Journalists Protest

রাজ্যপালের আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল সাংবাদিকদের

জাতীয়

Journalists Protest

রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের স্বেচ্ছাচারী আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হলেন কেরালার সাংবাদিকরা। মঙ্গলবার কেরালা ইউনিয়ন অব ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট (কেইউডব্লিউজে)-র উদ্যোগে তাঁরা শামিল হন রাজভবন অভিযানে। তাঁদের দাবি, রাজ্যপালকে তাঁর ‘ভুল হয়েছে’ একথা স্বীকার করতে হবে। পাশাপাশি নিজের ‘অগণতান্ত্রিক’ আচরণের জন্য ক্ষমাও চাইতে হবে প্রকাশ্যে। এদিনের এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সাংবাদিকদের পাশাপাশি বামপন্থী এবং কংগ্রেস নেতৃবৃন্দও অংশ নেন। সোমবারই রাজভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যপাল খান দুই সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে শুধু অভব্য আচরণই নয়, তাঁদের বের করে দেন।
এদিনের প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয় কনকাকুন্নু থেকে। সেই মিছিল গিয়ে শেষ হয় রাজভবনের গেটে। মিছিলের উদ্বোধন করেন রাজ্য কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ভি ডি সাথীসান। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের মিছিলে পা মেলান রাজ্যের প্রাক্তন অর্থ মন্ত্রী টমাস আইজ্যাক, সিআইটিইউ নেতা অনন্তলাভোত্তম আনন্দন, সিপিআই(এম) সাংসদ জন ব্রিটাস। কেইউডব্লিউজে’র অভিযোগ, সাংবাদিকদের মুক্ত ও স্বাধীন কাজকর্মে হস্তক্ষেপের যাবতীয় চেষ্টা চালানো হচ্ছে রাজভবনের তরফে। এমনকি সাংবাদিকসুলভ গতিবিধিও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।’ সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্যপালকে কড়া ভাষায় লেখা চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
কেইউডব্লিউজে’র পক্ষ থেকে লেখা চিঠিতে কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম গোষ্ঠী সম্পর্কে পূর্বধারণা ‘পুনর্ভাবনার’ পাশাপাশি পেশাগত স্বাধীনতা যা সমস্ত সাংবাদিকরাই উপভোগ করে থাকেন তা সুনিশ্চিত করার দাবিও জানানো হয়েছে। কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম গোষ্ঠী সম্পর্কে রাজভবনের তরফে যে ধরনের অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করা হয়েছে সে ব্যাপারেও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে সাংবাদিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে। এপ্রসঙ্গে এনার্কুলাম গেস্ট হাউস এবং দিল্লিতে কেরালা হাউসে রাজ্যপাল সাংবাদিকদের যেভাবে বের করে দিয়েছিলেন, সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে নিন্দা করা হয়েছে। কোনওরকম রাখঢাক না রেখেই কেইউডব্লিউজে বলেছে, প্রশাসনিক শীর্ষ পদে বসেও রাজ্যপাল যেভাবে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যে অসহিষ্ণুতা দেখাচ্ছেন এবং কৈরালি টিভি এবং মিডিয়া ওয়ান চ্যানেল’র সাংবাদিকদের বার বার হেনস্তা করছেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। ওঁদেরকে তো কাজের সূত্রেই রাজভবন কিংবা রাজ্যপালের অনুষ্ঠান কভার করতে যেতে হয়।
কংগ্রেস নেতা সাথীসান রাজ্যপালের আচরণকে ‘অগণতান্ত্রিক’ এবং কোনও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই এটা চলতে পারে না বলে অভিযোগ করেছেন। রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান দীর্ঘদিন ধরেই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে বিরোধের রাস্তায় হাঁটছেন। বিশেষ করে কৈরালি বা আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সিপিআই(এম)’র যোগ আছে অভিযোগ তুলে অভব্য আচরণ করছেন। এদিন তিরুবনন্তপুরমের পাশাপাশি ত্রিচূড় এবং কোঝিকোডেও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হন সাংবাদিকরা।
কেরালার প্রতিবাদী সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে দিল্লি ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট। এদিন দিল্লির ওই সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কেরালার রাজ্যপালের আচরণের কড়া ভাষায় নিন্দা করা হয়েছে। রাজ্যপাল শীর্ষ পদে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে যে আচরণ করছেন তা অবাঞ্ছিত বলেও মন্তব্য করেছে দিল্লির সাংবাদিক সংগঠনটি। কেরালার রাজ্যপালের আচরণের নিন্দায় শামিল হয়েছে এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়া। এদিন এক বিবৃতিতে গিল্ড রাজ্যপালের আচরণে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সম্মান জানানো উচিত সকলেরই। কোন সংবাদমাধ্যম গোষ্ঠীর কী সম্পাদকীয় অবস্থান তা বিচার না করেই সমস্ত ধরনের সরকারি অনুষ্ঠানে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের প্রবেশাধিকার দিতে হবে।
এদিকে, রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের বিরুদ্ধে সারাসরি প্রচারে নামল বামপন্থীরা। রাজ্যপাল যেভাবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে সংঘাতের রাস্তায় যাচ্ছেন তার বিরোধিতা করে রাজ্যজুড়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার চালান বামপন্থী কর্মীরা। তাঁরা প্রচারপত্রও বিলি করেন। ‘শিক্ষা সুরক্ষা সমিতি’ নামে ওই প্রচারপত্র বিলি করা হয়। অভিযোগ করা হয়েছে, সংবিধানের মৌলিক বোঝাপড়াকে কোনওরকম গুরুত্ব না দিয়ে রাজ্যপাল সরাসরি সঙ্ঘ পরিবারের পুতুল হিসাবে কাজ করছেন। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচাতে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া পথ নেই বলে জানানো হয়েছে।
আগামী ১৫ নভেম্বর রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছে এলডিএফ। সেদিন এক লক্ষেরও বেশি মানুষকে রাজভবনের সামনে জড়ো করা হবে বলে এলডিএফ’র তরফে জানানো হয়েছে। সিপিআই(এম)’র কেরালা রাজ্য সম্পাদক এম ভি গোবিন্দন জানিয়েছেন, একেবারে তৃণমূলস্তর পর্যন্ত প্রতিবাদসভা হবে রাজ্যে। অবস্থান বিক্ষোভ হবে রাজ্যের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। তিনি বলেছেন, রাজ্যপাল যে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে চলছে তার বিরোধিতা করা হবে সর্বস্তরে। এই প্রশ্নে রাজ্যবাসীর সমর্থন জরুরি বলেই বাড়ি বাড়ি প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে। ১৫ তারিখ রাজভবন অভিযান ছাড়াও জেলা সদরগুলিতে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শামিল হবেন হাজার হাজার মানুষ। গোবিন্দন অভিযোগ করেন, রাজ্যপাল ফ্যাসিস্ত এবং স্বৈরাচারী আচরণ করছেন রাজ্য সরকার এবং রাজ্যবাসীকে হেনস্তা করা লক্ষ্যে। এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা জরুরি।

Comments :0

Login to leave a comment