VISHAKHA GUIDELINE for INFORMAL SECTOR

মহিলাদের বিশাখা কমিটি গড়াই
হয় না অসংগঠিত ক্ষেত্রে

জাতীয় রাজ্য

VISHAKHA GUIDELINE for INFORMAL SECTOR

দীপাঞ্জনা দাশগুপ্ত দে 

গ্রামের মহিলাদের একটি বড় অংশ কাজের জন্য শহরে কিংবা ভিন রাজ্যে যান। বিশেষ করে অসংগঠিত ক্ষেত্রে পরিযায়ী মহিলা শ্রমিকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। খেতমজুরি, মাছের ভেড়ি বা ইট ভাটার কাজে বহু মহিলা যুক্ত। 

পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার মহিলা ভিন রাজ্যে যান কাজ করতে। কেউ যান শহরের নির্মাণ ক্ষেত্রে কাজ করতে, কেউ হরিয়ানার খেতে কাজ করতে যান। আবার কেউ যান বিভিন্ন অসংগঠিত ক্ষেত্রে মজুরি করতে। ভারতের অর্থনীতিতে এঁদের অবদান কম নয়। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে এই অংশের মহিলারা কর্মক্ষেত্রে কতটা নিরাপদ। 

কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হয়রানির ঘটনা নতুন নয়। সেই কারণে ভারতে ‘বিশাখা গাইডলাইন’ বলে একটি বিধি রয়েছে। সে গাইডলাইনের ভিত্তিতে কোনও মহিলা কর্মক্ষেত্রে যৌন নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে দোষীকে চিহ্নিত করা এবং শাস্তির সংস্থান। শুধু মাত্র শারীরিক নয়, মানসিক ভাবে নির্যাতিত হলেও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব কর্মরত মহিলাদের। 

অফিস আদালতে কাজ করা মহিলারা কিছুটা জানলেও অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত মহিলাদের অধিকাংশই অজানা এই বিধি। এক সময় বিশাখা গাইডলাইনে শুধু মাত্র চাকুরিরতা মহিলাদেরই উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির লড়াইয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয় অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত মহিলাদের সমস্যাও। সুতরাং যাঁরা মাঠে-ঘাটে, ইটভাটায়, বা নির্মাণ শিল্পে, রাস্তা তৈরির জন্য ইট ভাঙার কাজ করে থাকেন রেল লাইনে মজুরি করে থাকেন, তাঁরাও আসেন বিশাখা গাইডলাইনের আওতায়। 

এখন বিষয়টি হচ্ছে বাংলার গ্রামের মহিলাদের একটি বড় অংশ যেমন পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁরা কাজের জায়গায় কতটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। রাজ্যর মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা হলেও তাঁর মুখে কোনও দিনও বিশাখা গাইডলাইন বা মহিলাদের নিরাপত্তা বিষয়ে কথা শোনা যায়নি। বরং ধর্ষণ হলেও তিনি সেটিকে ‘ছোট্ট ঘটনা’ বা ‘ছেলেরা ভুল করে ফেলেছে’ বলেই উল্লেখ করে থাকেন।

মহিলা আন্দোলনের নেত্রী এবং সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত বলছেন, ‘‘সরকারি অফিস বা বড়বড় কর্পোরেট অফিসগুলোতে আন্দোলনের মাধ্যমে বিশাখা গাইডলাইন মেনে কমিটি গঠন হয়েছে। কিন্তু যাঁরা গ্রামে কাজ করেন বা অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করেন সেই কর্মক্ষেত্র গুলিকে বিধির আওতায় আনা গেলেও কমিটি গঠিত হয়নি। স্থানীয় স্তরে বা জেলা স্তরে কমিটি গঠন করা কথা বলা হলেও সেটা একেবারেই গঠিত হয়নি।’’ 

