Potato farming

অভাবী বিক্রির থেকেও কম দামে আলু কিনবে রাজ্য

রাজ্য

অভাবী বিক্রির থেকেও কম দাম দিয়ে আলু কিনবে রাজ্য সরকার!
অভাবী বিক্রির হাত থেকে কৃষকদের বাঁচাতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করে সরকার। এরাজ্যে মমতা ব্যানার্জির সরকার অভাবী বিক্রির দামের থেকেও নিচে বেঁধে দিয়েছে সরকারের তরফে আলু কেনার সহায়ক মূল্য। 
মরশুমের শুরু থেকেই মাঠে আলুর দাম ছিল তলানিতে। লাভজনক দর তো দূর অস্ত, উৎপাদনের খরচটুকুও উঠছিল না কৃষকদের। ইতিমধ্যে আলু চাষ করে ঋণে জর্জরিত হয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন চার আলুচাষি। মার্চ মাসেই রাজ্যের আলু চাষের জেলায় জ্যোতি আলু ওঠে। হিমঘরে যাওয়ার জন্য সেই আলুর মাঠের দাম এখন কেজি প্রতি ৭টাকা থেকে ৮টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। 
এই দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হওয়া কৃষকদের বক্তব্য, এতে চাষের খরচও উঠবে না। আলুচাষিদের এহেন সঙ্গীন পরিস্থিতিতে সরকার কৃষকদের কাছ থেকে আলু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্য সরকার ঠিক করেছে, ৬টাকা ৫০ পয়সা কেজি দর দিয়ে আলু কিনবে। মাঠে অভাবী বিক্রির থেকেও নিচে ‘কৃষকদরদি’ রাজ্য সরকারের আলু কেনার সহায়ক মূল্য। 
সরকারের সহায়ক মূল্যের দাম জানার পর হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের এক আলুচাষির প্রতিক্রিয়া,‘‘বাজারে আলুর দাম এখন ৪২০টাকা বস্তা(৫০ কেজি)। সরকার তো জানে না, আলু চাষ করতে কত খরচা হয়েছে। ওরা(সরকার) বোধ হয় জানে, আলুটা ওমনি ছিঁড়ে জমিতে বসিয়ে দিয়েছি।’’ আলু চাষের সময় ১ হাজার টাকার সার ২হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। আলু বীজ যখন দরকার ছিল, তখন ৩ হাজার টাকা দাম দিতে হয়েছিল। ক্ষুব্ধ কৃষকরা জানিয়ে দিচ্ছে, কোনও হিসাব করে সরকার আলু কেনার দাম সাড়ে ৬টাকা কেজি করলো!
শুধু সহায়ক মূল্যে ঘোষণা করেই কৃষকদের জ্বলন্ত সমস্যার সঙ্গে পরিহাস করে থামেনি নবান্ন। চলতি বছরে রাজ্যের কৃষি বিপণন দপ্তরের পক্ষ থেকে ‘পটেটো প্রক্রিয়রমেন্ট স্কিম-২০২৩’ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, এবার রাজ্যে প্রায় ১৪০ লক্ষ টন আলু উৎপাদন হতে পারে। সাড়ে ৬টাকা কেজি প্রতি দর দিয়ে, সরকার মাত্র ১০ লক্ষ টন আলু কৃষকদের থেকে কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে উৎপাদনের মাত্র ৭ শতাংশ আলু সরকার কিনবে বলে ঠিক করেছে। রাজ্যের সাড়ে ৪০০র কাছাকাছি হিমঘরে ১৫ শতাংশ এলাকা সরকার নিজে সংরক্ষিত রাখতে পারে। সেই হিসাবে রাজ্য সরকার প্রায় ৭০লক্ষ টন আলু কিনে সংরক্ষণ করতেই পারে। কিন্তু সরকার মাত্র ১০লক্ষ টন আলু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। 
আসলে যে দাম সরকার ঠিক করছে, ওই দামে কোনও কৃষকই সরকারের কাছে আলু বিক্রি করতে যাবে না। ফলে কৃষি বিপণন দপ্তরকে শেষ পর্যন্ত আলু কিনতেই হবে না। আর মার্চ মাসের মধ্যেই মাঠ থেকে আলু ওঠে ইতিমধ্যেই হিমঘরে পৌঁছে যাওয়া শুরু হয়ে গেছে। আলুচাষিদের কার্যত সর্বনাশের দিকে ঠেলে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে মা মাটি মানুষের সরকার। 
নবান্নের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভার সভাপতি বিপ্লব মজুমদার জানান,‘‘আমরা চাইছি সরকার আলু কিনতে নামুক। কিন্তু সরকার এমন একটা দর দিয়েছে যে দামে কেউ সরকারকে আলু বিক্রি করবে না। মতলব করেই সরকার এই দাম রেখেছে। সরকারের উচিত ছিল ১২০০টাকা কুইন্টাল দর দিয়ে আলু কেনার। বামপন্থীদের বিরোধিতা যদি করতেই হয় তাহলে আমাদের দাবির থেকে বেশি দাম দিয়ে সরকারের আলু কেনা উচিত। না চাইতেই যদি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিতে পারে। তাহলে কেন ৬৫০টাকা কুইন্টালের জায়গায় ১২০০-১৫০০টাকা দর দিয়ে সরকার আলু কিনবে না?’’ 
সরকারের কাছে ন্যূনতম ১০টাকা কেজি দরে আলু কেনার দাবি জানিয়ে শনিবারই জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কের অন্তত ৮০টি রাস্তায় অবরোধ করে রেখেছিলেন কৃষকরা। কৃষকসভার বক্তব্য, সরকার যদি ন্যূনতম ১০টাকা কেজি দর দিয়ে আলু কিনে হিমঘরে রাখে তাতে আলুর বাজার চাঙ্গা হবে। কৃষকরা ভালো দাম পাবে। আর সরকারি আলু হিমঘর থেকে বাজারে আসার পর ২০টাকা কেজি দর দিয়ে সাধারণ মানুষও আলু কিনতে পারবে। কিন্তু কৃষক থেকে সাধারণ মানুষ, শেষ পর্যন্ত কারোর পাশে মমতা ব্যানার্জির সরকার থাকতে চাইছে না। 
কৃষি বিপণন দপ্তরে আলুর সহায়ক মূল্য ঘোষণার নির্দেশিকাতে মেনে নেওয়া হয়েছে, এবারে আলুর দাম উৎপাদন খরচের থেকে ঢের নিচে। চলতি মাসে রাজ্যের আলু উৎপাদনের জেলাগুলি থেকে আলু ওঠার সময় এই দাম আরও নিচে নামবে। এটা অনুমান যে সঠিক তা জানিয়ে কৃষকরাই বলছেন, ‘‘অন্যবারের থেকে এবারে আলুর ফলন কম। দামের জন্য পাঞ্জাব বীজ কৃষকরা বসাতে পারেনি। এরাজ্যের হিমঘরের বীজেই চাষ হয়েছে। এবারে বিঘাতে গড় ৬০বস্তা আলু হয়েছে। তাতে বিঘাতে ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকার আলুর দাম পাচ্ছেন কৃষক। অথচ খরচ হয়েছে ২৯ হাজার টাকা। ১০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।’’  
এই অনুমানের পরও কীভাবে সরকার সহায়ক মূল্যে কেজি প্রতি সাড়ে ৬টাকায় বেঁধে দেয়, তা নিয়ে বিস্মিত রাজ্যের কৃষি বিশেষজ্ঞরাও। কৃষকের আলু চাষের উৎপাদন খরচ, শ্রম, বাজার থেকে নেওয়া টাকার সুদ— কোনও হিসাবকেই মান্যতা দেওয়া হয়নি সহায়ক মূল্য ঘোষণায়।

Comments :0

Login to leave a comment