Murshidabad to Kolkata on Toto

মুর্শিদাবাদ থেকে টোটো নিয়ে কলকাতায়

রাজ্য জেলা কলকাতা

উদ্দেশ্য একটাই, স্ত্রীকে বাঁচাতে হবে। চলল জোর লড়াই। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এসএসকেএম হাসপাতাল সহ চার- চারটে হাসপাতাল ঘুরে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা শুরু হলো উপেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসুস্থ স্ত্রী-র। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার পয়সা নেই। তাই অসুস্থ স্ত্রীকে নিজের টোটোয় চাপিয়ে প্রথমে মুর্শিদাবাদ থেকে বর্ধমান, এরপর কলকাতার হাসপাতালে রওনা দিয়েছিলেন অসহায় প্রৌঢ়। ফের সামনে এল রাজ্যের বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র। এই সঙ্গে প্রশ্ন উঠে গেল কয়েকদিন আগে রাজ্য সরকারের তরফে ঘোষণা হওয়া সেন্ট্রাল রেফারেল সিস্টেম চালু নিয়েও।
বুধবার কেতুগ্রাম থেকে রওনা হয়ে- প্রায় ষোলো ঘণ্টা টোটো চলার পর হুগলীর ডানকুনিতে এসে ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যায়। হাউসিং মোড়ে টোটো চার্জ দেওয়ার জন্য খোঁজ নিতে গেলে স্থানীয়রা দেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। উপেন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মুর্শিদাবাদের সালারে তাঁর বাড়ি। স্ত্রী শিবানী বন্দ্যোপাধ্যায় কিডনির অসুখে ভুগছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে দেখিয়েছেন। সব জায়গায় নানা পরীক্ষার কথা বলা হয়। অর্থের অভাবে সেই পরীক্ষা করতে পারেননি। ছেলের উচ্চ মাধ্যমিক পড়া বন্ধ হয়েছে স্ত্রীর অসুস্থতা ও অর্থের অভাবে। 
কয়েকদিন অসুস্থতা বাড়লে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে যান স্ত্রীকে। সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। সেখান থেকে রেফার করে দেওয়া হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার সংস্থান নেই। তাই উপেনবাবু স্ত্রী ও ছেলে অনিরুদ্ধকে নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পথে টোটো করে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। প্রায় ষোলো ঘণ্টা পর হুগলীর ডানকুনিতে টোটোর ব্যাটারি চার্জ শেষ হয়ে যায়। 
সেখানে চার্জ দিতে গেলে সবটা জানতে পারেন স্থানীয়রা। তাঁরাই একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেন। রাতেই স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতার দিকে রওনা দেন তিনি। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া চাইছিল পাঁচ-ছয় হাজার টাকা। সেই টাকা তাঁর কাছে ছিল না। ডানকুনির স্থানীয়রা কিছু টাকা তুলে দেন, খাবার দেন জল দেন। কিন্তু এরই মধ্যে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়।
বুধবার রাত ১০টা নাগাদ উপেনবাবু ও তাঁর স্ত্রী এসে পৌঁছান কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অসুস্থ শিবানী বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত পা ফুলে গিয়েছে, হার্ট ও কিডনির অবস্থাও ভালো নেই, বমি হচ্ছিল বারবার। কলকাতা মেডিক্যাল থেকে বলা হয়েছিল এখানে নয়, যেতে হবে এসএসকেএম হাসপাতালে। রাত ১১টা নাগাদ তাঁরা এসে পৌঁছান এসএসকেএম-এর এমার্জেন্সিতে। সেখানে রোগীকে একটি ইঞ্জেকশন দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বলা হয় বৃহস্পতিবার অর্থাৎ সকালে কার্ডিওলজি বিভাগে আসতে। হাসপাতালেই রাত কাটান তাঁরা। বৃহস্পতিবার সকালে কার্ডিওলজি বিভাগের ওপিডিতে দেখানোর পর ইসিজি করা হয় রোগীর। তারপর বলা হয় মেডিসিনের ওপিডিতে দেখাতে। সকালে তাঁরা যান মেডিসিন বিভাগের সাত তলায়। এরপর রোগীর ঠাঁই হয় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে।
সেন্ট্রাল রেফারেল সিস্টেম রাজ্যে চালু হয়ে গিয়েছে বলে গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। সেই  রেফারেল সিস্টেমের  উপরে ভরসা করে কলকাতায় এলে রোগীর বেড পাওয়ার কথা। প্রশ্ন উঠছে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে রেফার করার পর তাহলে শিবানী বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে রেফার করে আবার এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হলো? এসএসকেএম-এও বেড তো মিললই না। উপরন্তু  তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হলো ওপিডিতে। অসহায় উপেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, এভাবে আর কতদিন হয়রানির শিকার হতে হবে প্রান্তিক মানুষের।

Comments :0

Login to leave a comment