Post Editorial

গণশত্রুদের জনবিচ্ছিন্ন করতেই হবে

উত্তর সম্পাদকীয়​

অচিন্ত্য মল্লিক

১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসে ‘গণশত্রু’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল যা সারা পশ্চিমবাংলাকে দারুণভাবে আলোড়িত করেছিল। বিশ্ববরেণ্য চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় ছবিটির নির্মাতা। বর্তমান পরিস্থিতিতে হলে ছবিটি আলোর মুখ দেখতে পেত বলে মনে হয় না। অনেকেরই মনে আছে, ছবিটির মূল বিষয়বস্তু ছিল— ধর্মের মোড়কে সৃষ্ট অপবিজ্ঞান ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানকে প্রতিষ্ঠা করার লড়াই। অনেক বাধা, প্রতিকূলতা ও আক্রমণকে মোকাবিলা করেই বিজ্ঞানেরই জয় হয়েছিল ছবিটির শেষ পর্বে ।

 সেই প্রাচীন যুগ থেকেই ধর্মের নামে শাসকের দ্বারা বিজ্ঞানকে, বিজ্ঞানীদের হত্যার ইতিহাস তো সকলেরই জানা। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে এই সত্যকে, এই বিজ্ঞানকে প্রতিষ্ঠিত করতে যাওয়া ব্রুনোকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা, গ্যালিলিওকে সারাটা জীবন শাসকের কারাগারে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত কাটাতে হয়। কিন্তু এই মহান বিজ্ঞানীদের জীবনদানের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিজ্ঞান— পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। এরকম বহু উদাহরণ আছে। বর্তমান সময়ে আবার শাসকের পক্ষ থেকে বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে অপবিজ্ঞান, কুসংস্কারকে প্রতিষ্ঠিত করার ঘৃণ্য, নির্লজ্জ অপপ্রয়াস চলছে। আর এসব কিছু করা হচ্ছে, যার মূলে রয়েছে এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র। আজকের দিনের গণশত্রুদের সেই ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্নভিন্ন করতে হবে। এই সময়েও আমরা প্রত্যক্ষ করছি- অপবিজ্ঞান, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুক্তিবাদী মুক্তমনা বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ওপরে নজিরবিহীন আক্রমণ। এই আক্রমণকে প্রতিহত করতেই হবে। আমাদের মাতৃভূমি আজ বিপন্ন।

         চারিদিকে দেশজুড়ে হইচই চলছে, অযোধ্যা, রামমন্দির নিয়ে। সরকারি হিসাবেই এখানেই বিভিন্ন পরিকাঠামো নির্মাণে সরকার খরচ করেছে ৩৬ হাজার কোটি টাকা। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল মন্দির নির্মাণ ট্রাস্ট এই মন্দির নির্মাণ করবে। কিন্তু, আরএসএস পরিচালিত কেন্দ্রের মোদী সরকার ও উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকার এই মন্দির নির্মাণের কাজকে সরকারি কর্মসূচিতে পরিণত করেছে। উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকারের নির্দেশে রাজ্যের সমস্ত মন্দির এবং ধর্মীয় স্থানে পৌষ সংক্রান্তি থেকে চলছে পুজো পাঠের কর্মসূচি। আর প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং মন্দির উদ্বোধনের আগে দেশের সমস্ত মন্দিরে সাফাই কর্মসূচির আহ্বান জানানো থেকে শুরু করে উদ্বোধনের দিন দেশের সমস্ত বাড়িতে মোমবাতি, প্রদীপ জ্বালানোর ফরমান জারি কিসের ইঙ্গিত দেয় ? এরপরে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোর ন্যূনতম অস্তিত্ব বজায় থাকে কি? এর আগে কেন্দ্রের শাসকদলের পক্ষ থেকে গীতাপাঠের কর্মসূচি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। রাজ্যের শাসকদলের উদ্যোগে চণ্ডীপাঠের অনুষ্ঠানও দেখেছে রাজ্যের মানুষ। রামমন্দির নির্মাণ ও তাকে ঘিরে পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য বন্দুকের নলের মুখে হাজার হাজার মানুষকে তাদের জমি-বাড়ি-ব্যবসা কেন্দ্র থেকে উৎখাত করা হয়েছে। কোনও আলোচনা ছাড়াই সরকার তাদের নির্ধারিত ইচ্ছে মতো দরে জমি দিতে বাধ্য করেছে। এখন আবার মন্দিরকে ঘিরে পর্যটনের আশায় সড়ক, সেতু, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন মিলিয়ে বিপুল পরিকাঠামো দেখে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী সহ জমি মাফিয়ারা অযোধ্যা এবং সংলগ্ন এলাকায় কার্যত গায়ের জোরে সাধারণ মানুষকে তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করতে বিপুল তৎপরতা চালাচ্ছে। আর এসবই চলছে সরকার, প্রশাসন এবং শাসকদলের প্রত্যক্ষ মদতে। এরই পাশাপাশি মেনস্ট্রিম মিডিয়াতে মন্দির নির্মাণের ঢাক পেটানো চলছে। কিন্তু মন্দির আর অযোধ্যার পরিকাঠামো তৈরির পিছনে অন্ধকার দিকগুলোকে সামনে আনা হচ্ছে না। সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে অযোধ্যার উন্নয়নকে মহিমান্বিত করতে তৎপর সরকার এবং তাদের পোষিত সংবাদ মাধ্যম। কি চেহারা বর্তমানে অযোধ্যা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায়? কিছুদিন আগেও ঐ এলাকাতে ডেঙ্গু প্রায় মহামারীর চেহারা নিয়েছিল। মন্দির তৈরি করতে গিয়ে গত তিন-চারবছর ধরে বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর, পাথর খোদাই এবং অন্যান্য কাজের জেরে দূষণের মাত্রা দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকাকে ছাড়িয়ে যাবার খবর হিন্দি সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে। আর এর ফলে হৃদরোগ আর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা স্থায়ী রোগের আকার নিয়েছে । নেই উপযুক্ত সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা। স্বভাবতই ওখানকার মানুষ ভয়ানক বিপদের সম্মুখীন ।