অসংগঠিত ক্ষেত্রে মালিক ও শ্রমিকের সম্পর্ক অনেকটাই জটিল বলে উল্লেখ করেন বৃন্দা কারাত। তিনি বলেন, ‘‘এই সব ক্ষেত্রে কাজের চুক্তি অনেক সময় মৌখিক ভাবে হয়, বা ঠিকাদারের মাধ্যমে হয়, আবার কখনও চুক্তি হয়ও না। কিন্তু সেখানে একটি মেয়ে বা মহিলা কাজ করতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়লে তার অভিযোগ জানানোর কোনও জায়গাই নেই। সেই পরিকাঠামোই নেই। বিশেষ করে পশ্চিম বাংলার গ্রামের মহিলাদের কাজ করার জায়গায় আইনি বিধি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা বা তাঁর অধিকার সম্পর্কে অবগত করা ও বিশাখা গাইডলাইন মেনে কমিটি গঠন করার কোনও সরকারি পরিকাঠামো হয়নি।’ তিনি আরও জানান এই নিয়ে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে কাজ করছে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে অন্যান্য সব বিষয় নিয়ে প্রচারের পাশাপাশি মহিলাদের এই বিষয়ে অবগত করাও মহিলা সমিতির কাজ হবে।   

কী আছে এই গাইড লাইনে?

নির্দেশিকায় তিনটি বিষয়ের ওপর স্পষ্ট জোর দেওয়া হয়েছে। নিষেধ (প্রহিবিশন), প্রতিরোধ (প্রিভেনশন) এবং প্রতিকার (রিড্রেস)। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকায় বলা রয়েছে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হেনস্থা হলে অভিযোগ কমিটি গঠন করতে হবে। ২০১৩-এর আইন অনুযায়ী ১০ কিংবা তার বেশি সংখ্যক কর্মী রয়েছে এমন সংস্থার নিয়োগকর্তার ইন্টার্নাল কমপ্লেইন্টস কমিটি গঠন করা বাধ্যতামূলক। এই আইনের আওতায় পড়বে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত প্রতিটি মানুষ। শুধু মহিলা কর্মীই নয়, বিশেষ কোনো কাজে সংস্থায় এসেছেন এমন মহিলা থাকলে তিনিও এই আইন দ্বারা সুরক্ষিত।

যৌন হেনস্থার সংজ্ঞা ঠিক কী?

নীচে উল্লেখ করা আচরণগুলোর মধ্যে যে কোনো একটি হলেই কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা হিসেবে গ্রাহ্য হবে তা

১) শারীরিক ছোঁয়া এবং তার থেকে বেশি অবাঞ্ছিত আচরণ।

২) যৌন প্রশ্রয়ের দাবি

৩) যৌন মন্তব্য

৪) পর্নোগ্রাফি দেখতে বাধ্য করা

৫) যে কোনো মৌখিক, শারীরিক, আচরণগত যৌন হেনস্থা

৬) মহিলার যৌন জীবন নিয়ে বারবার অসংলগ্ন প্রশ্ন করা, মন্তব্য করা, আপত্তিজনক যৌনতাপূর্ণ এমএমএস, এসএমএস, ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপ, ছবি কিংবা পোস্টার দেখানো।

৭) যৌন পক্ষপাত দাবি করে কোনো মন্তব্য করা, হুমকি দেওয়া, প্রতিবাদ করলে তার উদ্দেশ্যে যৌন মন্তব্য করা

৮) যৌনতার মোড়কে সামাজিক আমন্ত্রণ, চলতি ভাষায় যাকে ‘ফ্লার্টিং’ বলা হয়ে থাকে। 

আসলে বিশাখা গাইড লাইন একটি নিছক লিখিত নিয়মাবলি হলেও এটি একটি কর্মরত মহিলার অস্ত্র। আজও বহু জায়গায় কর্মক্ষেত্রে মহিলারা যৌন হয়রানির শিকার হলেও কাজ যাওয়ার ভয়ে, সমাজের ভয়ে বা লোকলজ্জার ভয়ে সে কথা বলেন না। রাজস্থানের একটি ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তৈরি এই গাইড লাইন কাজের ক্ষেত্রে মহিলাদের যেমন সমতা এনে দিতে পারে তেমনি নির্ভয়ে আরও বহু মেয়ে কর্মক্ষেত্রে আসতে পারবে। 

Comments :0

Login to leave a comment