BISHAD SAMMILANI

কার্নিভালের উচ্ছ্বাসকে প্রশ্ন ছুঁড়ল হকের দাবির ‘বিষাদ সম্মিলনী’

রাজ্য কলকাতা

শুক্রবার রেড রোডের কার্নিভালের পালটা শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত ‘বিষাদ সম্মিলনী’র মঞ্চে পলাশ দাশ, সৃজন ভট্টাচার্য, ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, কলতান দাশগুপ্ত প্রমুখ।

রাজ্যটাকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। শাসক দলের নেতা, মন্ত্রীরা দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেই মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে তাঁদের হয়ে সাফাই দিতে। সরকারি টাকার লুটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর সরাসরি ভুক্তভোগী হচ্ছেন চাকরিপ্রার্থী থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারী, শিক্ষকরা। সরকারি কোষাগারের টাকা দেদার খরচ হচ্ছে উৎসব, কার্নিভালে। অথচ যাঁরা হকের দাবিতে লড়াই করছেন, অবস্থান করছেন, তাঁদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। শুক্রবার রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কলকাতার রেড রোডে আয়োজিত পুজো কার্নিভালের পালটা কর্মসূচিতে শহীদ মিনারের সামনে ‘বিষাদ সম্মিলনী’ মঞ্চে গিয়ে একথা বলেন গণআন্দোলনের নেতা পলাশ দাশ। তিনি বলেছেন, চাকরিপ্রার্থী ও সরকারি কর্মচারীরা হকের দাবি নিয়ে যে লড়াই করছেন, তার সঙ্গে বামপন্থীরা রয়েছে। এখানেই না থেমে দুর্নীতির জালে রাজ্যটাকে ঘিরে ফেলার চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই ও সংগ্রামের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। 
কলকাতায় পুজো কার্নিভালের ১০০ মিটার দূরে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র এদিন দেখা গেল। একদিকে যখন কার্নিভালে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সুর, তখনই শহীদ মিনার চত্বরে বিষাদের আবহ। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বঞ্চনার শিকার সরকারি কর্মচারী, চাকরিপ্রার্থীরা তৃণমূল সরকারের নির্লজ্জতার বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিলেন এদিন। শহীদ মিনারের সামনে ‘বিষাদ সম্মিলনী’র আয়োজন করে ডিএ’র দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের যৌথ মঞ্চ। শুধু রাজ্য সরকারি কর্মীরাই নন, কর্মসূচিতে শামিল হন আন্দোলনরত গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি চাকরিপ্রার্থীরাও। শহীদ মিনার চত্বরে প্রতীকী শবদেহ নিয়ে তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি চলে এদিন। প্রতীকী শবদেহের সামনের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘১২ বছরে শিক্ষিত বেকারের স্বপ্নের অপমৃত্যু।’’
এই মঞ্চে এদিন পলাশ দাশ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এসএফআই’র রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য, বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম নেতা ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, যুবনেতা কলতান দাশগুপ্ত। সৃজন ভট্টাচার্য বলেছেন, “এটা নির্মমতার কার্নিভাল, নিষ্ঠুরতার কার্নিভাল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি সবার মুখ্যমন্ত্রী নন? এই বিষাদ সম্মিলনী করতে হচ্ছে কেন? গত তিনটে উৎসব কেটে গিয়েছে। তবুও সরকারি কর্মচারীদের নায্য ডিএ হয়নি, বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আগামী বছর যেন আমাদের এই বিষাদ সম্মিলনী করতে না হয়।’’ ইন্দ্রজিৎ ঘোষ বলেছেন, দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর দাদা দেবপ্রিয় মল্লিকের নামেও চাকরিতে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছেন। দেবপ্রিয় মল্লিক যখন পিএসসি’র চেয়ারম্যান ছিলেন, সেই সময়ে চাকরির নামে দুর্নীতির বহু অভিযোগ সামনে এসেছে।
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ এই বিষাদ সম্মিলনী সম্পর্কে জানিয়েছেন, ‘‘বাঙালি তথা ভারতীয়দের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ উৎসব। আমাদের জীবনে এর বিশেষ তাৎপর্য আছে। কিন্তু সেই উৎসব পালন যখন সরকারি তদারকিতে হয় এবং যখন রাজ্যের প্রায় সমস্ত স্তরের মানুষ বঞ্চিতদের তালিকায় থাকেন, তখন এই উৎসবকে প্রহসন বলেই মনে হয়। তার প্রতিবাদ না হলে সরকারের এই কাজকেই মান্যতা দেওয়া হয়। তাই আজ শিক্ষক, কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষক, কর্মরত শিক্ষক, চাকরিপ্রার্থী থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বঞ্চিতদের এককাট্টা করে প্রতিবাদ কর্মসূচির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ এসেছেন এই লড়াইয়ে পাশে থাকার বার্তা দিতে।’’  
 

Comments :0

Login to leave a comment