         কিছুদিন আগে ব্রিগেড ময়দানে কয়েক হাজার মানুষকে জড়ো করে গীতাপাঠের অনুষ্ঠান হলো কেন্দ্রের শাসকদলের প্রত্যক্ষ মদতে। অন্যদিকে, রাজ্যের শাসকদলও নেমে পড়লো চণ্ডীপাঠের অনুষ্ঠানে। এসবের উদ্দেশ্য কি? জনগণকে বোকা বানাতে শাসকের ঘৃণ্য অপপ্রয়াস। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে রামমন্দির নির্মাণের কাজ শেষ হতে আরও চার-পাঁচ বছর লেগে যাবে। তাহলে উদ্বোধনের জন্য এত তাড়াহুড়ো করা হলো কেন? কেন উদ্বোধনী কর্মসূচি নিয়ে প্রচারের জয়ঢাক বাজানো হলো?  এ সম্পর্কে পরে আলোচনায় আসা যাবে। এর আগে আমাদের রাজ্যের শাসক দলের ভূমিকাটা দেখে নেওয়া যেতে পারে। কেন্দ্রের সরকার যেমন রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে ব্যবহার করে রামমন্দির গড়ে তুলতে ব্যস্ত, আমাদের রাজ্য সরকারও একইভাবে সরকারি কোষাগার থেকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যয় করে চলেছে শুধু তাই নয়, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী হিন্দু ধর্মীয় স্থানের জন্য ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন বলে প্রচারের দামামা বাজাচ্ছেন ।

         কেন্দ্রীয় সরকার যেমন অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণে ব্যস্ত, এখন এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও সরকারি তহবিলের টাকায় দীঘায় পুরীর ধাঁচে জগন্নাথের মন্দির তৈরি করতে সমানভাবেই সক্রিয়। এখানেও জগন্নাথের মন্দির নির্মাণের জন্য অনেকগুলো পরিবারকে বাস্তুচ্যুত করে অস্বাস্থ্যকর ফুটপাতে পাঠিয়ে দিয়েছেন— কোনও ক্ষতিপূরণ কিংবা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছাড়াই। এর পরে ঐ এলাকার মানুষের আরও কত দুর্গতি আছে কে জানে? শুধু জগন্নাথমন্দির নয়, দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট সহ অনেক ধর্মীয় স্থানের উন্নয়নের কাজের ঘোষণা হয়েছে। হয়তো যে কোনও দিন জগন্নাথের অসম্পূর্ণ মন্দিরও উদ্বোধনের দিন ঘোষণা করা হবে। প্রতিযোগিতা চলছে ধর্ম নিয়ে ।

         কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকারি কোষাগারের টাকায় কোনও একটা নির্দিষ্ট ধর্মের ধর্মীয় স্থান গড়ে তোলা যায় কি? মন্দির গড়ে তোলা সরকারের কাজের আওতার মধ্যে পড়ে কি? যে কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এই কাজে সম্মতি দিতে পারেন না। কিন্তু দেশ ও রাজ্যের সরকার নির্বিকারভাবে এই কাজে তাদের কৃতিত্ব জাহির করে চলেছে যেন তাদের মতো উন্নয়নের কারিগর আর কে আছে ?

