Migrant Workers

পরিযায়ীদের ওপর হামলায় মদত বিজেপি’র, পাশে থাকে না তৃণমূল সরকারও

রাজ্য

নিহত পরিযায়ী শ্রমিক জুয়েল রানার পরিবার।

ওঁরাও বাঙালি এবং ভারতীয়। তবে নিজেদের জীবন জীবিকার তাগিদে থাকতে হয় অন্য রাজ্য। এটা কি অপরাধ? প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা। 
বারবার বিভিন্ন রাজ্যে আক্রান্ত হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকায় বাংলাদেশী খুঁজে বের করার নামে বাংলাভাষী মুসলিম শ্রমিকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ। তারপর থেকে এই প্রবণতা আরও বাড়ছে। 
পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং সাংসদ সামিরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান যে গত মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের ৯৫ জন পরিযায়ী শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, উগ্র হিন্দুত্ববাদী বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা মুখ্যত ওড়িশা, হরিয়ানা, আসাম, মহারাষ্ট্রের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যে। হামলাবাজদের ওপর কড়া ব্যবস্থা না নেওয়ায় বর্বর অসভ্য আক্রমণ আরও বাড়ছে, বলছেন বামপন্থীরা। 
তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেছেন, সব ক্ষেত্রেই রয়েছে বিজেপির মদত। তবে পরিযায়ীদের ওপর আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের তৃণমূল সরকারের তৎপরতা নিয়েও বারবার উঠছে প্রশ্ন। সিপিআই(এম) প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের তৃণমূল সাংসদদের ভূমিকা নিয়েও।  
পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষোভ,  'বাংলাদেশী' বলে দাগিয়ে দিয়ে অমানবিক অত্যাচার চালানো হচ্ছে ওদের উপর। এ রাজ্যেও নেই প্রয়োজনীয় সরকারি তৎপরতা। নেই কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তাও। তবু আতঙ্কে বাধ্য হয়েই ফিরতে হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। বিভিন্ন ঘটনাতেই দেখা গিয়েছে আক্রান্ত পরিবারের কাছে পৌঁছাচ্ছেন সিআইটিইউ’র পরিযায়ী শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা। ওড়িশায় শ্রমিকদের পাশে দেখা গিয়েছিল ডিওয়াইএফআই নেতৃবৃন্দকে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সিআইটিইউ নেতৃবৃন্দ বাড়িয়ে দিচ্ছেন সহায়তার হাত। ওড়িশায় মুর্শিদাবাদের সুতির শ্রমিক জুয়েল রানাকে হত্যার ঘটনাতেও প্রশাসনিক ব্যবস্থার দাবি তুলেছে সে রাজ্যের সিআইটিইউ।  
২০১১ সালের আগে যে কোনো রাজ্যেই বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক আক্রান্ত হওয়ার খবর আসলেই সেখানে পৌঁছাতে দেখা গিয়েছে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রীদের। দেখা যেত রাজ্যের বামপন্থী সাংসদদেরও। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের প্রশাসনের ওপর চাপও তৈরি করা হতো। এই তৎপরতার অভাব থাকার অভিযোগ রয়েছে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের বক্তব্য, মূলত তিনভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। কখনও পুলিশ সন্দেহের বশে তুলে নিয়ে গিয়ে আটক করে পরে ছেড়ে দিচ্ছে। কখনো পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। আবার কখনো সরাসরি উগ্র হিন্দুত্ববাদী অংশ বিজেপি’র মদতে এসে আক্রমণ করছে। 
অভিযোগ রাজ্য সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার কথা বললেও এখন অবধি তা মেলেনি। 
সিআইটিইউ দাবি তুলেছে যে বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রেসিডেন্ট কমিশনাররা নিযুক্ত আছেন। হামলার ঘটনায় তাঁদের সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। পাশাপাশি, যে এলাকার পরিযায়ী শ্রমিকরা আক্রান্ত, সেই এলাকার সাংসদদেরও অন্য রাজ্যের প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে হবে। 
মুর্শিদাবাদেই দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের সাংসদ দাঙ্গার জন্য পরিযায়ীদের দায়ী করছেন।
পরিযায়ী শ্রমিকদের অভিযোগ, রাজ্যের হেল্পলাইনও অধিকাংশ সময় কাজ করে না। বিপদের সময়ে সরকারকে পাশে পাওয়া যায় না।

Comments :0

Login to leave a comment