লোকসভার সুরক্ষা বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনায় অমিত শাহের বিবৃতি দাবি করে সাসপেন্ড হলেন মোট ৯০ জনের বেশি সাংসদ। তার মধ্যে ৮০ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে সোমবার। গত সপ্তাহে আরও ১৪ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।
সোমবার যাঁদের সাসপেন্ড করা হয় তার মধ্যে ৩৩ সদস্য লোকসভার এবং ৪৫ সদস্য রাজ্যসভার। এঁদের মধ্যে ৬৪ জনকে শীতকালীন অধিবেশনের বাকি দিনগুলির জন্যও সাসপেন্ড করা হয়েছে। ২২ ডিসেম্বর লোকসভার শীতকালীন অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা। অতীতে একসঙ্গে এত বড় সংখ্যায় সাংসদদের সাসপেন্ড করার ঘটনা বিরল। সংসদ বিষয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী সোমবার প্রস্তাব এনে সাংসদদের সাসপেন্ড করেন।
রাজ্যসভার কক্ষনেতা এবং বিজেপি সরকারের মন্ত্রী পীযুষ গোয়েলের যুক্তি, লোকসভার অধ্যক্ষ এবং রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে অপমান করার জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের তালিকায় রয়েছেন কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী, কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ, ডিএমকে সাংসদ এ রাজা, দয়ানিধি মারান, টিআর বালু, রাজ্যসভার জয়রাম রমেশ, কেসি বেণুগোপাল প্রমুখ রয়েছেন। মুখরক্ষার জন্য বিজেপি নিজের সাংসদ প্রতাপ সিমহাকেও সাসপেন্ড করেছে। সিমহার দেওয়া পাশ নিয়েই দুই বিক্ষোভকারী গত সপ্তাহে লোকসভায় ঢুকে পড়ে হলুদ গ্যাসের ক্যানেস্তার ফাটায়।
১৩ ডিসেম্বর সংসদে বিশৃঙ্খলা ঘটায় ২ ব্যক্তি। পুলিশি তদন্তে তাঁদের নাম জানা যায় সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি। লোকসভার দর্শক গ্যালারি থেকে লাফিয়ে অধিবেশন কক্ষে নামেন তাঁরা। তারপর হলুদ রঙের গ্যাস বোমা ফাটায় ওই দুই বিক্ষোভকারী। তাঁরা মণিপুর ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাকে আক্রমণ করেন। একইসঙ্গে মণিপুরের মহিলাদের হয়েও ন্যায়বিচার চান তাঁরা। ‘জয় ভীম’ এবং ‘তানাশাহী নহি চালেগা’ বা স্বৈরাচার চলবে না’র মত স্লোগানও তাঁদের দিতে শোনা যায়।
সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র বিবৃতি দাবি করেন বিরোধীরা। একাধিক বিজেপি ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যমে এই ঘটনা সম্পর্কে বক্তব্য রাখলেও সংসদে এই নিয়ে মুখ খোলেননি অমিত শাহ। সোমবার তারই প্রতিবাদ করেন বিরোধীরা। সেই ‘অপরাধে’ একঝাঁক বিরোধী মুখকে বরখাস্ত করলেন লোকসভার অধ্যক্ষ।
সংসদে বিশৃঙ্খলা ঘটানো ২ ব্যক্তি মাইসোরের বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহা’র সুপারিশ ব্যবহার করে সংসদে ঢুকেছিলেন। এই প্রেক্ষিতে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘ যেই বিজেপি সংসদের সুপারিশ ব্যবহার করে এই ঘটনা ঘটল, তাঁকে এখনও সাসপেন্ড করা হলনা। কিন্তু বিরোধীরা এই বিষয়ে সরকারের বিবৃতি দাবি করতেই তাঁদের সাসপেন্ড করা হল।’’
এর আগের দফায় ১৩জন সাংসদ সাসপেন্ড হয়েছিলেন সরকারের বিবৃতি দাবি করে। প্রিভিলেজ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে সাসপেন্ড হন আরও ৩ বিরোধী সাংসদ। সব মিলিয়ে শীতকালীন অধিবেশনে মোট ৪৬জন বিরোধী সদস্যকে সাসপেন্ড করা হল।
এই প্রসঙ্গে অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, ‘‘স্বৈরাচারের শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে এই সরকার। বিজেপি নিজেদের পার্টি অফিসের মত করে সংসদ পরিচালনা করতে চায়। আমরা সেটা হতে দেবনা। আমরা আলোচনা চাই। ১৩ ডিসেম্বর কি ঘটেছে গোটা দেশ দেখেছে। সরকার এই বিষয়ে মিডিয়ায় বক্তব্য রাখলেও সংসদে চুপ। ওঁরা সংসদে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে।’’
গৌরব গগৈ বলেছেন, ‘‘ ১৩ ডিসেম্বরের নিরাপত্তা বিঘ্নের দায় নিতে ভয় পাচ্ছেন অমিত শাহ। তাই গায়ের জোরে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতে চাইছে বিজেপি।’’
এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে লিখেছেন, ‘‘ প্রধানমন্ত্রী ১৩ ডিসেম্বরের ঘটনা নিয়ে একটি সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই ঘটনা নিয়ে একটি টিভি চ্যানেলে বক্তব্য রেখেছেন। অপরদিকে যখন সংসদে অধিবেশন চলছে, তখন দু’জনেই চুপ সংসদে। আমরা চাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই বিষয়ে সংসদে বক্তব্য রাখুন। সেটা তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’’
Comments :0