গল্প
আলাপ
সন্দীপ জানা
বুবুনদের বাড়ির উলটোদিকে এক বৃদ্ধা এসে উঠেছে কয়েকমাস হল। আসল নাম
না -জানলেও বাড়ির বড়োদের কাছে বুবুন শুনেছে তার নাম নমি। নিজের বলতে তার তেমন কেউ নেই। পাড়ার কারো সাথে তেমন বনিবনাও নেই। কেউ ওর সাথে তেমন একটা গল্পগুজব, মেলামেশা করে না। সেও থাকে নিজের মতো। নিজের মাটির ছোট্ট চালাঘরের চারিদিকে বাঁশ কঞ্চির বেড়া দিয়ে ঘেরা। রাস্তার পাশে বাখারির দরজাটা প্রায় বন্ধই থাকে। বেড়ার গা বেয়ে ওঠা লতানো সবজিগাছগুলোর ফল সারি দিয়ে ঝুলে থাকে। মাধবীলতা, অপরাজিতা জড়াজড়ি করে রাস্তার পাশে বাখারির দরজাটা দখল করে থাকে আর তার কোল আলো করে ফুটে থাকে লাল-সাদা-নীল বাহারি ফুলগুলো।
আজ কয়েকদিন আকাশের মুখ ভারী। মেঘের ঘনঘটা আর টানা বৃষ্টি।
বছরচারেকের বুবুন সারাদিন ঘরে বন্দি।মা এখন কোথাও তাকে বের হতে দেয় না। জানালার গ্রিলে মাথা রেখে সে রাস্তার ওপারে লতানো গাছের ফুলগুলো দেখছিল। একটা দুর্গা টুনটুনি তার লম্বা ঠোঁট একটা অপরাজিতার ভেতরে ঢুকিয়ে মধু খেয়ে উড়ে আবার পাশেরটাতে বসছে। নমি এতক্ষণ ভেতরে ছিল, বারান্দায় এবার তাকে দেখা গেল। বুবুন তাকে দেখে খিলখিল করে হেসে বলে , ‘ও দিদুন… দিদুন… কি কাজ করছ?’
নমি প্রথম একটু হকচকিয়ে গেল। তাকে কেউ ডাকল কি? কেউ তো কথা বলে না তার সাথে। বুবুন জানালার বাইরে হাত বাড়িয়ে বলে, ‘এই যে আমি… এই যে। তোমার গাছের দুটোফুল আমাকে দাও না’।
নমির গোমরা মুখে একঝলক হাসি ফুটে ওঠে। সে বলে, ‘কি ফুল চাই দাদা’?
বুবুন আঙুল বাড়িয়ে কোন্ ফুলের ইশারা করল বুঝতে না -পেরে সে একমুঠো মাধবীলতা বুবুনের সামনে মেলে ধরে, বুবুনের কানের দুপাশে দুটো নীল অপরাজিতা গুঁজে বলে, ‘একদিন বাড়িতে এসো দাদা। লাউ ফুলের বড়া খাওয়াব’।
বুবুনের সাথে নমির
আলাপ থেকে বেশ ভাব জমে গেল। সে কাজের ফাঁকে ফাঁকে বুবুনের সাথে এটা -ওটা গল্প করে। বুবুন বলে, ‘দিদুন, ব্যাংগুলো সবসময় এত ডাকে কেন?’ নমি বলে, ‘এখন ওদের ডিম পাড়ার সময়,তাই’।
-‘তুমি ব্যাঙের ডিম দেখেছ?’
-‘হ্যাঁ দাদা, আমার ঘরে এই এত্ত সোনাব্যাঙের ডিম আছে। একদিন এসো, দেখাব’। বুবুন হাততালি দিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। বৃষ্টি একটু থামলেই সে দিদুনের বাড়ি যাবে। সোনাব্যাঙের ডিম তার চাই-ই চাই।
Comments :0