গত নভেম্বর মাস থেকেই ধান সংগ্রহে নেমে পড়েছে খাদ্য দপ্তর। খাদ্য দপ্তরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে। কিন্তু সঙ্কট যেভাবে ঘাড়ে এসে পড়েছে তাতে রাইসমিল মালিকদের এখনই চাল গোডাউনে মজুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ, সংগ্রহ না হলেও চাল মজুত করতে হবে রাজ্যের গুদামে। ধান কেনা নিয়ে প্রকৃত কৃষকদের বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ এরাজ্যে নতুন কিছু নয়। সরকারি শিবিরে কৃষকদের পরিবর্তে ফড়েদের ধান বিক্রিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার চল নিয়ে কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন।  চলতি সঙ্কটের জন্য কৃষকদের সরকারের কাছে ধান বিক্রি করা আরও সমস্যার মুখে পড়তে চলেছে।


ধান কিনে চাল তৈরি করে সঙ্কট মোকাবিলার মতোই দ্বিতীয় একটি পথ খোলা রেখেছে রাজ্যের খাদ্য দপ্তর। সেই পথ ধরে রাজ্যে হুহু করে বাতিল করা হচ্ছে রেশন কার্ডকে। বিধানসভার গত অধিবেশনেই খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রাজ্যে ৬০ লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। রেশনে খাদ্যসামগ্রী কম থাকার জন্য রেশন কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার সংখ্যা বাড়ছে। একবার রেশন কার্ড নিষ্ক্রিয় হলে তিন মাসের জন্য কার্ড ব্লক হয়ে যাবে। এমনকি রেশনে যে পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী পাওয়ার কথা সেখানেও কারচুপি করা হচ্ছে। ফলে মজুত ভাঁড়ারে আকালে শেষ পর্যন্ত রেশন থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করেছে রাজ্যবাসী। 
পয়েন্টস—
ভাঁড়ারে মজুত ৩ লক্ষ ১৭ হাজার টন চাল
মাসে দরকার ৩ লক্ষ ১৮ হাজার টন
জানুয়ারি মাস থেকে সঙ্কটে রেশনের বরাদ্দ
রাজ্য তাকিয়ে কৃষকের থেকে ধান কেনায়
বাড়ছে রেশন কার্ড নিষ্ক্রিয় করা
 

Comments :0

Login to leave a comment