Jytopriya Mallik arrested

সুগার-‍‌ইডি’র চাপে ‘বালু’ মারা গেলে এফআইআর, জানিয়ে রাখলেন মমতা

জেলা

 ‘‘বালুর (জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ডাকনাম) অনেক সুগার। ও যদি মারা যায়, তাহলে ইডি’র বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে।’’ দুর্নীতির তদন্ত সম্পর্কে এই ‘যুক্তি’ দিতে পারেন মমতা ব্যানার্জিই! তিনিই এই কথা বলেছেন বৃহস্পতিবার, কালীঘাটে। পাশাপাশি বিজেপি’র বিরুদ্ধেও এফআইআর করতে হবে বলে তিনি এদিন মন্তব্য করেছেন।
অনুব্রত মণ্ডলের ‘পুলিশকে বোম মারুন’-এর মতো একাধিক হুমকির পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘ওর মাথায় অক্সিজেন কম আছে, এটা মনে রাখতে হবে।’’ এদিন সেই মমতা ব্যানার্জিই রাজ্যের প্রায় ১০ কোটি মানুষের স্বার্থে যুক্ত রেশন ব্যবস্থায় দুর্নীতির তদন্তে তাঁর বিশ্বস্ত ‘বালু’-র পাশে দাঁড়িয়েছেন ‘অনেক সুগার’-এর কথা বলে সহানুভূতি তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে।
এদিন ইডি’র অফিসাররা বিধাননগরে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দু’টি বাড়িতে (বিসি ২৪৪ এবং বিসি ২৪৫) সকাল সাড়ে ৬টায় তল্লাশি শুরু করেন। বেনিয়াটোলা লেনের একটি বাড়িতে একসময়ে জ্যোতিপ্রিয় থাকতেন। এখন সেখানে তাঁর আত্মীয়রা থাকেন। তদন্তকারীরা সেখানেও তল্লাশি চালিয়েছেন। জ্যোতিপ্রিয় ২০২১ থেকে রাজ্যের বন মন্ত্রী। তাঁর আপ্ত সহায়ক অমিত দে-র বাড়িতেও তল্লাশি হয়েছে। তাঁর দু’টি ফ্ল্যাট রয়েছে নাগেরবাজারের দু’টি অ্যাপার্টমেন্টে। একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভগবতী পার্ক এলাকায়। অপরটি স্বামী বিবেকানন্দ রোডে। দু’টি ফ্ল্যাটই এদিন অনেকক্ষণ তালাবন্ধ ছিল। অমিত সপরিবারে পুরী গিয়েছিলেন ছুটি কাটাতে। বিমানবন্দর থেকে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে ইডি নিয়ে আসে নাগেরবাজারে। তারপর শুরু হয় ওই তিনটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি।
সেই তল্লাশি চলাকালীনই বৃহস্পতিবার কালীঘাটে নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রেশন-দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সেই সূত্রে এদিন মমতা-শাসনে দশ বছরের খাদ্য মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িগুলিতে তদন্তকারী অফিরসাররা তল্লাশি চালিয়েছেন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে। রেশন-দুর্নীতিতে বাকিবুর রহমান নামে ধৃত ব্যবসায়ীকে জেরা করে জ্যোতিপ্রিয়র যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে ইডি’র সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্যে রেশনে নানা অনিয়নের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষত ২০১৫-১৬ থেকে। দীর্ঘ দিন অডিট হয়নি রাজ্যের রেশন ব্যবস্থার। দেদার কার্ড বিলির অভিযোগও রয়েছে। চাল, আটা সরবরাহ নিয়েও অভিযোগ আছে। একাধিকবার অভিযোগ পেয়েও রাজ্যে ১৮টি লোকসভা আসনে জেতা বিজেপি চুপচাপ বসে থেকেছে। রেশনে দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্যে আন্দোলন করেছে বামপন্থীরাই। 
রাজ্যে রেশনে চুরি, বেনিয়ম নিয়ে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে কোনও কথা বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। কোনও দুর্নীতি হয়নি, এমন দাবিও এদিন করেননি মমতা ব্যানার্জি। এই প্রসঙ্গে হিন্দিতে তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘জ্যোতিপ্রিয়র বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে। এটা নোংরা খেলা চলছে। চুপচাপ আমি সহ্য করছি।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘কত জনকে ধরবে? আমাকে তো ঢুকতে দেবে না (জেরার সময় বোঝাতে চেয়েছেন)। মেন্টাল টর্চার করা হয়। হিউম্যান টর্চার করা হয়। ফিজিক্যাল টর্চার করা হয়। নাম বলানোর জন্য। প্রাইভেট পার্টসে টর্চার করা হয়। বলা হয়, এর এর নাম বলো, না হলে এমন হবে। এসবও চলছে।’’
অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেপ্তারের পরে কোনও মন্তব্য করেননি মমতা ব্যানার্জি। পার্থ চ্যাটার্জি গ্রেপ্তার হওয়ার ৪৮ ঘন্টা পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আমাকে কালি মাখাতে আসবেন না। আমার হাতেও আলকাতরা আছে।’’ বর্তমানে রাজ্যের বন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এখনও গ্রেপ্তার হননি। তার বাড়িতে টানা তল্লাশি চলাকালীনই এদিন বিকালে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘বালুর (জ্যোতিপ্রিয়র ডাক নাম) স্বাস্থ্য খারাপ। অনেক সুগার। ও যদি মারা যায়, তাহলে বিজেপি এবং ইডি’র বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে।’’ এই বিষয়ে তিনি দু’টি মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করেছেন। প্রথমত, তৃণমূল নেতা সুলতান আহমেদ এবং দ্বিতীয়ত, তৃণমূলের সাংসদ প্রসূন ব্যানার্জির স্ত্রীর মৃত্যু। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘আমাদের সাংসদ ছিলেন সুলতান আহমেদ। মারা গিয়েছেন। সিবিআই’র থেকে চিঠি পেয়েছিলেন তার আগে। প্রসূন ব্যানার্জিকেও ডাকা হয়েছিল। তার স্ত্রী মারা গিয়েছেন তারপরে।’’ কিন্তু এমন দাবি এর আগে মমতা ব্যানার্জি কখনও করেননি।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার নাম উল্লেখ না করে সেই সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ওই সংস্থার সিইও অভিষেক। দুই ডিরেক্টর তাঁর মা লতা ব্যানার্জি এবং বাবা অমিত ব্যানার্জি। তাঁদের ইডি ডেকেছিল। তাঁরা যাননি। তাঁদের কাছে কিছু নথি চাওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেছেন, ‘‘ওরা অভিষেকের জন্মের আগেকার নথি চাইছে। ওর বাবাকে বলেছে ৪০-৪২ বছর আগেকার কাগজ দিতে। অভিষেক তো জন্মেছেই ১৯৮৭ সালে। আর বলছে ১৯৮২-৮৩ সালের কাগজ দিতে।’’

 

 

Comments :0

Login to leave a comment