Bjp MP

অশ্লীল ঘৃণা ভাষণের সাফাই দিচ্ছে বিজেপি, মোদী নীরব

জাতীয়

 সংসদে ঘৃণা ভাষণ দিয়ে বেকায়দায় পড়ে বিএসপি সাংসদ দানিশ আলিকেই অভিযুক্ত সাজানোর নাটক শুরু করেছে বিজেপি। মোদী বাহিনীর অন্যতম সদস্য সাংসদ নিশিকান্ত দুবে শনিবার হাওয়া গরম করেছেন। তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে দানিশ আলি এতটাই নিচ শব্দ ব্যবহার করেছেন, এমনভাবে প্ররোচনা দিয়েছেন, যে কোনও দেশভক্ত জনসাধারণের প্রতিনিধি সেই ফাঁদে পা দিয়ে মেজাজ হারিয়ে ফেলবেন। বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরির ধৈর্যচ্যূতি করতেই এসব করেছেন বিএসপি সাংসদ। ফলে দানিশ আলির বিরুদ্ধে লোকসভার নিয়মাবলী মেনে উপযুক্ত তদন্ত করতে হবে বলে লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লাকে চিঠি পাঠিয়েছেন দুবে। বিধুরি যে অত্যন্ত খারাপ কথা বলেছেন, তা বলতে বাধ্য হলেও বিএসপি সাংসদের বিরুদ্ধে তদন্তের উপরই বারবার জোর দিয়েছেন দুবে। পাশাপাশি চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস এবং ডিএমকে’ও অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিশ্বাস নিয়ে মন্তব্য করেছে। দু’দিন ধরে বিধুরির মন্তব্য নিয়ে উথালপাতাল হলেও মোদী নিজস্ব ঢঙেই নীরব আছেন। সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘‘মোদীর নীরবতাই কিছু বলার থেকে এই প্রসঙ্গে তাঁর অবস্থানকে স্পষ্ট করেছে।’’ এদিন বিধুরিকে সম্পূর্ণভাবে সাসপেন্ড করার জোরালো দাবি তুলেছেন বিরোধীরা। 
দু’দিন কেটে গেলেও এদিন রাত পর্যন্ত দক্ষিণ দিল্লির বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রবল সমালোচনার মুখে শুক্রবার শুধু শোকজ নোটিস পাঠিয়েছে লোক দেখাতে। উলটে দানিশ আলিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন মোদী-শাহ। নিশিকান্ত দুবের কথা থেকে পরোক্ষে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, মোদীর বিরুদ্ধে কেউ মন্তব্য করলেই তাঁকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করা হবে। ওইদিন চন্দ্রযান ৩’র সাফল্য নিয়ে আলোচনার সময় দানিশ আলিকে উদ্দেশ্য করে নোংরা ভাষায় যা খুশি বলে যান বিধুরি। দানিশ আলিকে তাঁর ধর্মের জন্যই ‘কাটুয়া’, ‘মোল্লা উগ্রবাদী’, ‘আতঙ্কবাদী’ বলে চেঁচিয়ে ওঠেন বিজেপি সাংসদ। সংসদের নতুন অট্টালিকা বিজেপি’র আমদানি করা নতুন ‘সংস্কৃতি’র সাক্ষী থাকল। সংসদীয় নিয়মকানুন, রীতিনীতি, সংবিধান, এদেশের ভিত সমস্ত কিছুকে দুরমুশ করে দেন বিধুরি। এই অসাংবিধানিক আচরণের জন্য কেন্দ্রের সরকার, বিজেপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিয়ে উলটে একেই দৃষ্টান্ত হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। উল্টে বুঝিয়ে দিচ্ছে, মোদীর বিরুদ্ধে মুখ খুললেই সংসদেও ‘উচিত শিক্ষা’ দেবেন বিজেপি সাংসদরা। শুধু দুবেই নয়, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা বিপ্লব কুমার দেব খুঁজে পেতে হরিয়ানার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি উদয় ভানের একটি ভিডিও জোগাড় করেছেন। তিনি মোদী এবং হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টারের বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন অভিযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। সংসদের ভিতর একজন সাংসদের সহকর্মীর প্রতি অশ্লীল শব্দ ব্যবহার, তাঁর অসভ্যতা আড়াল করতে পুরানো কায়দাতেই মোদীর নেতৃত্বে একে একে বাজারে নামছেন বিজেপি’র রথী-মহাথীরা। 
লোকসভা অধ্যক্ষ শুক্রবার বিধুরিকে সতর্ক করে দেন। কিন্তু কোনও কড়া পদক্ষেপ তিনি নেননি। এদিন ফের অধ্যক্ষের কাছে বিধুরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জোরালো দাবি করেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী নাসিম খান অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়েছেন। বিধুরিকে চিরস্থায়ীভাবে সাসপেন্ড করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘বিধুরির এই নিন্দনীয় মন্তব্য শুধু ওই সাংসদেরই অপমান নয়, এই অপমান সংসদেরও।’’ রাজ্যসভার শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীও বিধুরির সাসপেনশনের দাবি জানিয়েছেন। তিনি এদিন প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এখনও কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? শুধু একটা সতর্কবার্তা দিয়েই সাংসদকে ছাড় দেওয়া হবে?’’ রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিবাল মোদীর নীরবতা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। তিনি মোদী-শাহকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘সংসদের এই নতুন সাত তলা ভবন ঘৃণার নতুন সংস্কৃতির সাক্ষী থাকল।’’ বিধুরির এই মন্তব্যকে রাস্তার টিটকিরির সঙ্গে তুলনা করেছেন বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব। আরজেডি নেতা বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি, পদকজয়ী মহিলা কুস্তিগিররা বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগে ধরনায় বসেছিলেন। কিন্তু বিজেপি ওই সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। আর এখন সংসদের ভিতরে যা হলো, একজন সাংসদকে আরেকজন সাংসদ তাঁর ধর্মের কারণে এমন শব্দে আঘাত করবেন... এ অত্যন্ত যন্ত্রণার।’’ বিধুরির মন্তব্যে কড়া নিন্দা করে জামাত উলেমা-ই-হিন্দ বলেছে, এই বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া লোকসভা অধ্যক্ষের নৈতিক এবং সাংবিধানিক দায়িত্ব।

Comments :0

Login to leave a comment