নিট দুর্নীতির মূল চক্রী হিসেবে এক যুবককে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করল উত্তর প্রদেশ পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল বা এসটিএফ। পুলিশ সূত্রে খবর, রবি অত্রি নামে ওই যুবক প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মাথা। শনিবার গ্রেটার নয়ডার নিমকা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত ৪ জুন। দেশের ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা নিটের ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, ৬৭ জন পরীক্ষার্থী ৭২০ নম্বরের পরীক্ষায় ৭২০ নম্বরই পেয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে নিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সংস্থা এনটিএ জানায়, পরীক্ষা দেরিতে শুরু হওয়া, প্রশ্নপত্র বিভ্রাট সহ একাধিক কারণে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের ‘গ্রসে মার্কস’ বা বাড়তি নম্বর দেওয়া হয়। কিন্তু বিহার পুলিশের করা তদন্তে উঠে আসে, বাছাই কিছু পরীক্ষার্থীর কাছে আগাম প্রশ্নপত্র পৌঁছে গিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ৫ মে নিট-এ বসেন ২৪ লক্ষের বেশি পড়ুয়া। এনটিএ সহ কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম থেকে ঘটনাটিকে ধাপা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিরোধীরা অহেতুক জলঘোলা করছেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। দেশজুড়ে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হয়। একের পর এক প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করে। একাধিক মামলা দায়ের হয়।
এই অবস্থায় মামলা সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়। সর্বোচ্চ আদালত এনটিএ’কে তীব্র ভর্ৎসনা করে। এরই মাঝে রবি অত্রির গ্রেপ্তারি প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে। যদিও শনিবারও ধর্মেন্দ্র প্রধান জানিয়েছেন, পরীক্ষা বাতিল করা হবে না। কারণ, পরীক্ষা বাতিল হলে প্রকৃত পরীক্ষার্থীদের এক বছরের পরিশ্রম নষ্ট হবে।
বিহার এবং উত্তর প্রদেশ পুলিশের দাবি, প্রশ্ন ফাঁস কান্ডের মূল চক্রী রবি অত্রি ধারাবাহিক ভাবে এই ধরণের কীর্তি করে আসছেন। একাধিক রাজ্যে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে তিনি যুক্ত। ‘সলভার গ্যাং’ বা প্রশ্ন সমাধান গ্যাং তৈরি করে সম্ভাব্য প্রশ্নপত্রের উত্তর সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করত সে। ২০১২ সালে ডাক্তারি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল।
বিহার পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে বেশ কয়েকজন পড়ুয়া এবং দাগী দুষ্কৃতিকে গ্রেপ্তার করা হয় প্রশ্ন ফাঁস চক্রে জড়িত সন্দেহে। তাদের জেরা করে রবি অত্রির নাম উঠে আসে।
পুলিশ জানাচ্ছে, ২০০৭ সালে ডাক্তারি প্রবেশিকার প্রস্তুতি নিতে কোটায় গিয়েছিল রবি অত্রি। ‘মেধাবী’ রবি প্রবেশিকা পাশ করে পিজিআই রোহতকে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হলেও, চতুর্থ বর্ষে কলেজ ছুট হয়। ডাক্তারির বদলে পরীক্ষা মাফিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে সে, এবং মোটা অর্থের বিনিময়ে ভুয়ো পরীক্ষার্থী সেজে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিয়ে বেড়াত রবি। তখন থেকেই প্রশ্ন ফাঁসেও হাত পাকায় সে।
নিটের পাশাপাশি ১৮ জুন হওয়া পিএইচডি’র প্রবেশিকা নেট পরীক্ষা নিয়েও বিতর্ক দানা বেধেছে। পরীক্ষা দেওয়ার পরে পরীক্ষার্থীরা জানতে পারেন, পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। পুলিশ জানাচ্ছে, ডার্ক ওয়েবে নেটের একাধিক প্রশ্নপত্রকে ঘুরতে দেখা যায়। আশঙ্কা তৈরি হয়, মোটা টাকার বিনিময়ে সেই প্রশ্ন পরীক্ষার আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, নিটের মত নেটের দায়িত্বেও রয়েছে এনটিএ।
এই অবস্থায় কংগ্রেস, বামপন্থীরা সহ বিরোধী দলগুলি এনটিএ-কে ভেঙে দেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছেন। এনটিএ বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভে সামিল হয়েছে এসএফআই।
Comments :0