Post Editorial

জরুরি অবস্থা এবং মোদীর গণতান্ত্রিক ভণ্ডামি

উত্তর সম্পাদকীয়​


পলাশ দাস

জরুরি অবস্থা যেন অঘোষিত জরুরি অবস্থার ঢাল হয়ে উঠলো সংসদে। স্লোগানে, পোস্টারে উত্তাল লোকসভার অধিবেশন। এবারের নির্বাচনে বিরোধীদের অন্যতম প্রধান অভিযোগ ছিল গণতন্ত্র ও সংবিধানের ওপর মোদী সরকারের আক্রমণ। লোকসভার প্রথম দিনের অধিবেশন জরুরি অবস্থার বর্ষপূর্তির ঠিক আগে হওয়ার সুযোগ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী বিরোধীদের বিশেষত কংগ্রেসকে ৪৯ বছর আগের জরুরি অবস্থার জন্য কাঠগড়ায় তুলে তীব্র আক্রমণ শানালেন। যে ভাষ্য তিনি তৈরি করলেন, গোদি মিডিয়ায় যা প্রতিধ্বনিত হলো তা হলো “গণতন্ত্র বনাম জরুরি অবস্থা”। কংগ্রেসকে আক্রমণ করাও হলো আবার নিজেকে গণতন্ত্রের পূজারি বানানোও গেল। ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে জরুরি অবস্থা নিঃসন্দেহে এক কালো অধ্যায়। কিন্তু প্রায় ফ্যাসিস্ত কায়দায় গণতন্ত্র নিধন করে যিনি সংবিধান বদলাতে চলেছিলেন, তাঁর মুখে গণতন্ত্রের বুলি চূড়ান্ত ভণ্ডামি ছাড়া কিছু নয়।  

জরুরি অবস্থার কালো দিন
“চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির”, গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের এই কবিতাটির সম্প্রচার একদিন আকাশবাণীতে নিষিদ্ধ হয়েছিল। মিছিল, সমাবেশ থেকে গান, কবিতা এমনকি কার্টুনেও ক্ষতিকারক এবং অস্থিরতা সৃষ্টির উপাদান দেখেছিল শাসক। ভয়ের গহ্বরে বাস করে বলেই স্বৈরাচারী শাসন জনমনে ভয় সৃষ্টি করে। আমাদের স্বাধীন দেশের ইতিহাসেও এমন এক আখ্যানের জন্ম হয়েছিল, যা টিকেছিল ২১ মাস। 

এখন থেকে প্রায় অর্ধ শতক আগে ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন মধ্যরাতে ভারতের রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ জরুরি অবস্থা জারির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন। কারণ ছিল এলাহাবাদ হাইকোর্টের এক রায়। আদালতের রায়ে ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধীর লোকসভায় নির্বাচন অবৈধ হয়ে যায়। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তড়িঘড়ি সংবিধানের ৩৫২ ধারা প্রয়োগ করে জরুরি অবস্থা জারি করে সরকার। ১৯৭৭ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত যা চলেছিল। ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে সেটা অন্ধকারাচ্ছন্ন এক সময়।

জরুরি অবস্থা জারির সঙ্গে সঙ্গেই সরকার, প্রশাসন, পুলিশ ও সেনা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সংবাদমাধ্যমের মুখ বন্ধ করতে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে একসময় আইনও তৈরি করে সরকার। সরকার নিয়ন্ত্রিত  সংবাদপত্র, আকাশবাণী ও দূরদর্শনে সরকারের গৌরবগাথা প্রচারিত হতে থাকে।  প্রেস সেন্সরশিপ ব্যুরোর কাজ হয় প্রতিদিন সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন থেকে  আপত্তিকর সব কিছু বাদ দেওয়া। এর মধ্যেও কিছু সংবাদপত্র ও অনেক সাংবাদিকরা চেষ্টা করেন সত্য তুলে ধরতে। ফলে অনেক এডিটর ও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার হতে হয়।    
সংসদীয় ব্যবস্থা উপেক্ষিত হয়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ওপর নেমে আসে আক্রমণ। ব্যাপক ধরপাকড় চলে সারা দেশে। সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ-প্রতিবাদ, মিছিল, জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। জ্যোতি বসু, জয়প্রকাশ নারায়ণ, মোরারজি দেশাই সহ দেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদদের অনেককেই জেলে যেতে হয়। কয়েক হাজার রাজনৈতিক কর্মী ও নেতৃত্বকে মিসা (মেইনটেনেন্স অব ইন্টারনাল সিকিউরিটি অ্যা ক্ট) ও অন্যান্য আইন প্রয়োগ করে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

