Census

জনগণনায় ভয় কেন?

সম্পাদকীয় বিভাগ

জনগণনা নিয়ে মোদী সরকারের অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়। ২০২১ সালে যে জনগণনা হবার কথা তার প্রস্তুতি শুরু হয় দু’বছর আগে থেকেই। ২০১৯ সালে ভোটে জিতে দ্বিতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করে জনগণনার জন্য ১২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল মোদীর মন্ত্রীসভা। ব্যস, ঐ পর্যন্তই। তারপর আর বিশেষ কিছু এগোয়নি। কিছুদিন পরই এসে যায় করোনা অতিমারী। ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায় যাবতীয় উদ্যোগের গোটা গণনা প্রকল্পটিই নীরবে চলে যায় ঠান্ডা ঘরে। ২০২২ সালে করোনা বিপর্যয় অতিক্রম করে পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হয়েছে। ২০২৩ সালে তো পুরোপুরি স্বাভাবিক। তারপরও বেশ কয়েক মাস পেরিয়ে এখন ২০২৪ সালের মাঝামাঝি। ইতিমধ্যে লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়ে তৃতীয়বারের জন্য মোদী সরকার গঠন হয়েছে। সেই সরকার তাদের প্রথম বাজেটও পেশ করেছে। কিন্তু কোথাও কোনোভাবে জনগণনার প্রসঙ্গ নেই। বাজেটে তারজন্য এক পয়সাও বরাদ্দের কথা নেই। তাহলে কি ধরে নিতে হবে মোদী সরকার জনগণনা নিয়ে মোটেই উৎসাহী নয়। তারা কি সচেতনভাবেই জনগণনাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছে?

ব্রিটিশ  আমল থেকেই প্রতি দশ বছর অন্তর হয়ে থাকে জনগণনা। এবার ১৬তম জনগণনা হবার কথা। জনগণনাই দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাণ্ডার। অন্য বহু ধরনের সমীক্ষার মাধ্যমে স্বল্প সংখ্যক নতুনা সংগ্রহ করে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্য পরিসংখ্যান তৈরি হয়। কিন্তু যেহেতু সেখানে গুটি কতক নমুনার ভিত্তিতে সামগ্রিক বাস্তব অবস্থার ধারণা করা হয় তাই সেইসব তথ্য পরিসংখ্যানের বিস্তর সীমাবদ্ধতা আছে। প্রকৃত বাস্তবতা সেখানে কখনোই ধরা পড়ে না। খানিকটা আন্দাজ করা যায় মাত্র। দেশের সমস্ত মানুষের সামগ্রিক বিষয়গুলি যথাসম্ভব নিখুঁত ও বিস্তারিতভাবে জানতে হলে জনগণনার কোনও বিকল্প নেই। নীতি নির্ধারণ, প্রকল্প তৈরি ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রকৃত সামনে না থাকলে লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়। বর্তমানে বিনামূল্যে বা দু’টাকা কেজি দরে যে রেশন ব্যবস্থা চালু আছে সেটা ৬০ ঋতাংশ মানুষের কাছে যাচ্ছে। এই ৬০ শতাংশ ঠিক হয়েছে ২০১১ সালের জনগণনার তথ্যের ভিত্তিতে আন্দাজ করে। তেমনি মাথা গোনা সংখ্যার থেকেই দেশবাসীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার বহুমাত্রিক ছবিও ফুটে ওঠে। জনগণনার পরিসংখ্যানে। তার ভিত্তিতেই যথাযথ নীতি ও প্রকল্প গ্রহণ করা যায়।

বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এই বিষয়টাকে মোদী সরকার অস্বীকার করছে বা উপেক্ষা করছে। অথচ সঠিক তথ্য-পরিসংখ্যান তৈরি না করে মনগড়া সব বিবৃতি দিয়ে সাম্প্রদায়িক ও বিভাজনের রাজনীতিকে পুষ্ট করছে। মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাবৃদ্ধিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে যুক্তিহীনভাবে রাজনৈতিক জলঘোলা করা হচ্ছে। একইভাবে জাতভিত্তিক জনগণনার বিরোধীদের জোরালো দাবিকে অস্বীকার করতে না পেরে জনগণকেই ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। জাতভিত্তিক গণনা হলে যে ছবি উঠে আসার সম্ভাবনা তাতে হিন্দুবাদী রাজনীতির সমস্যা বাড়তে পারে। লোকসভা ও বিধানসভায় মহিলাদের জন্য এক তৃতীয়াংশ সংরক্ষণের আইনও ঝুলে থাকবে জনগণনা না হলে। জনগণনা না হলে আসন পুনর্বিন্যাস আটকে যাবে। আবার আসন পুনর্বিন্যাস না হলে মহিলা সংরক্ষণ আটকে যাবে। আবার জনগণনার পর আসন পুনর্বিন্যাস হলে দক্ষিণ ভারতে ও আরও কিছু এলাকায় আসন কমে উত্তর ভারতের গোবলয়ে আসন বেড়ে যেতে পারে। কারণ অশিক্ষা ও পশ্চাৎপদতার কারণে গোবলয়ে জনবৃদ্ধির হার বেশি। একে ঘিরেও রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। এই সব থেকে পালিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে গণনা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment