দু’বছর পর কলকাতায় ফিরেছিল আইএসএল ডার্বি। টইটুম্বর গ্যালারি। টিফোর মাধ্যমে একের পর এক খোঁচা দেওয়া। এসবই গত দু’বছরের রংহীন ডার্বিকে রাঙিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ফলাফল কোনও বদল আসেননি। এবারও সেই আইএসএল ডার্বির রং সবুজ মেরুন। সব মিলিয়ে টানা সাতটি বড় ম্যাচে হারের স্বাদ পেল ইস্টবেঙ্গল। এটিকে মোহনবাগানের নয় মিনিটের ছোট্ট ‘স্পেল’, ফের উড়ে গেল লাল হলুদ। হুগো বুমোস, মনবীর সিংয়ের (২-০) গোলে জিতল সবুজ মেরুন। বলা ভালো, ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক কমলজিতের ‘হাতযশে’ জিতল এটিকে মোহনবাগান। তিনি শেষপ্রহরী। স্বাভাবিকভাবে, দলের পতন রোধ করার বাড়তি দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। কার্যত কমলজিতই গোল দুটি উপহার দিলেন বিপক্ষকে। ডার্বির মতো হাইভোল্টেজ ম্যাচে এরকম ভুল ক্ষমার অযোগ্য। গতবারেও ওডিশার হয়ে চল্লিশের বেশি গোল হজম করেছিলেন তিনি। তারপরও তাঁকে দলে নেয় ইস্টবেঙ্গল। ডার্বিতে দু’গোল হজম করিয়ে দলকে ভালোই ‘প্রতিদান’ দিলেন কমলজিত।
মাঝে ডুরান্ডের ডার্বি কলকাতাতে হলেও আইএসএল’র ডার্বি প্রথম। তাই, দু’দলের সমর্থকদের উত্তেজনাও তুঙ্গে ছিল। শনিবারের সন্ধ্যা। কলকাতার সব রাস্তাই যেন মিশে গিয়েছিল যুবভারতী স্টেডিয়ামে। বিধাননগর স্টেশন থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। ম্যাটডোর ভর্তি মানুষরা স্লোগান দিতে দিতে মাঠের দিকে এগোচ্ছেন। দু’দলের সমর্থকরা একে অপরের দিকে টিপ্পনি ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন। এসবই তো ডার্বির পরিচিত দৃশ্য। আগের ডার্বিগুলি জেতায় এটিকে মোহনবাগান সমর্থকরা বেশিই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা ভেবেছিলেন জবাবটা মাঠে নেমে দেবেন তাঁদের ফুটবলাররা। খেলা কুড়ি মিনিট দেরিতে শুরু হয়েছিল। কারণ হায়দরাবাদ-গোয়ার ম্যাচ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য কিছু সময় বন্ধ ছিল। খেলার শুরুতে লাল হলুদ সমর্থকরা প্রথম খোঁচা দিয়েছিল টিফোর মাধ্যমে। খেলার শেষে জিতে মোক্ষম জবাব দিল এটিকে মোহনবাগান।
বড় ম্যাচের একাদশে দুই কোচই কোনও পরিবর্তন আনেননি। আসলে, তাঁরা চাননি উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে। এটিকে মোহনবাগান কোচ রক্ষণ জমাট করতে চার ডিফেন্ডার খেলান। শুরুতে থেকেই লড়াই চলছিল ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ বনাম মোহনবাগান আক্রমণের। ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সে লোক বাড়িয়ে রুখে দিচ্ছিল মোহনবাগানের আক্রমণগুলি। লিস্টন-কাউকোরা ডিফেন্স চেরা পাস লাল হলুদ ফুটবলারদের পায়ের জঙ্গলে আটকে যাচ্ছিল। গোল হওয়ার মতো পরিস্থিতির তৈরি হলেও দু’বার রুখে দেন ইস্টবেঙ্গলের সার্থক গলুই। বুমোর পাস থেকে লিস্টনের শটে গোল হয়নি। ১৫ মিনিটেই কিন্তু ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে যেতে পারত। সেম্বোয় হাওকিপের হেড ধরে ফেলেন মোহনবাগানের গোলরক্ষক। ৩৭ মিনিটে সার্থকে গলুইয়ের দূরপাল্লার শট বাইরে গিয়েছিল। প্রথমার্ধে রুখে দিলেও দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গল পারলো কই? কমলজিতের নির্ভেজাল আত্মসমর্পণের সামনেই শেষ হয়ে গেল সমস্ত জারিজুরি।
তিনিই তো দায়ী ইস্টবেঙ্গলের প্রথম গোল হজম করার ক্ষেত্রে। ম্যাচের ৫৬ মিনিটে হুগো বুমোস হঠাৎই গোল লক্ষ্য করে শট নেন। গোলকিপার কমলজিত ধারণাই করতে পারেননি বুমো শট নিতে পারেন। প্রস্তুতই ছিলেন না। বুমোর শট কমলজিত ডানদিক ঝাঁপিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও হাতে লেগে বল জালে জড়িয়ে যায়। ৬৫ মিনিটে দ্বিতীয় গোল। ইস্টবেঙ্গলের এক ফুটবলারের ভুলে বল পেয়ে যান অসি বিশ্বকাপার দিমি পেত্রাতোস। তিনি বল বাড়ান ফাঁকায় দাঁড়ানো মনবীর সিং। পাঞ্জাবী তনয় অন্য ম্যাচে গোল নষ্ট করলেও ডার্বিতে তেকাঠিটা ভালো চেনেন। এদিনও কোনও ভুল করেননি। বক্সের ভেতর তাঁর গড়ানো শটে মোহনবাগান এগিয়ে যায় ২-০। পিছিয়ে পড়ে তড়িঘড়ি দলে আনেন কোচ স্টিফেন। নামিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার এলিয়ান্দ্রোকেও। তিনি নেমেই একটা ঠিকানা লেখা পাস বাড়িয়েছিলেন। সেখান থেকেও গোল হয়নি। আসলে বাজে দু’টি গোল হজম করে ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের মনোবলে ধাক্কা লেগেছিল। রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই টানা সাতটি ডার্বি জয়ের উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন প্রীতম কোটালরা।
ইস্টবেঙ্গল— কমলজিৎ, সার্থক, লালচুংনুঙ্গা, ইভান (এলিয়ান্দ্রো), জেরি, সুহের (অনিকেত), জর্ডান (লিমা), কিরিয়াকো, নাওরেম (তুহিন), ক্লেইটন, হাওকিপ (সৌভিক)।
মোহনবাগান— বিশাল, শুভাশিস, হামিল, প্রীতম, আশিস, কাউকো (পোগবা), বুমোস (ম্যাকহিউ), টাংরি (আশিক), মনবীর, কোলাসো (লেনি), পেত্রাতোস।
Comments :0