শুধু রাজনীতির জগৎ নয়, সাধারণ মানুষেরও মৌলিক অধিকার বিপন্ন হয়। মত প্রকাশের অধিকার, প্রতিবাদের অধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা খর্বিত হয়। সাংস্কৃতিক জগতেও নেমে আসে বিধিনিষেধ, গ্রেপ্তারি। উৎপল দত্তের জনপ্রিয় নাটক “কল্লোল”-র মঞ্চায়ন নিষিদ্ধ হয়।  গুলজারের পরিচালনায়, সুচিত্রা সেন অভিনীত ছায়াছবি “আঁধি” বা রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক সিনেমা “কিসসা কুর্শিকা”-র মতো সিনেমার প্রদর্শন বন্ধ হয়।  

অত্যাচারীরা শেষ কথা বলেনি। শেষ কথা বলেছে জনগণ ১৯৭৭ -র ঐতিহাসিক নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের পতন ঘটিয়ে। এরপরেই বাংলায় প্রায় ৫ বছর ধরে চলা আধা ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসের জনক সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের রাজত্বের অবসান ঘটে এবং বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা চলে পরবর্তী ৩৪ বছর।  

জরুরি অবস্থা ও আরএসএস

ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থার সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির নেতা ও কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করেছিলেন। রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে বহু অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেও জরুরি অবস্থায় মিশা খাটতে হয়। তৎকালীন জনসঙ্ঘের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আরএসএস’র অনেকে গ্রেপ্তার হন। কংগ্রেসের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের গণতন্ত্রের আকুতি ও কংগ্রেস বিরুদ্ধতা আঁচ করে আরএসএস তার রাজনৈতিক শাখা জনসঙ্ঘের সব নেতা-কর্মীদের জনতা দলে ঢুকিয়ে দেয়।

আরএসএস’র সব কিছুই মিথ্যা ও দ্বিচারিতায় মোড়া। আরএসএস ও জনসঙ্ঘের কিছু নেতা-কর্মী জরুরি অবস্থায় জেল খাটলেও তাদের ভূমিকা কমিউনিস্ট বা অন্যান্য প্রতিবাদী রাজনৈতিক দলের মতো ছিল না। সঙ্ঘ প্রধান বালাসাহেব দেওরস জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই মিসায় গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর সঙ্ঘ প্রধান চিঠির পর চিঠি লিখে অনুরোধ করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীকে, আরএসএস কর্মীদের মুক্তি দিতে। চিঠিতে  কংগ্রেস ও আরএসএস’র মধ্যেকার মিল, সাদৃশ্যগুলি উল্লেখ করে তিনি দেশের জাতীয় ঐক্য ও সামাজিক অস্থিরতার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সঙ্ঘের অরাজনৈতিক অবস্থানে জোর দিয়ে তাদের দেশসেবার অঙ্গীকারের কথা জানান। দ্বিতীয় চিঠিতে দেশের উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ড ও জাতীয় নির্মাণে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আবারো জেলে বন্দি থাকা আরএসএস কর্মীদের মুক্তি চান। তৃতীয় চিঠিতে দেওরস জোর দেন সঙ্ঘের জাতীয় স্বার্থের প্রতি অঙ্গীকারের ওপর এবং দেশের কল্যাণে একসঙ্গে কাজ করার সম্ভাব্য উপায়গুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে একান্তে সাক্ষাতের অনুরোধ জানান। সরকারের স্থির করা মুক্তির আবেদন পত্র, আদপে যা ছিল মুচলেকা, তা পূরণ করে তাঁরা মুক্ত হন। এই আরএসএস’র জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে বলার কোনও অধিকার থাকতে পারে!

মোদী যুগে “গণতন্ত্র” অর্থহীন 
নরেন্দ্র মোদীর আমলে সরকার হয়ে উঠেছিল “মোদী সরকার”। পিএমও অফিস হয়েছিল সব শক্তির কেন্দ্র। গণতন্ত্রের ধারকাছ দিয়ে মোদী হাঁটেননি কখনও। তিনি বলেছেন মন কি বাতে। কখনও সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেননি। সংসদে বিরোধীদের আলোচনা শোনেননি। কারো কথায় কর্ণপাত না করে, সংসদে আলোচনা ছাড়াই নোটবন্দি করেছেন। কোভিডে অযৌক্তিক, বিজ্ঞান বিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন। পিএম কেয়ারস ফান্ডকে প্রাইভেট ফান্ডে রূপান্তর বা ইলেকটোরাল বন্ড চালু করেছেন কোনও আলোচনা ছাড়াই।  

ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন
স্বশাসিত সংস্থা থেকে রাজ্য সরকারগুলির ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কমানো হয়েছে। সংসদীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে কার্যত তিনি অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছিলেন। সংসদে আলোচনা, বিতর্কের পরিসর ছিল না। সংসদীয় ব্যবস্থায় আইন প্রণয়নের অধিকার কেড়ে তিনি অর্ডিন্যান্স রাজ কায়েম করেন। অর্ডিন্যান্স করেই কৃষি আইন, বিদ্যুৎ আইন লাগু করেন। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগে, প্রায় গায়ের জোরে বিল পাশ করানো নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়।
ভারতের সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, বহুত্ববাদ। মোদী সরকার পরিকল্পিতভাবে সংবিধানের মূল মর্মবস্তুর ওপর আক্রমণ শানিয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্কের বিন্যাস ভেঙে রাজ্যকে দুর্বল করে, কেন্দ্রের হাতে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেছে। ৩৭০ ধারা সংবিধান থেকে রাজ্যের অভিমত ব্যতিরেকে একতরফাভাবে রদ করে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে দুটি ইউনিয়ন টেরিটোরিতে রূপান্তরিত করেছে। একইভাবে জিএসটি লাগু করা হয়েছে একতরফাভাবেই। এসবই রাজ্যের অধিকার, আর্থিক স্বয়ম্ভরতা বিনষ্ট করেছে।
স্বায়ত্তশাসিত সব সংস্থার ওপর নির্লজ্জ দখলদারি চলেছে। ইডি-সিবিআই’র মতো সংস্থা ব্যবহৃত হয়েছে বিরোধী দল ভাঙাতে, সরকার দখল করতে বা ইলেকটোরাল বন্ডে টাকা তোলার অন্যায় কাজে। এইসব সংস্থার মূল অধিকর্তা নিযুক্ত হয়েছেন সঙ্ঘের প্রতি বিশ্বস্ততার নিরিখে। নির্বাচন কমিশন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, সিবিআই ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলিকে এভাবেই দখল করেছে সঙ্ঘ। শিক্ষা ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীভবন, গেরুয়াকরণ ও বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে সিবিএসই থেকে সব কেন্দ্রীয় ইউনিভার্সিটি, হিস্টোরিকাল রিসার্চ কাউন্সিল তারা দখল করেছে অনুগত লোকদের বসিয়ে। আজ সংসদ উত্তাল হয়েছে নিট ও নেট দুর্নীতি নিয়ে। ইউজিসি কিংবা এনটিএ চলে গেছে বিজেপি ও সঙ্ঘের মতাদর্শে দীক্ষিত অযোগ্য লোকেদের হাতে। স্কুল, কলেজে কি পড়ানো হবে, পাঠ্য পুস্তকে কি থাকবে, কি বাদ যাবে তা ঠিক করছে সঙ্ঘ। বিচার ব্যবস্থার ওপরেও নিয়ন্ত্রণ কায়েমের ভয়াল প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। বিচারপতি নিয়োগ থেকে বিচার ব্যবস্থার ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের দায়িত্ব থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে নিজেদের দখলে আনা হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে।  
আক্রান্ত ধর্মনিরপেক্ষতা, বহুত্ববাদ
ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ নিয়ে চলা ভারতে ধর্ম, ভাষা, জাতি-উপজাতি, লিঙ্গ, সংস্কৃতি নির্বিশেষে আইনের চোখে সব মানুষ সমান। মোদী সরকার অসাংবিধানিকভাবে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদানের সংশোধিত আইন সিএএ লাগু করেছেন, মানুষকে বিভাজিত করার লক্ষ্যে। সঙ্ঘের হিন্দুত্বের মতাদর্শ প্রয়োগের লক্ষ্যেই সরকার পরিচালিত হয়েছে যা বহুত্ববাদী সমাজের সামাজিক সম্প্রীতি, বন্ধনকে ধ্বংস করেছে। সংখ্যালঘু, দলিত, আদিবাসী মানুষদের ওপর আক্রমণ, নির্যাতন নিয়মে দাঁড়িয়েছে। বুলডোজার রাজ, এনকাউন্টার আর বিজেপি সরকার আজ সমার্থক। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গোরক্ষা বাহিনী, নীতি পুলিশ সহ নানা হিন্দুত্ববাদী বাহিনী ঠিক করেছে কে কি খাবে, কি পরবে। গো-রক্ষার নামে বা লাভ জিহাদের অজুহাতে মব লিঞ্চিং চলেছে। 
প্রতিবাদ ও বিরুদ্ধ স্বর দমনে স্বৈরাচারী শাসক
সরকার কালা কৃষি আইন কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের স্বার্থে গ্রহণ করায়, শুরু হয় ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন। সেই আন্দোলনকে দমন করতে মোদী সরকার কার্যত সেনা, আধা সেনা, পুলিশ নিয়ে দেশের অন্নদাতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে, নির্মম অত্যাচার চালায়। এমনই আক্রমণ সরকার ও হিন্দুত্ববাদীরা চালায় সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলন দমন করতে দিল্লির শাহিনবাগে, জেএনইউ বা দেশের অন্যত্র।  ভীমা কোরেগাঁও মামলায় দেশের নানা প্রান্তের বিশিষ্ট বহু ব্যক্তিত্বকে আজও জেলের অন্ধকারে রাখা হয়েছে। স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু ঘটেছে জেল হেপাজতে। হিন্দুত্ববাদী শক্তির হাতে নিহত হয়েছেন দাভালকার থেকে গৌরি লঙ্কেশ, পানসারে, কালবুর্গি।

