জানা অজানা
রায়নার গোপালপুরের সাপ নিয়ে লোকাচার
তপন কুমার বৈরাগ্য
পূর্ববর্ধমান জেলার রায়না থানার গোপালপুর
একটা গ্রাম।গ্রামটিকে প্রকৃতি যেন নিজের হাতে
সাজিয়ে দিয়েছে।জোগ্রাম স্টেশন এবং রায়না
থেকে সড়ক পথে যাওয়া যায়। শ্রাবণ মাসের
সংক্রান্তির দিন এখানে বাংলার ঐতিহ্যময় মনসা
দেবীর পুজা উপলক্ষে বিরাট মেলা বসে।
দুদিন ধরে এই মেলা চলে। দক্ষিণ দামোদর এলাকার
লেকেরা এই মেলায় উপস্থিত হয়।তা ছাড়া পশ্চিম
বঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এই মেলা দেখতে মানুষ ভীড় করে।
এখানকার মেলার একটা বৈশিষ্ট আছে।সাপেরখেলা।
সাপুড়িয়ারা বিভিন্ন বিষাক্ত সাপ নিয়ে তাদের খেলা
দেখায়।যারা প্রথম দ্বিতীয় এবং তৃতীয় হয় তাদের
পুরস্কৃতও করা হয়। সাপ নিয়ে এখানে প্রতিদিন আলোচনা
চক্র,নাটক ,মনসার গান অনুষ্ঠিত হয়।তাতে মানুষকে
সতর্ক করা হয় যাতে এই প্রকৃতির সম্পদ সাপ যেন
কেউ অকারণে মেরে না ফেলে।সাপে কামড়ালে
যেন রোজার কাছে না নিয়ে গিয়ে সরাসরি হাসপাতালে
নিয়ে যাওয়া হয়। সাপের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
সাপ মারা দন্ডনীয় অপরাধ।এই মেলায় এলে সত্যিই
মানুষ সাপকে শত্রু ভাববে না। মেলায় দোকানদাররা
নানারকম পসরা সাজিয়ে বসে।নাগরদোলা, সার্কাস,
পুতুলনাচ কত কি বসে।এ মেলা যেন মানুষের মিলন মেলা ।
এখানে কেউ বড় কেউ ছোট নয়।সকল সম্প্রদায়ের
মানুষ এখানে আসে প্রাণের বন্ধনে আবদ্ধ হতে।
৭৬বছর ধরে এই মেলা চলছে।এই মেলার খ্যাতি
দিনের পর দিন বেড়ে ওঠার কারণ সত্যকে জনসমক্ষে
তুলে ধরা। এই মেলা উদ্বোধনে থাকেন বিষিষ্ট ব্যক্তিরা।
নানানজাতের সাপ নিয়ে সাপুড়েরা এখানে আসে।
আমাদের বাংলাদেশে কতো প্রজাতির সাপ আছে
তা এখানে এলেই জানা যায়। সন্ধ্যায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠানও হয়।এইহগ্রাম যেন সাংস্কৃতির ধারক ও বাহক।
এখানে মনসার মন্দিরও আছে।পুজোর দিন ভক্তরা
গন্ডী কাটে। এই গ্রামের মানুষের সাপের প্রতি
অগাধ বিশ্বাস।সাপের প্রতি এই গ্রামের মানুষেরা
কেউ কখনো নিষ্ঠুর হয় না।গ্রামটি একটি আদর্শ গ্রাম।
দুদিন ধরে গরিব দুখিদের খাওয়ানোরও ব্যাবস্থা
করা হয়।এই মেলায় এলে মনটা মানবতায় পরিপূর্ণ
হয়ে ওঠে।এই মেলায় দুদিন ধরে মানুষ রুজি রোজগারের
পথ খুঁজে পায়।
Comments :0