Adenovirus Infection

ভয়াবহ হচ্ছে অ্যাডিনো, মহানগরেই ২৪ ঘণ্টায় মৃত আরও ৩

রাজ্য

Adenovirus Infection

 


ক্রমশ এবার মহামারীর আকার নিতে চলেছে অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণ। দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। আইসিইউ, এনআইসিইউ, পিআইসিইউগুলি ভর্তি হয়ে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে কলকাতায়। বাড়ছে রেফার কেস, হাসপাতালের বেহাল পরিকাঠামোর দিকে আঙুল তুলছেন ভুক্তভুগী পরিবারগুলি। 
বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত ২ মাসে অন্তত ১৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে যাদের নমুনায় অ্যাডিনো ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে। জ্বর সর্দি কাশি শ্বাসকষ্ট থেকে নিউমোনিয়ায় পরিণত হচ্ছে রোগ। শিশুদের মধ্যেই সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি, মিলছে না এমারজেন্সি বেড। অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণে জেরবার বয়স্ক থেকে কোমর্বিডিটিযুক্ত মানুষও। রাজ্য জুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ।  হাসপাতালের পরিকাঠামো বাড়ানোর বদলে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েই ক্ষান্ত স্বাস্থ্য দপ্তর।

পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে রাজ্যে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে কলকাতায়। শনিবার রাতে বিসি রায় হাসপাতালে রাতে মৃত্যু হয়েছে ৯ মাসের এক শিশু কন্যার। হাওড়া উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দা একরত্তি জয়শ্রী রায়কে প্রায় ২৪ দিন আগে প্রথমবার এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হতে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। এরপরে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি আবার তার জ্বর হওয়ায় বিসি রায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। কিন্তু ভর্তি করা হয়নি। বাড়ি যাওয়ার পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ফের জ্বর ও ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে ভীষণরকম অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুটি। দেখা দেয় জীবন মরণ সমস্যার। কিন্তু আইসিইউতে বেড না থাকায় তার ভালোভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি বলে জানা যায়। শনিবার রাতে মৃত্যু হয় শিশুটির। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সদ্যোজাত থেকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

অন্যদিকে রবিবার সকালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয়েছে কল্যাণীর বাসিন্দা দেড় বছরের এক শিশুর। কয়েক দিন আগে তার জ্বর সর্দি কাশি সহ নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়।  তাকে ভর্তি করা হয় কল্যাণীর এক হাসপাতালে। সেখান থেকে রেফার করা হয় কলকাতায়। প্রথমে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আইসিইউ খালি না থাকায় আরও দুটি হাসপাতাল ঘুরে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু বাঁচানো যায়নি তাকে, রবিবার মৃত্যু হয় শিশুটির। এই মৃত্যুর কারণ অ্যাডিনো ভাইরাস কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে বলে জানানো হয়েছে হাসপাতালে তরফে। এছাড়া এদিনই অর্থাৎ বিসি রায় শিশু হাসপাতালে শুভজিৎ মণ্ডল নামে ৮ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বাদুড়িয়ার বাসিন্দা এই শিশুটিকে ভর্তি করা হয়েছিল ২০ ফেব্রুয়ারি। যদিও মৃত্যুর কারণ হিসাবে লেখা হয়েছে সিভিয়ার নিউমোনিয়া তবে সেই নিউমোনিয়ার কারণ অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণের কারণে কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে।

কোভিডের মতোই প্রথমে সর্দি কাশি জ্বর এবং তারপর তা থেকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা তৈরি হচ্ছে বিশেষ করে শিশুদের শরীরে, সেখান থেকে নিউমোনিয়া। জিনোম সিকোয়েনস টেস্ট  এই ধরনের উপসর্গে আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে মোটামুটিভাবে ৩২ জনের শরীরে মিলছে অ্যাডিনোভাইরাসের উপস্থিতি। সময় লাগে জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে ভাইরাসের পরিচয় জানতে। তাই কোনও মৃত্যু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনেক সময়ে বলা সম্ভব হয় না যে তা অ্যাডিনো ভাইরাস কিনা। তবে চিকিৎসকদের মতে কারণ যাই হোক, সঠিক সময়ে চিকিৎসা দরকার। কারণ কাশি এবং শ্বাসকষ্টের কারণে শিশুদের ফুসফুস দ্রুত কার্যকারিতা হারাচ্ছে। অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আইসিইউ দরকার হয়। কিন্তু হাসপাতালগুলির বিশেষত শিশু হাসপাতালগুলিতে খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে আইসিইউ, এনআইসিইউ বা পিআইসিইউগুলি ভর্তি। অভাব রয়েছে অন্যান্য পরিকাঠামোর। ফলে চিকিৎসকদের চিকিৎসা করতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

এরই ফলে ক্ষোভ বাড়ছে ভুক্তভুগী পরিবারগুলির। স্বাস্থ্যভবন থেকে নির্দেশিকার পর নির্দেশিকা জারি হচ্ছে কিন্তু হাসপাতালের পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি হচ্ছে না— বলছেন চিকিৎসক মহলই। প্রায় ২ মাস আগেই স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বলা হয়েছিল অ্যাডিনো ভাইরাসের মোকাবিলায় শিশু হাসপাতাল সহ সমস্ত হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে সব রকম সুবিধাযুক্ত ও সরঞ্জামযুক্ত বেড এবং অক্সিজেন প্রস্তুত রাখার জন্য। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার চূড়ান্ত অভাব রয়েছে বলে বক্তব্য চিকিৎসকদেরই।

অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে ঘরে। স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠানো নিয়ে চিন্তায় অভিভাবকরা। করোনার মতোই মাস্কের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। জ্বর সর্দি কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। চিকিৎসকদের বক্তব্য, রাস্তাঘাটে এমনকি বাড়িতেও হাঁচি কাশির সময়ে বড়দের সতর্ক থাকতে হবে, মুখে কাপড় চাপা দিতে হবে যাতে ছোটদের বা শিশুদের মধ্যে ড্রপলেট না ছড়াতে পারে।

Comments :0

Login to leave a comment