         কমরেড জ্যোতি বসু বারবার বলতেন, ‘‘যার যা ধর্ম নিজের মতো করে পালন করবেন । কিন্তু রাজনীতির সাথে ধর্মকে মেশাবেন না।’’ বর্তমান সময়ে রামমন্দির কিংবা জগন্নাথমন্দিরকে ঘিরে যা চলছে তা থেকে ধর্মের রাজনীতিকরণ কিংবা রাজনীতির ধর্মীয়করণের আর বড় উদাহরণ কি হতে পারে ? এ ধরনের মন্দির নির্মাণের মধ্যে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার মূল ভিত্তিকেই ধবংস করাই লক্ষ্য । ধর্মনিরপেক্ষতা ধবংস হলে গণতন্ত্রের হত্যা হয়। বিপরীতে গণতন্ত্র না থাকলে ধর্মনিরপেক্ষতাও ধবংস হয় । ফলে, এই ঘটনার সামগ্রিক মূল্যায়নে একথা বলা অতিরিক্ত হবে না, দেশ এবং আমাদের রাজ্যকে এক ভয়ঙ্কর বিপদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে মোদী এবং মমতা ব্যানার্জির সরকার ।

         কিন্তু, আগেই প্রশ্ন রাখা হয়েছে কেন এত তাড়াহুড়ো করা হলো  মন্দির উদ্বোধনের জন্য ? দেশের লোকসভা নির্বাচন আসন্ন। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে রামমন্দির আর হিন্দুত্বই একমাত্র সম্বল মনে করছেন কেন্দ্রের শাসক দল। আর এই প্রেক্ষাপটেই রাজ্য সরকারও ধর্মকে অবলম্বন করে ভোটের ময়দানে নামতে চাইছে। রাজনীতির ময়দানকে হিন্দুত্ব এবং ধর্মের ময়দানে পরিণত করতে চাইছে মোদী-মমতার দুই সরকার ।

         নয়া উদারনীতির আগ্রাসী বাস্তবায়নের ফলে দেশ জুড়ে মানুষের রুটি-রুজির অধিকার বিপন্ন । বেকারি বৃদ্ধির হার লাগাম ছাড়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির গতি প্রতিদিন তীব্রতর হচ্ছে। ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা দেশে ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে। দারিদ্র ক্রমবর্ধমান, বাড়ছে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রগুলিকে দ্রুত বেসরকারিকরণের পথে পরিচালিত করতে তাদের নীতি ও উদ্যোগ গ্রহণ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। দেশের মানুষের কাছে মোদী সরকারের স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে পড়েছে। জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে প্রতিদিন।পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে তিনটি রাজ্যে বিজেপি সরকার গঠন করলেও শতাংশের বিচারে তাদের জনসমর্থন বাড়েনি শুধু তাই নয়, এই নির্বাচনগুলির ফলাফলের বিচারে গতবারের তুলনায় লোকসভার আসন তাদের কমেছে। এই সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে যেখানে উপনির্বাচন হয়েছে— বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজেপি’র পরাজয় ঘটেছে। ফলে লোকসভা নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কিত ফ্যাসিবাদী চরিত্রের আরএসএস দ্বারা পরিচালিত কর্পোরেট সাম্প্রদায়িক মিশেলে তৈরি বিজেপি সরকার। দেশের বহুত্ববাদী, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতন্ত্রকে ধবংস করতে তারা তৎপর। সংবিধানের মূল চারটি স্তম্ভ ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব, সামাজিক ন্যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভাঙার লক্ষ্যে বর্তমান সময়ে যেমন সক্রিয়, সমানভাবে তারা তৎপর হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। আর সেই জন্য ইতিহাসের বিকৃতি করা হচ্ছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। বিজ্ঞানবিরোধী যুক্তিহীনতা, কূপমণ্ডুকতা, কুসংস্কার এবং অপবিজ্ঞানের স্রোতে মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। আর এসব কিছুর মধ্যে দিয়ে বিভাজনের রাজনীতির মাটি তৈরি করতে চাইছে। সংখ্যালঘুদের অধিকার ও জীবনের উপর ভয়ঙ্কর আক্রমণ চলছে। রামমন্দির নির্মাণ ও তার উদ্বোধনকে ঘিরে দেশজুড়ে যে হইচই করা হলো তা আরএসএস পরিচালিত বিজেপি সরকারের পরিকল্পিত কর্মসূচি ।

         রামমন্দির উদ্বোধনের দিন ছুটি দেওয়া নিয়ে পলিট ব্যুরোর বিবৃতি উল্লেখ করা প্রয়োজন । ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষে সরকারি অফিস, কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান বেলা আড়াইটা পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার এবং দেশের সংবিধান লঙ্ঘন ও দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর আরও একবার কুঠারাঘাত ।

