Yechury press meet

আদানিকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত চাই, দাবি সিপিআই(এম)’র

জাতীয়

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও বিমা সংস্থাগুলিতে জনসাধারণের গচ্ছিত টাকা আদানির কোম্পানিতে লগ্নি করে দেশবাসীর স্বার্থকে কেন বিপদে ফেলা হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলল সিপিআই(এম)। রবিবার কলকাতায় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের মাঝেই সাংবাদিক সম্মেলন করে সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি দাবি করেছেন, আদানিকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করা হোক। সংসদের বাজেট অধিবেশনেই সেই তদন্তের রিপোর্ট সংসদে পেশ করতে হবে। আমরা দেশবাসীর সঞ্চয় নিয়ে উদ্বিগ্ন। 


এদিন বিকালে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে সঙ্গে নিয়ে সীতারাম ইয়েচুরি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানেই তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশ ও দেশবাসীর অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষা নিয়ে। ইয়েচুরি বলেছেন, কারচুপি করে কীভাবে আদানিদের সম্পদ ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে তার তদন্ত প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের বেশি উদ্বেগ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিমা কোম্পানি এলআইসি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক এসবিআই’তে সঞ্চিত সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে। এদের টাকা কেন আদানির কোম্পানির মুনাফার জন্য লগ্নিতে ব্যবহার করে দেশবাসীর স্বার্থ বিঘ্নিত করা হয়েছে? সাধারণভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি এবং আরবিআই’এর এগুলি দেখার দায়িত্ব, তারা তদন্ত করে দেখুক। কিন্তু এক্ষেত্রে যা ঘটেছে তাতে আরও উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত প্রয়োজন। মোদী সরকারের আমলে যৌথ সংসদীয় কমিটিও গুরুত্ব হারিয়েছে, এখন সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে উচ্চ পর্যায়ের এই তদন্ত করা হোক এবং সময় বেঁধে সংসদের বাজেট অধিবেশনের মধ্যেই তার রিপোর্ট পেশ করা হোক। 


আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থায় বিনিয়োগ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা এলআইসি। বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য ঋণ দিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্কের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। মানুষের সঞ্চয়ে আদানির সম্পদ বেড়েছে। এই কারণে ইয়েচুরি বলেছেন, শেয়ারের দাম পড়ে যাওয়ায় কেবল আদানির সম্পদের মূল্য কমছে না, দেশবাসীর সঞ্চয় বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এলআইসি বা স্টেট ব্যাঙ্কে মানুষের জীবনভর উপার্জনের থেকে সঞ্চয় রয়েছে। তাঁদের সঞ্চয় এবং দেশের অর্থনীতি বরবাদ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে এখনই। গত কয়েক বছরে দেশের ব্যাঙ্কের টাকা জালিয়াতি করে বিদেশ পালাতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের। সেই তালিকায় আরেকটি নাম যেন যুক্ত না হয় নিশ্চিত করতে হবে কেন্দ্রকে।
কেন মোদী সরকারের ওপরে ভরসা না করে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করছেন তা ব্যাখ্যা করে সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ২০১৪ সালের পর থেকে নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদে সম্পদ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে আদানি গোষ্ঠীর। রাষ্ট্রায়ত্ত বন্দর থেকে বিমানবন্দর, সিমেন্ট শিল্প সব এখন এই গোষ্ঠীর হাতে। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের যে রিপোর্টে বলা হয়েছে যে কারচুপি করে শেয়ারের দর বাড়িয়েছে আদানি গোষ্ঠী। কাজেই দেশের অর্থ মন্ত্রী থেকে বিদেশ মন্ত্রী, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী কেউ এর দায় এড়াতে পারেন না। আর প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেই তো আদানির ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আদানির প্লেনে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। বিজেপি’র সঙ্গে আদানিদের সম্পর্ক স্পষ্ট নির্বাচনী বন্ড থেকে। দেশের সম্পদ লুটের বিনিময়ে বিজেপি একাই নির্বাচনী বন্ডে পেয়েছে ৮০ শতাংশ টাকা। কারা দিয়েছে? কর্পোরেট লুটে মদত দিয়ে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে আইনসম্মত রাজনৈতিক দুর্নীতি ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেন্দ্রের সরকারের নীতি তৈরি হচ্ছে কর্পোরেট মুনাফার স্বার্থে, সরকার পুরোপুরি কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণে। 


এলআইসি এবং এসবিআই’র আর্থিক স্বাস্থ্য মজবুত দেখিয়ে মানুষকে অভয় দিয়ে আদানিকাণ্ডের অপরাধ আড়াল করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইয়েচুরি। তিনি বলেছেন, আদানির গ্রুপে এলআইসি’র বিনিয়োগ ৭৪ থেকে ৮৪ হাজার কোটি টাকার মতো। এখন আদানিদের সম্পদের মূল্যে ধস নামায় সাধারণ মানুষের সঞ্চয় নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠছে। এলআইসি এবং এসবিআই এই ধাক্কা সামলাতে পারবে বলে আশ্বাসে কোনও কাজ হবে না, মানুষের বিমার প্রিমিয়াম এবং ব্যাঙ্কের সঞ্চয় থেকে মানুষ কি প্রাপ্য রিটার্ন পাবে? নাকি সব উবে যাবে? এটা তো বোঝাই যাচ্ছে যে ব্যাঙ্কের সঞ্চয়ে মানুষকে মাত্র ৪-৫ শতাংশ সুদ দেওয়া হচ্ছে, যদি মোদী সরকারের কথায় আদানিদের লোভ মেটাতে অপব্যয় না করা হতো তাহলে মানুষকে এখনই ১০ শতাংশের বেশি সুদ দেওয়া সম্ভব হতো। 
আদানি আম্বানিদের মুনাফার পাহাড়ের বিপরীতে ভারতবাসীর দুর্দশা উল্লেখ করে ইয়েচুরি বলেছেন, দেশে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা যে বাড়ছে তা সরকার পরোক্ষে স্বীকার করে নিয়েছে ৮১ কোটি মানুষের জন্য ৫কেজি করে খাদ্যশস্য বরাদ্দ করে। অক্সফামের রিপোর্ট বলছে ২৮ কোটি মানুষে ভারতে নতুন করে দারিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আদানিকাণ্ডের গুরুত্বকে বুঝতে হবে। আদানিরা এখন মিডিয়াকেও নিয়ন্ত্রণ করছে, কিন্তু দেশবাসীকে এই বিপদের গুরুত্ব বুঝিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার করতেই হবে। 


সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে তিনি দাবি করেছন, দেশবাসীর দুর্দশা ঘোঁচাতে কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করুক, তাতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, বাজার চাঙ্গা হবে। জনকল্যাণে সরকার ব্যয় বাড়াক, ভরতুকি দিক। রেগায় আরও কাজ সৃষ্টি করুক, সম্পদের বৈষম্য দূর করতে বিত্তবানদের ওপরে সম্পত্তি কর বসাক, সম্পত্তির উত্তরাধিকারে কর বসাক, কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় পণ্য থেকে জিএসটি সরাক।
 

Comments :0

Login to leave a comment