চিন্ময় কর- চন্দ্রকোনা
তৃণমূলের শাসনে গত ১৪ বছরে রাজ্যে একটাও কারখানা হয়নি। পরিবর্তে বহু কলকারখান বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১৪ বছরে পশ্চিমবঙ্গে একটাও কারখানা হয়নি কিন্তু ‘ওয়াইন শপ’-এ তাক লাগিয়েছে মমতা ব্যানার্জির শাসনে। আর মদ খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গ্রামীণ মেলায় বিষমদ। সেখান থেকে নিয়ে আসা মদ খেয়ে গড়বেতায় মৃত্যু দুই ব্যক্তির। শ্রাদ্ধ বাড়ির অনুষ্ঠানে আত্মীয়র বাড়িতে এসে ছিলেন দুই জন। তারপর আগের দিন রাতে গ্রামের মেলায় গিয়ে একটি মদের বোতল নিয়ে আসে। সেই বোতল নিয়ে সকালে দু'জনে মিলে খেতে বসেছিলেন। এক চুমুকেই গোটা শরীরে কাঁপুনি এসে প্রায় অচৈতন্য হয়ে যান দু'জনই। দ্রুত পরিবারের লোকজন তাঁদের নিয়ে যান স্থানীয় হাসপাতালে। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই গাড়িতে মৃত্যু হয় একজনের। চিকিৎসা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় অপরজনের। বুধবার দুপুরের এই ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা থানার চন্দ্রকোনা রোড পুলিশ বীট হাউসের অধীন উড়াসাই গ্রামে। মৃত দু'জনের নাম গনেশ রুইদাস ওরফে বৈদ্যনাথ(৫৬) এবং সন্তু রুইদাস(৬২)। ময়নাতদন্তের জন্য দুজনের দেহ পাঠানো হয় ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর বলতে পারব, ঠিক কি কারণে মৃত্যু।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী জানিয়েছেন, ‘‘আপনাদের মাধ্যমেই শুনলাম। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
জানা গেছে ,উড়াসাই গ্রামের বাসিন্দা লক্ষন রুইদাসের বাড়িতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল। সেই উপলক্ষে আমন্ত্রিত ছিলেন আত্মীয় পরিজনেরা। তেমনই কেশপুর থানার মুগবাসন এলাকার বাসিন্দা সন্তু রুইদাস এবং গড়বেতার বাসিন্দা গনেশ রুইদাস এসেছিলেন উড়াসাই গ্রামে লক্ষণ রুইদাসের বাড়িতে। সন্তু এবং গনেশ সম্পর্কে বিয়াই হয়। শ্রাদ্ধানুষ্টান শেষে বৃহস্পতিবার তাঁদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। আগের রাতে গ্রামের মেলা থেকে কিনে আনা মদ সাত সকালে এক চুমু করে দেওয়ার পরই একই সঙ্গে দুই বিয়াই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের নিয়ে আসা হয় চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসক সন্তু রুইদাসকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অপরদিকে গণেশ রুইদাসের চিকিৎসা শুরু হয়, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনিও মারা যান।
মদ লাগবে? দোকান দরকার কাছাকাছি? চিন্তা নেই। তৃণমূলের সরকার আছে। ৩ কিমি পথকষ্ট সহ্য করলেই রাজ্যের গ্রামবাসীরা যাতে একটি মদের দোকান পেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করে ফেলছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। মানুষ মরলে ক্ষতি নই। রাজস্ব বাড়লেই হবে। অথচ যখন মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী হননি, যখন রাজ্যে বামফ্রন্টের সরকার, তখন লাগাতার তিনি এবং তাঁর দলের নেতাদের প্রচার ছিল— পাড়ায় পাড়ায় মদের দোকান ছাড়া বামফ্রন্ট কিছুই করেনি। ২০১১’র বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে তণমূলের যে নির্বাচনী ইশ্তেহার প্রকাশ করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি, সেই ইশ্তেহারের ৯-র পাতায় বামফ্রন্টের তীব্র সমালোচনা করে কী লেখা হয়েছিল? ‘‘শিল্পের থেকে আজ শুঁড়িখানা অনেক বেশি। শিল্প মানে শুধু মদের বন্যা।’’ গত ১৪ বছরে অনেক মদের দোকান রাজ্যে খোলার অনুমতি দিয়েছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। রাজ্যে গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ১৮০০ কোটি টাকা আয় হয়েছে মদ বিক্রি বাবদ। ২০২৫-এ সেই রেকর্ডও ভাঙতে চায় মমতা ব্যানার্জির সরকার। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যে সরকার অনুমোদিত মদের দোকান আছে ৭৭৪৬টি। তবু রাজ্যে আরও মদের দোকান রাজ্যে দরকার বলে সরকার মনে করছে। পঞ্চায়েত আছে ৩৩৩৯টি। প্রতিটি পঞ্চায়েতে অন্তত একটি মদের দোকান, লক্ষ্য নির্দিষ্ট করেছে রাজ্য সরকারের। রাজ্যের আবগারি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, বছর শেষের ওই আটটি দিনে রাজ্যে ৬৫৪ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। ২০২৪-এ সারা বছরে রাজ্যে মদ বিক্রি থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ২১,০০০ কোটি টাকার। বাজেটে এই ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছিল ২১,৮৪৬ কোটি টাকা। আর্থিক বছরের তিন মাসে সেই লক্ষ্যমাত্রা অনায়াসে পেরনো যাবে বলেই আবাগারি দপ্তরের দৃঢ় বিশ্বাস।
Comments :0