অঘোষিত জরুরি অবস্থা
মোদী আমলে এমার্জেন্সি ঘোষণা না হলেও দেশ অঘোষিত জরুরি অবস্থার মধ্যেই আছে। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ মিডিয়ার আজকের পরিচয় “গোদি মিডিয়া”।  এক্সিট পোলেও তারা মোদীর ইচ্ছে পূরণে ৪০০ পার করে দিয়েছে। প্রথম দিকে যারা সমালোচনা করেছিলো ইডি, সিবিআই, আয়কর হানায় সেইসব মূলধারার মিডিয়া গোদি মিডিয়ায় পরিণত হয়। স্বাধীন সাংবাদিক, পোর্টাল, সোশাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের প্রবল প্রচেষ্টা নেয় সরকার। নিউজ ক্লিক, দ্য ওয়ার, এনডি টিভির ওপর আক্রমণের লক্ষ্য ছিল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সব সমালোচনা বন্ধ করা। সিদ্দিক কাপ্পান, মহম্মদ জুবেইর, প্রবীর পুরকায়স্থ সহ বহু সাংবাদিক, ফ্যাক্ট চেকারদের মোদী সরকারের সমালোচনা করায় জেল খাটতে হয়েছে।

সাংস্কৃতিক জগতেও অঘোষিত জরুরি অবস্থার ছায়া। সরকারি নীতি, কাজ, মোদী-শাহ বা তাঁদের হিন্দুত্ববাদী আদর্শের বিরুদ্ধ মত পোষিত হলে, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অজুহাতে হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী মৈলবাদী শক্তি হামলা চালিয়ে বন্ধ করে সিনেমা, নাটক, প্রদর্শনী, নৃত্য-সঙ্গীতের আসর। আঁধির মতোই আক্রান্ত হয় পদ্মাবতী সিনেমা। দিল্লির গণধর্ষণ নিয়ে বিবিসি’র তথ্যচিত্র ভারতে নিষিদ্ধ হয়। ধর্মীয় মৌলবাদ ও এলজিবিটিকিউদের নিয়ে নির্মিত ছবি “আনফ্রিডম” সেনসর বোর্ড আটকে দেয়। “ইউপি মে কাবা” সঙ্গীতের জন্য নেহা সিং রাঠোরের মতো বহু শিল্পী, ইউটিউবার, স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানকে প্রতিদিন ট্রোলড হতে হয়, খুনের হুমকি শুনতে হয়।  

মোদী ৩.০ ঠিক আগের মতো মোদীময় হতে পারবে না। বিরোধীদের সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক বেশি। জনতার রায় মোদীকে গরিষ্ঠতা দেয়নি। জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদী পুরানো পদ্ধতিতেই দেশ চালাতে পারবেন না। তবু বিজেপি ক্ষমতায়। ফলে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান বিপন্মুক্ত নয়। ফলে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও দেশের সংবিধান রক্ষার লড়াইকে আরও শক্তিশালী করতেই হবে।

Highlights

তৃতীয় দফায় মোদী ঠিক আগের মতো মোদীময় হতে পারবে না। বিরোধীদের সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক বেশি। জনতার রায় মোদীকে গরিষ্ঠতা দেয়নি। জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদী পুরানো পদ্ধতিতেই দেশ চালাতে পারবেন না। তবু বিজেপি ক্ষমতায়। ফলে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান বিপন্মুক্ত নয়।
 

Comments :0

Login to leave a comment