MAMATA DA

কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, চাকরি বাতিলের
সঙ্গে ডিএ’র সম্পর্ক কী?
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রশ্ন কর্মচারীদের

রাজ্য

‘ডিএ’র দাবিতে আন্দোলনের জন্য ৩৬ হাজারের চাকরি গিয়েছে’। ‘ডিএ ঐচ্ছিক’। ‘সব জায়গায় কোঅর্ডিনেশন কমিটি ঢুকে রয়েছে’। ‘কেন্দ্রের মতো ডিএ চাইলে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি করুন’। ‘৫-৬ লক্ষ পদে নিয়োগ করা যাচ্ছে না, বেকাররা কাজ পাচ্ছে না’। ‘ডিএ চাইলে কেন্দ্রের থেকে টাকা এনে দিন’। 

হুমকি দিলেন আন্দোলনরত সরকারি কর্মীদের। জুড়ে দিলেন শিক্ষায় বেনিয়মের নিয়োগের দায়ে চাকরি বাতিলের নির্দেশকেও। সোমবার এমনই বিভিন্ন মন্তব্য করে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এক প্রশ্নে মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছেন যে এ মাসের শেষে নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি যাচ্ছেন।

রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন কোঅর্ডিনেশন কমিটি একাধিক প্রশ্ন তুলেছে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বলেছেন, ‘‘মহার্ঘভাতা ঐচ্ছিক নয়। এটা কর্মচারীদের অধিকার। দেশের সব রাজ্যে সর্বভারতীয় ক্রেতা মূল্য সূচকের নিরিখে তা ঠিক হয়। সব রাজ্যেই এই নিরিখে ডিএ দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গে তা দেওয়া হচ্ছে না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে অন্য অংশের বিচ্ছিন্নতা তৈরি করতে চাইছে রাজ্য সরকার।’’

কেন্দ্রের বকেয়ার যুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সরকারি কর্মচারীরা। গুপ্ত চৌধুরী বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় প্রকল্প এবং নির্দিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে অনুদান পাঠায়। ডিএ বা মহার্ঘভাতা দেওয়ার দায়িত্ব রাজ্যের, তার নিজস্ব আয় থেকে। ডিএ বকেয়ার সঙ্গে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার যুক্তি দেওয়া যায় না।’’ 

কোঅর্ডিনেশন কমিটি মনে করাচ্ছে যে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকেও কর্মচারীদের বক্তব্য নির্দিষ্ট যুক্তি দিয়ে তুলে ধরা হয়েছিল। রাজ্যজুড়ে কয়লা থেকে বালির মতো একের পর এক পাচারচক্র নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন সরকারি কর্মচারীরা। তাঁরা বলছেন, পাচার হওয়া মানে সরকারি কোষাগারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। এই ফাঁকি বন্ধ করলে আয় বাড়তে পারে রাজ্য সরকারের। তা থেকে কর্মচারীদের বকেয়াও মিটিয়ে দেওয়া যায়। 

সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের প্রসঙ্গ তোলেন প্রথমেই। গত শুক্রবার বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি প্রাথমিকে ৩৬ হাজার চাকরি বাতিল করেছেন বেনিয়মের দায়ে। নিয়োগের সময় এই অংশের প্রশিক্ষণ ছিল না। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ৬ হাজারের চাকরি বহাল রাখে আদালত। 

সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ হাইকোর্টে ডিভিশন বেঞ্চে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে মামলাও দায়ের করেছে। টেট উত্তীর্ণ কিন্তু ২০১৪’তে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে চাকরি না পাওয়া প্রার্থীরা দীর্ঘদিন আন্দোলনে। তাঁরাই জানিয়েছেন, ইন্টারভিউ হয়েছে কোনক্রমে। হাতে কলমে পরীক্ষার ‘অ্যাপটিচিউড টেস্ট’ হয়নি। রাজ্যে বহু প্রশিক্ষিত থাকা সত্ত্বেও ৪২ হাজার পদে প্রশিক্ষণবিহীন ৩৬ হাজার নিয়োগ কেন এই প্রশ্ন ঘুরছে সর্বত্র। চাকরি বাতিলের রায়ের জন্যও ডিএ আন্দোলনকে দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। 

গুপ্ত চৌধুরী বলেছেন, ‘‘সরকারি কর্মচারীদের সব অংশ বারবার শূন্য পদে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি তুলেছেন। আদালত চাকরি বাতিল করেছে কারণ বিচারপতি মনে করেছেন নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতিতে দায়ী কারা তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের।’’ ডিএ আন্দোলনের সঙ্গে টেট দুর্নীতি মামলায় চাকরি বাতিলের রায়ের সম্পর্ক যে আদৌ নেই, সে কথাও বলেছেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন কর্মচারী আন্দোলনকে হুঁশিয়ারি দিলেও কোঅর্ডিনেশন কমিটির বক্তব্য আন্দোলন আরও জোরদার হবে। 

Comments :0

Login to leave a comment