G20

জি-২০: ইউক্রেনে শান্তির আহ্বান

জাতীয়

G20

 


জি-২০ দেশগুলি ‘নয়াদিল্লি ঘোষণাপত্র’ গ্রহণ করেছে বলে জানানো হলেও শনিবার রাত পর্যন্ত আদৌ এই ঘোষণাপত্র সর্বসম্মত কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশাই রয়েছে। শীর্ষ বৈঠকের প্রথম দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করে দেন, সুসংবাদ রয়েছে। আমাদের কঠোর পরিশ্রমে এবং সকলের সহযোগিতায় নয়াদিল্লি শীর্ষ বৈঠকের ঘোষণাপত্রে সর্বসম্মতি ঘটেছে। আবার এই সঙ্গেই মোদী বলেন, ‘আমার অনুরোধ জি-২০ নেতারা একে গ্রহণ করুন’। ভারত সরকারের সূত্র জানিয়েছে, এর পরে শীর্ষ বৈঠকের প্রতিনিধিরা একে ‘হর্ষধ্বনি’ দিয়ে গ্রহণ করেছেন। ঘটনাক্রম থেকে ইঙ্গিত মিলছে বিদেশমন্ত্রীরা বসে একটি খসড়া তৈরি করতে পেরেছেন। শীর্ষ নেতারা চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে তা যৌথ বিবৃতিতে পরিণত হবে। 
যৌথ বিবৃতির সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় ইউক্রেনের সংঘাত। জানা যাচ্ছে, ৮৩ পরিচ্ছেদের খসড়া ঘোষণাপত্রের এই পরিচ্ছেদটি ফাঁকা রাখা হয়েছিল। পরে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন কিছু কথা রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, ’বিশ্বের নানা দিকে যুদ্ধ ও সংঘাতের ফলে মানুষের বিপুল যন্ত্রণা ও প্রতিকূল প্রতিক্রিয়ায় আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি’। এখানে রাশিয়া বা ইউক্রেনের উল্লেখ নেই। কিন্তু ইউক্রেনের স্পষ্ট উল্লেখে বলা হয়েছে ‘ ইউক্রেনে সার্বিক, ন্যায্য, দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য’ উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। ‘সামরিক ধ্বংস বন্ধ করা ও পরিকাঠামোর ওপরে অন্য আক্রমণ বন্ধ করার’ আহ্বানও জানানো হয়েছে। 
মনে করা হচ্ছে, এই পরিচ্ছেদটি নিয়ে আর বিতর্ক হবে না। যদিও পশ্চিমী দেশগুলি এত নরম ভাষায় খুশি নয়। রাশিয়াকে স্পষ্ট ভাবে আক্রমণকারী বলতে চায় তারা। তবে, আরও কয়েকটি কথা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সমস্ত দেশকেই আমরা রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদ মেনে চলার আরজি জানাচ্ছি। ভৌগোলিক অখণ্ডতা নষ্ট করে শক্তি প্রয়োগে ভূখণ্ড দখল, কোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা বিপর্যস্ত করা থেকে বিরত থাকতে সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি। এখানেও কোনো দেশের উল্লেখ নেই। বস্তুত এই বাক্যের নানা রকম ব্যাখ্যাই সম্ভব। আরো একটি বাক্য ঘোষণাপত্রে রয়েছে। বলা হয়েছে, ‘পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার বা ব্যবহারের হুমকি গ্রহণযোগ্য নয়।’ লক্ষ্য করার বিষয় ঘোষণাপত্রে রাশিয়ার খাদশস্য ও সার বিশ্ব বাজারে বিপণন করা ও ইউক্রেনের বন্দর থেকে নিরাপদে শস্য ও খাদ্য সরবরাহের পক্ষে সওয়াল করা হয়েছে। এই প্রশ্নে তুরস্ক ও রাষ্ট্রসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় যে সমঝোতা হয়েছে তার কার্যকরী রূপায়ণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে জি-২০। 
ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বালির শীর্ষ বৈঠকের ঘোষণাপত্রকে লঘু করা হয়েছে কিনা। উত্তরে জয়শঙ্কর বলেন, বালি আর নয়াদিল্লি এক নয়। এক বছরের মধ্যে পরিস্থিতির বদল ঘটেছে। ঘোষণাপত্রের ভূ-রাজনৈতিক অংশে ইউক্রেন নিয়ে আটটি পরিচ্ছেদ রয়েছে। তার মধ্যে শস্য, খাদ্যপণ্য, সারের অবাধ সরবরাহের কথা আছে, পরিকাঠামোর ওপরে আক্রমণের কথাও রয়েছে। 
জি-২০’র বিধি হলো সর্বসম্মত না হলে ঘোষণাপত্র বা প্রস্তাব পাশ হয় না। সব সদস্যেরই ভেটো দেবার অধিকার রয়েছে। ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে এর থেকে বেশি কিছু বলা তাই কঠিনই। 
অন্যদিকে, এতদিন বলা হচ্ছিল পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়েও ঐকমত্য হচ্ছে না। শনিবার হঠাৎই জানানো হয়েছে, ১০০ শতাংশ ঐকমত্য হয়ে গেছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, জি-২০ দেশগুলি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি তিনগুণ বৃদ্ধির চেষ্টা করবে। এই সঙ্গেই গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য শিখরে পৌঁছনোর সময়সীমা নির্ধারণের জন্য দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সমতা, বিভিন্ন জাতীয় পরিস্থিতি গণনার মধ্যে রাখা হবে। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে  উন্নয়নশীল দেশগুলি আরো সময় পাবে। পশ্চিমী দেশগুলি খুশি না হলেও এই সমঝোতা করা ছাড়া তাদের উপায় নেই। 
বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রশ্নে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাজকর্মকে উন্নত করার উল্লেখ রয়েছে। বস্তুত বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই সংস্থার নিয়মকানুন ক্রমাগতই লঙ্ঘিত হচ্ছে। এই লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে মূলত পশ্চিমী দেশগুলি থেকে। ৩৭ পাতার ঘোষণাপত্রে দারিদ্র্য ও অপুষ্টির সমস্যার কথা বলা হলেও নির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপের কথা নেই। তেমনই ‘দক্ষ’ শ্রমের পরিযানের কথা বলা হলেও বিশ্বব্যাপী বেকারি দূরীকরণে কী করা যেতে পারে তার কোনো দিশাই নেই। শিক্ষার ক্ষেত্রে ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে প্রযুক্তির প্রসারের কথা বলা হয়েছে। 
ঘোষণাপত্রে বহুপাক্ষিকতা, আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলির সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। মহিলাদের ক্ষমতায়নে উদ্যোগ নেবার কথা বলা রয়েছে। ব্রাজিল, চীনের মতো দেশ সদস্য থাকায় পরিবেশের সঙ্গে মানুষের ঐতিহ্যশালী বসবাসের কথা অন্তত ঘোষণাপত্রে রয়েছে। কিন্তু বহুচর্চিত এবং রূপায়ণ না হওয়া শব্দের ভিড়েই হারিয়ে গেছে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির তথাকথিত ঐক্যের ভবিষ্যৎ।  
তবে, একটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। আফ্রিকান ইউনিয়কে জি-২০-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই ঘোষণা হওয়ার পরে আফ্রিকান ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারপার্সন আজালি আসাউমালি এদিন বৈঠকে অংশও নেন। আফ্রিকান ইউনিয়ন ৫৫ দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। 
এই শীর্ষ বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, জার্মানির চ্যান্সেলর, ফরাসি প্রধানমন্ত্রী, যেমন উপস্থিত রয়েছেন তেমনই রাষ্ট্রসঙ্ঘ, আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষকর্তারাও হাজির আছেন।

 

Comments :0

Login to leave a comment