Guillain Barre Syndrome Death

জিবিএস-এ আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে মৃত আরও দুই

রাজ্য জেলা

বাদিকে সতীনাথ লোহারের প্রেসক্রিপশনের ছবি। ডানদিকে মৃত দেবকুমার সাউ।

গুলেন বেরি সিনড্রোম বা জিবিএস-এ রাজ্যে ফের মৃত্যু দুই জনের। একজন জগদ্দল থানার আতপুরে ভাটপাড়া পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেওকুমার সাউ (১০)। অপরজন হুগলীর গুড়াপের বাসিন্দা সতীনাথ লোহার (৪৮) মারা গিয়েছেন এই রোগেই। এর আগে এনআরএস হাসপাতালে আমডাঙার ছাত্র অরিত্র মণ্ডলের মৃত্যু হয়েছে গুলেন বেরি সিনড্রোমে। ডেথ সার্টিফিকেটেও সেপটিক শক, গুলেন বেরি সিনড্রোমের উল্লেখ ছিল।
জগদ্দলের বছর দশের ওই কিশোর দেওকুমার সাউ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কলকাতার বিসি রায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। গুড়াপের সতীনাথ লোহার (৪৮)’র মৃত্যু হয়েছে কলকাতার হাসপাতালে। তাঁর উপসর্গ দেখে গুলেন বেরি সন্দেহ করেন স্থানীয় চিকিৎসক। প্রেসক্রিপশনে লেখেন সেকথা। এই চিকিৎসক জানান, সতীনাথ লোহার যখন আসেন তখন দেখি তার হাত, পা অসার। পরিবার জানিয়েছিল এক সপ্তাহ আগে ডাইরিয়া হয়।‌ তখন নিজেরা ওষুধ কিনে খান। ডায়রিয়া ঠিক হয়ে যাবার একদিন পর থেকেই তার হাত পা ঠিক ঠাক কাজ করছিল না। তারপর থেকে অসুস্থতা আরও বাড়তে থাকে। স্ট্রোক হয়েছে অনুমান করে ধনিয়াখালি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসে পরিবার। সেখান থেকে কলকাতায় রেফার করে। রোগীকে দেখে ও পরিবারের কাছে রোগের বিবরণ শুনে আশঙ্কা করা হয় এটা গুলেন বেরি সিন্ড্রোম হলেও হতে পারে। কলকাতায় পাঠানোর সময়েই তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স জোগার করে তাঁকে কলকাতায় আনা হয়। 
মৃতের ভাইপো ধীমান লোহার জানান, ‘‘জেঠু ট্রাক্টর চালাতেন। কয়দিন অসুস্থ ছিলেন। ডায়রিয়া হওয়ায় ওষুধ কিনে খান। ঠিক হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ মঙ্গলবার থেকে বাড়াবাড়ি হয়। হাত পা পড়ে যায়। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন ধনিয়াখালি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসা শুরু হলেও বাঁচানো যায়নি জেঠুকে। চিকিৎসকরা জানান জেঠুর মৃত্যু হয়েছে।’’ 
এই রোগে মৃত জগদ্দলের কিশোর দেওকুমার সাউয়ের পরিবার জানিয়েছে যে ১৫ জানুয়ারি থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন দেও কুমার। ১৭ জানুয়ারি তাকে ভর্তি করা হয় বেলেঘাটা শিশু হাসপাতালে। গলা ব্যথা হওয়ায় বিসি রায় শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল। সেখানেই বুধবার মৃত্যু হয়। এই খবরে আতঙ্ক ছড়ায় ভাটপাড়া আতপুর অঞ্চল জুড়ে। বাড়িতে ছুটে আছেন পারা পৌরসভার মেডিকেল অফিসার ও স্বার্থকর্মীরা। বৃহস্পতিবার থেকে আতপুর অঞ্চলের অর্থাৎ যে অঞ্চলে ওই কিশোরের বাড়ি সেই অঞ্চলের ১০০ জন শিশুরকে পরীক্ষা করা হবে। তারপর সে যেই স্কুলে পড়তো সেই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা করা হবে। যদিও স্বার্থকর্মীরা বলছেন এটা নিয়ে আতঙ্ক হওয়ার কোন ব্যাপার নেই। তবুও আশা কর্মীদের দিয়ে এলাকায় ক্যাম্প চালাবে ভাটপাড়া পৌরসভা।
ধিধান চন্দ্র রায় শিশু হাসপাতাল সূত্রে খবর এখনও সেখানে ২ শিশু গুলেন বেরি সিনড্রোমের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত অন্য দুই শিশুর চিকিৎসা চলছে কলকাতার পার্ক সার্কাসে ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথে। 
মহারাষ্ট্রের পুনেতে এই রোগে শতাধিক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। একজনের মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এই সংক্রামক স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩। 
গুড়াপের সতীনাথ লোহারের মৃত্যুর প্রসঙ্গে হুগলি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মৃগাঙ্ক মৌলি কর জানান, ‘‘পরীক্ষা না হলে বলা সম্ভব না গুলেন বেরি হয়েছিল কিনা।’’
 

Comments :0

Login to leave a comment