         বিগত ১২ বছর ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনকালে রাজ্যজুড়ে সর্বস্তরে দুর্নীতির রেকর্ড তৈরি করেছে শাসকদল। শাসকদল ও সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত অভূতপূর্ব দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি, রেশনের খাদ্য নিয়ে দুর্নীতি, পঞ্চায়েত-পৌরসভার উন্নয়ন নিয়ে দুর্নীতি সর্বজনবিদিত। সরকার এবং শাসকদল যে আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত তা মানুষের কাছে আজ বলার অপেক্ষা রাখে না— প্রতিষ্ঠিত সত্য। কার্যত মানুষের জীবনকে নিয়ে এককথায় ছিনিমিনি খেলছে তৃণমূল কংগ্রেস ও সরকার। সরকারে আসীন হওয়ার প্রথম দিন থেকেই সর্বস্তরের মানুষের অধিকারের উপর আক্রমণ এবং গণতন্ত্রের হত্যালীলা নিত্যনতুন নজির তৈরি করছে। সমস্ত নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। সর্বশেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর ভয়ঙ্কর আক্রমণ মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন। অন্যদিকে মানুষের জীবনের সঙ্কট, জীবন-যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। ফলে তৃণমূলের স্বরূপ মানুষের কাছে প্রতিদিন স্পষ্টতর হচ্ছে। আর সামগ্রিক ফলশ্রুতিতে তাদেরও জনবিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ‘বাইনারি’ তত্ত্বের বিপরীতে বামপন্থাই প্রকৃত বিকল্প মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। সাম্প্রতিক যৌবনের ডাকে জনগণের ব্রিগেড সমাবেশ রাজ্যের পরিস্থিতিতে নতুন বার্তা নিয়ে এসেছে। তাই তৃণমূল কংগ্রেসও আশঙ্কিত। মানুষের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ধর্মের ওপর ভরসা করে নির্বাচনে যেতে চাইছে। আর সে কারণেই ধর্ম নিয়ে বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে চলছে নিকৃষ্ট প্রতিযোগিতা। তাই তৃণমূল কংগ্রেস রামমন্দির কর্মসূচির প্রকাশ্য বিরোধিতা করতে না পেরে কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিয়ে মিছিলের কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। ‘বাইনারি’ তত্ত্বকে পুষ্ট করতেই তাদের এই কর্মসূচি। বিজেপি’র মতো তারাও বিজ্ঞানমনস্কতা বিরোধী অপবিজ্ঞান, কুসংস্কার, কূপমণ্ডুকতার প্রচারে শামিল হয়েছে ।

         বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস দু’দলই ক্ষমতায় টিকে থাকতে মানুষকে তার দুঃখ-কষ্ট, না পাওয়া, জীবনযন্ত্রণাকে ভুলিয়ে মানুষকে ধর্মের মোহে বেঁধে রাখতে চাইছে । এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে দেশজুড়ে, সর্বস্তরের মানুষের আন্দোলনের শক্তি বাড়ছে। রাজ্যের মানুষের কাছেও ভরসাস্থল হয়ে উঠছে লাল ঝান্ডা। আর সে কারণেই বিজেপি, তৃণমূল এবং এই দু'দলের জন্মদাতা আরএসএস লাল ঝান্ডাকে আক্রমণের লক্ষ্য হিসাবে চিহ্ণিত করে সেই লক্ষ্যেই তাদের কর্মসূচি পরিচালিত করছে। বিজেপি এবং তৃণমূল এই দু'দলই প্রকৃত বাস্তবে ‘গণশত্রু’। নয়া উদারনীতির নিকৃষ্ট চেহারা ধান্দার ধনতন্ত্রের আক্রমণ থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে দেশের মানুষের রুটি-রুজির অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে কেন্দ্রের জনবিরোধী সরকারকে অপসারিত করতেই হবে। কেন্দ্রের বিজেপি ও রাজ্যের তৃণমূলের ‘বাইনারি’ ভাঙতে লাগাতার আন্দোলন-সংগ্রাম এবং তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সাংগঠনিক কাজই একমাত্র বিকল্প । বাম-গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমস্ত শক্তির ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। মানুষের ঐক্য, সম্প্রীতি-সংস্কৃতি, জীবন-জীবিকা রক্ষার জন্য আমাদের রাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূল দু'দলকেই পরাস্ত করতে হবে। বিজেপি আর তৃণমূল এই দুই ‘গণশত্রু'কে জনবিচ্ছিন্ন করতেই হবে। দেশকে বাঁচাতে, দেশের মানুষকে রক্ষা করতে বর্তমান সময়ে এই জরুরি কর্তব্যই আমাদের সামনে হাজির হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment