জানা অজানা | নতুনপাতা
প্রথম বসন্ত উৎসব
তপন কুমার বৈরাগ্য
ইতিহাস অনুযায়ী প্রথম বসন্ত উৎসবের প্রচলন করেন
শিখ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা রঞ্জিত সিংহ।রঞ্জিত সিংহ
১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই নভেম্বর পাকিস্তানের গুজরানওয়ালায়
জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৩৯খ্রিস্টাব্দের ২৭শে জুন তিনি
পাকিস্তানের লাহোরে মারা যান।তখন তাঁর বয়েস মাত্র ৫৮বছর।
তিনি একুশ বছর বয়েসে ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের ১২ই এপ্রিল
পাঞ্জাবের শাসনভার গ্রহণ করেন।১৮৩৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ
৩৮বছর পর্যন্ত তিনি তাঁর শাসনকার্য চালিয়ে যান।
তিনি ছিলেন এক মহান বীর।তিনি ছিলেন একজন সুশাসক।
সিংহাসনে বসেই তিনি বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন।রানীর নাম
মোরান। বিবাহের পর রানির ইচ্ছে অনুযায়ী ১৮০২খ্রিস্টাব্দে
বসন্ত উৎসবের সূচনা করেন।পাঞ্জাবের মালওয়া অঞ্চলে
প্রথম এই বসন্ত উৎসব হয়।ঘুড়ি উড়ানোকে কেন্দ্র করেই
তিনি এই অনুষ্ঠানের সূচনা করেন।সেদিন সকলের হাতে
ছিলো ঘুড়ি।সকলেই হলুদ পোশাকে সুসজ্জিত ছিলো।
সেখানে একটা মেলারও আয়োজন করেন।যে মেলায় বিক্রি
হতো দোলনা এবং নানারকম খাবার। রঞ্জিত সিংহের সেনাবাহিনীও
হলুদ পোষাকে সুসজ্জিত থাকতো এবং প্রত্যকের হাতে
হলুদ রঙের ঘুড়ি থাকতো।উৎসবের শেষে সকলেই রঙে রঙে রেঙে
উঠতো।বসন্তকালে অনুষ্ঠিত হতো বলে একে বসন্ত পঞ্চমীও
বলা হতো।আস্তে আস্তে এই উৎসব অমৃতসর,লাহোর,কাসুর,
শিয়ালকোট, গুজরানওয়ালা, গুরুদাসপুর,লাহোরে ছড়িয়ে
পড়ে।রঞ্জিত সিংহ এই উৎসবকে কেন্দ্র করে লাহোরে এক
দরবার বসাতেন। এই দরবার দশদিন ধরে চলতো।এখানে প্রজারা হলুদ পোষাক পরিধান করে মহারাজের কাছে যে কোনো বিষয়ে অভিযোগ জানাতো। রঞ্জিত সিংহ তাঁদের অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনতেন।তাঁদের সমস্ত সমস্যার সমাধান করতেন। এই উপলক্ষে লাহোরে দশদিন ধরে এক মেলা হতো।সেই মেলাতেও দোলনা এবং নানারকম মুখরোচক খাবার পাওয়া যেতো।
চতুর্থ শিখগুরু রামদাস ১৪৮৮খ্রিস্টাব্দে অমৃতসর স্বর্ণমন্দির
প্রতিষ্ঠা করেন। বসন্ত উৎসবের দিন রানি মোরান এবং রঞ্জিত
সিংহ এই অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে আসতেন এবঃ মন্দিরে প্রার্থনাসভায় যোগ দিতেন।প্রার্থনা শেষে হলুদ পোষাক পরে বসন্ত উৎসবে পালন করতেন।
বিংশশতকের তৃতীয় দশকে অর্থাৎ ১৯২৩খ্রিস্টাব্দে
বীরভূমজেলার শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের সূচনা হয়।
Comments :0