কেরালার আলুভায় একরত্তি এক শিশুকন্যাকে ধর্ষণ ও খুনের দায়ে দোষীসাব্যস্তকে ফাঁসির আদেশ দিল পকসো বিশেষ আদালত। নৃশংস এমন এই ঘটনার ১১০দিনের মাথায় সাজা ঘোষণা হলো। মঙ্গলবার গোটা দেশে যখন শিশু দিবস পালিত হচ্ছে, সেদিনই এক পাঁচ বছরের শিশুর উপর নৃশংস অত্যাচার চালিয়ে তাকে খুনের অপরাধী শাস্তি পেল। ন্যায় বিচার পেয়ে বিহার থেকে আসা এক পরিযায়ী নির্যাতিতার পরিবার ধন্যবাদ জানিয়েছে কেরালা সরকারকে। এত দ্রুততার সঙ্গে এই মামলার নিষ্পত্তি করে দোষী শাস্তি পাওয়ায় খুশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। বলেছেন, ‘ওই মা-বাবার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কোনও ভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়। সরকার তাদের সব রকমের সহায়তা করবে। আর আজকের এই রায় নিশ্চিতভাবে শিশুদের উপর নির্যাতন চালাতে গেলে কাউকে নতুন করে ভাবাবে।
গত ২৮ জুলাই পাঁচ বছর বয়সি মেয়েটি তার আলুভার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। রাতভর তল্লাশির পরও পুলিশ ব্যর্থ হয় নিখোঁজ সেই শিশুকন্যাকে খুঁজে পেতে। পরদিন জলাভূমি জায়গায় আবর্জনার স্তূপে তার ক্ষতবিক্ষত দেহ পাওয়া যায়। ময়না তদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ধর্ষণ করে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় শিশুকন্যাকে। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, বিহার থেকে কেরালায় কাজ করতে আসা এক পরিযায়ী শ্রমিক এই নৃশংস কাজটি ঘটিয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত আশয়াক আলমকে। হিংসার শিকার ওই পরিবারও পেট চালাতে বিহার থেকে কেরালায় এসেছিলেন কাজ করতে।
এই ধর্ষণ-খুন নিয়ে গত জুলাই মাসে সরব হয়েছিল দেশ। একদিকে যেমন প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল বিরোধীরা অন্য দিকে বিহারের পরিযায়ী দম্পতির সন্তানের এমন নির্মম পরিণতির বিচার চেয়েছিল জনতা। সমাজের সব স্তরের, সব বয়সি মানুষ এসে বিদায় জানিয়েছিলেন ছোট্ট মেয়েকে। তখনই সকলে অভিযুক্তর কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দাবি করেছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত আশয়াক আলমকে চিহ্নিত করেছিল পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শিশুটি যে বাড়িতে থাকত, সেই বাড়িরই দোতলায় থাকত অভিযুক্ত। পুলিশ মদ্যপ অবস্থায় তাকে আটক করে। জেরায় অভিযুক্ত দোষও কবুল করে নেয়। পকসো মামলায় সাধারণত এক বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয় না।
এর্নাকুলাম রুরালের এসপি বিবেক কুমার বলেন, ‘পুরো টিম এই কেসের পিছনে খেটেছে। ৩০ দিনেরও কম সময়ে চার্জশিট জমা পড়েছে। ১০০ দিনের মধ্যে দোষী সাব্যস্ত করা হলো। আমরা মেয়েটিকে বাঁচাতে পারিনি, তাই ওকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতেই হবে, সেই প্রতিজ্ঞা আমাদের সকলেরই ছিল।’
নিজেদের ব্যর্থতায় একরত্তি কন্যার কাছে ক্ষমা চেয়েছিল কেরালা পুলিশ। পাঁচ বছরের সেই শিশুর উদ্দেশে তারা লিখেছিল, ‘ক্ষমা করে দে আমাদের। আমরা দুঃখিত রে মেয়ে। তোকে জীবিত অবস্থায় তোর মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার সব চেষ্টায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি। তবে যে তোকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও খুন করেছে, তাকে গ্রেপ্তার করেছি আমরা’। গত ৩০ জুলাই এই পোস্ট করে পুলিশ। তার ঠিক ৯৯ দিনের মাথায় অভিযুক্ত আশয়াক আলমকে দোষী সাব্যস্ত করে এর্নাকুলামের বিশেষ পকসো আদালত। আর ঠিক ১১০দিনের মাথায় আদালত দোষীকে ফাঁসির আদেশ শোনালো। সঙ্গে তাকে পাঁচটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও দিয়েছে আদালত। এদিন অভিযুক্ত আশয়াক আলমকে দোষী সাব্যস্ত করল এর্নাকুলামের বিশেষ পকসো আদালত। আদালত আলমকে আইপিসি ও পকসোর মোট ২৬টি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছিল। তার মধ্যে রয়েছে ধর্ষণ, খুন, প্রমাণ লোপাট সহ আরও নানা কিছু। স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর জি মোহনরাজ বলেন, ‘যে ধারাগুলোয় অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, তার মধ্যে পাঁচটিতে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আমরা তাই চেয়েছি।’
Comments :0