Farmers Noida

বিভাজনের সিনেমায় মশগুল মোদী, কৃষকরা অপেক্ষায় খোলা মাঠে

জাতীয়

অরূপ সেন: নয়াদিল্লি

প্রধানমন্ত্রী মশগুল বিভাজন প্রচারের সিনেমায়। সংসদেই দেখলেন সেই সিনেমা। আর সোমবারই, সংসদে কথা জানাতে আসা কৃষকদের আটকাতে মরিয়া থাকল পুলিশ।
নির্মম এই ঘটনাক্রম সোমবারও দেখল দেশ। নয়ডা সীমান্তে আটকে রাখা হলো কৃষকদের। সংসদে ঢুকতে বাধা দিতে রাস্তাজুড়ে বসানো হলো ব্যারিকেড। বিকেলে কৃষকরা রাস্তা থেকে সরে যান। ব্যারিকেড সরানো হয়। তবে কৃষকরা আন্দোলন থেকে সরেননি। নয়ডারই লাগোয়া ময়দানে অবস্থান করছেন তাঁরা।
সংযুক্ত কিসান মোর্চা, সারা ভারত কৃষকসভার মতো বহু কৃষক সংগঠনের এই মঞ্চের ডাকে দিল্লি অভিমুখে অভিযানে নামেন কৃষকরা। কেবল উত্তর প্রদেশেরই অন্তত ৫ হাজার কৃষক অংশ নিচ্ছেন বিক্ষোভে। 
সোমবারই ‘সবরমতী রিপোর্ট’ সিনেমা সদলবলে সংসদ ভবনের বালাযোগী অডিটোরিয়ামে বসে সদলবলে দেখেছেন মোদী। গুজরাট গণহত্যাকে বৈধতা দিতে সবরমতী এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ড ঘিরে সঙ্ঘ পরিবারের ভাষ্য নিয়ে নির্মিত এই সিনেমা, বলেছেন সমালোচকদের বড় অংশ। তখনই কৃষকদের আটকাতে নয়ডায় যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করে ফেলেছে উত্তর প্রদেশে বিজেপি সরকারের পুলিশ। 
দিল্লি লাগোয়া উত্তর প্রদেশে গ্রেটার নয়ডায় গত কয়েকদিন ধরেই শ’য়ে শ’য়ে গ্রাম থেকে আসছিলেন কৃষকরা। গ্রেটার নয়ডা এবং যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির সময় তাঁদেরই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। মোদী সরকার আসীন হওয়ার আগেই দেশে পুরনো জমি আইন বদলে পাশ হয় নতুন আইন। অধিগৃহীত জমিতে উন্নয়নের পর ১০ শতাংশ ভাগ পাওয়ার কথা জমিদাতাদের। জমির ওপর নির্ভরশীল কৃষিজীবী অন্য অংশেরও কাজ, ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা। তার কিছু হয়নি। বাজার দরের চারগুন দাম দেওয়ার কথা থাকলেও সেই অর্থ পাননি কৃষকরা। 
এদিন কৃষকসভা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘উত্তর প্রদেশের যোগী সরকার হুঁশ খুইয়ে ফেলেছে। যাদের খেত নেওয়া হয়েছিল, ঘরবাড়ি নেওয়া হয়েছিল, সেখানেই এখন অট্টালিকার সারি। অথচ এই উন্নয়নের ভাগ পাননি কৃষকরা, কৃষিজীবীরা। দিল্লিতে সঙ্গত দাবি জানাতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। উত্তর প্রদেশ সরকার এবং তার পুলিশ জঘন্য ভূমিকা নিচ্ছে।’’ 
সংযুক্ত কিসান মোর্চা বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘কৃষকদের দাবি সঙ্গত। উন্নয়নের পর জমির ১০ শতাংশ জমিদাতাদের ফেরাতে হবে। গ্রেটার নয়ডা, নয়ডা, যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে, উত্তর প্রদেশ এসআইডিসি এবং অন্য প্রকল্পে জমি হারানো সব কৃষকদেরই দাবি এটিই।’’
দিল্লি অভিযানে অনড় কৃষকদের আশ্বাস দিতে বাধ্য হয় যোগী সরকারের রাজস্ব বিভাগ এবং পুলিশ। মুখ্যসচিব বসে দাবি নিয়ে আলোচনা করবেন বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়। কৃষকরা রাস্তা থেকে সরে অবস্থান করছেন নয়ডা-দিল্লি হাইওয়ের পাশে দলিত প্রেরণা স্থলে। সংযুক্ত কিসান মোর্চা জানিয়েছে, দাবি না মেটা পর্যন্ত রাতদিন এক করে টানা বিক্ষোভ অবস্থান চলবে।   
নয়ডা, গ্রেটার নয়ডা, যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে সরে যেতে বাধ্য হওয়া কৃষকদের সঙ্গত ক্ষতিপূরণের দাবি প্রায় কুড়ি বছরের। সংযুক্ত কিসান মোর্চা বলেছে, উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকার ২০১৭ থেকে জমির সরকারি দর বাড়ায়নি। অথচ বাজারে দাম বিপুল। ফলে উচ্ছেদের শিকার হলেও ক্ষতিপূরণ মিলছে অনেক কম হারে। ২০১৩’র জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না তাঁরা। সরকার দাবি না মানলে আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়বে।

Comments :0

Login to leave a comment