Adhar

আধার কাজিয়া

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

গত বেশ কিছুদিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসছে অনেক লোকের নাকি আধার নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে। এই মর্মে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে ডাক মারফত চিঠিও পৌঁছাচ্ছে। কি কারণে আধার নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে তার আগাম কোনও বার্তা না দিয়ে আচমকা নিষ্ক্রিয় করে দেবার ফলে সর্বত্র ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত আধার বাধ্যতামূলক নয় বলে রায় দেবার পরও কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় সব ক্ষেত্রে আধারকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে আদালতের রায়কে অস্বীকার করে। এরাজ্যে তৃণমূলও এক্ষেত্রে হাঁটছে মোদীর পথেই। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পেতে, বিভিন্ন পরিষেবা পেতে আধার জরুরি। আধার না থাকলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অচল। মিলবে না রান্নার গ্যাস। আধার ছাড়া ফোনের সিমকার্ডও মেলে না। এহেন আধার বিনা নোটিসে আচমকা নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হলে মানুষ আতান্তরে পড়বেন সেটাই স্বাভাবিক।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো অবাঞ্ছিত এই ঘটনাটি ঘটেছে লোকসভা নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে। সেই সুবাধে একদিকে কেন্দ্রীয় শাসক বিজেপি এবং রাজ্যের শাসক তৃণমূল রাজনৈতিক খেউড় শুরু করে দিয়েছে। দু’দলের সব নেতারাই একে অপরের বিরুদ্ধে রণংদেহী ভূমিকায় নেমে আসর মাতাচ্ছেন। এরা একে অন্যের বিরুদ্ধে যত চিৎকার করছেন ততই সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-আতঙ্ক বাড়ছে। দু’পক্ষই প্রতি‍‌যোগিতায় নেমেছে আধার হারানো ব্যক্তিদের মুশকিল আসানে। একপক্ষ বলছে তাদের কাছে আবেদন করলে আধার ফের চালু করে দেওয়া হবে। অন্য পক্ষ বলছে আধার গেছে তো কি হয়েছে বিকল্প কার্ড তারা দিয়ে দেবেন। এই কাজিয়ার আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে মূল বিষয়টি।
আগাম নোটিস ছাড়া কেন আধারণ নিষ্ক্রিয় হলো তার কোনও সন্তোষজনক উত্তর কিন্তু মেলেনি। কেউ বলছে বাতিল হয়নি, নিষ্ক্রিয় হয়েছে। কেউ বলছে প্রযুক্তিগত কারণে এমনটা হয়েছে রাতের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। আবার কেউ বলছে আধার আপডেট করতে গিয়ে এমন হয়েছে। আবেদন করলে ঠিক করে দেওয়া হবে। এটাও বলা হচ্ছে যাদের আধার বাতিল হয়েছে তারা নাকি বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলছেন একটি ফর্ম পূরণ করে তাঁর কাছে পাঠালে তিনি ঠিক করার ব্যবস্থা করবেন। এমনকি বিজেপি’র পার্টি অফিসে জমা দিলেও কাজ হয়ে যাবে। বিপরীতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন কোথাও যাবার দরকার নেই। তিনি আধারের বিকল্প কার্ড করে দেবেন।
বুঝতে অসুবিধা হয় না, নির্বাচনের মুখে পরিকল্পিতভাবে স্পর্শকাতর বিষয়টিকে উসকে দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য। আবার সেই দ্বিদলীয় সমীকরণ তৈরির সুচতুর প্রয়াস। কিছু লোকের আধার নিষ্ক্রিয় করে দু’দল মিলে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে এনআরসি শুরু করা ব্যাপারে অমিত শাহ’র ঘোষণা। কয়েকদিন আগে মতুয়া মন্ত্রী বলেছিলেন এক সপ্তাহের মধ্যেই এরাজ্যে এনআরসি শুরু হয়ে যাবে। অর্থাৎ আগে থেকে নাগরিকত্ব দেওয়া ও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া নিয়ে উদ্বেগের জমি উর্বর করে রাখা হয়েছে। তারপরই এসেছে আধার নিষ্ক্রিয়করণ। একদিকে নাগরিকত্ব পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা অন্যদিকে নাগরিকত্ব হারানোর উদ্বেগ। দু’য়ে মিলে সাধারণ মানুষের সীমাহীন দুঃশ্চিন্তার নিশিযাপন।
এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করে দুই শাসক দল হইহল্লা জুড়ে দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে কে কত উদ্বাস্তু দরদি, কে কত মতুয়া দরদি। উদ্বাস্তু জনগণকে আতঙ্কের সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে তাদের কারা রক্ষা করবে তার লড়াই চলছে। এরা যে কেউই উদ্বাস্তুদের স্বার্থ দেখবে না বা মতুয়াদের সমস্যার সমাধান করবেন না। তাদের নিয়ে রাজনীতি করে ভোটে ফায়দা তোলাই ওদের লক্ষ্য।

Comments :0

Login to leave a comment