Inflation

সবজি থেকে মাছ-মাংস-তেলের আগুন দর, জেরবার মানুষ

কলকাতা

 নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এমন আগুন হয়েছে যে বাজার করতে গেলে মানুষের পকেটে ছ্যাঁকা লাগছে!  
কাঁচা সবজি থেকে শুরু করে তেল, ডাল, মাছের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। লোকসভার ভোট সবে মিটেছে। মানুষের ঘাড়ে প্রথম কোপ মেরেছে সিইএসসি। বিদ্যুতের দাম অনেকটাই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সবাই জানেন, সিইএসসি’র মালিক নির্বাচনী বন্ড মারফত রাজনৈতিক দলগুলিকে টাকা দিয়েছেন। সেই টাকা এখন সরাসরি সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে তোলা হচ্ছে। ঠিক একইভাবে গত একমাসে ভোজ্য তেলের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বেড়ে গিয়েছে। মে মাসে সরষের তেলের দাম ছিল ১২৫ টাকা। জুন মাসে সেই তেলের দাম হয়েছে ১৪০ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানি ইচ্ছামতো লিটারপ্রতি তেলের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও পাউচপ্যাকে ১ লিটার তেল থাকে না। ৯০০ মিলিলিটার তেল থাকে।
গত একমাসের মধ্যে কাঁচা সবজি এবং মাছের দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। বুধবার ছিল জামাইষষ্ঠী। বেশিরভাগ বাড়িতেই এদিন দুপুর এবং রাতের খাওয়াদাওয়ায় দৈনন্দিন মেনুর একটু পরিবর্তন করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। আলু, পটল থেকে শুরু করে আম, দই, মিষ্টির দাম অনেকটাই বেড়েছে। মে মাসের গোড়ার দিকে চন্দ্রমুখী আলুর দাম ছিল ২৫ টাকা কেজি। জুন মাসে সেই দাম ৩৫ টাকা হয়েছে। জ্যোতি আলুও এই সময়ের মধ্যে কিলো প্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। কাঁচা বাজারের দাম নিয়ে রাজ্যের কৃষি বিপণন দপ্তরের কোনও মাথাব্যথাই নেই। 
গত সাতদিনের মধ্যেই আলু, বেগুন, টমেটোর দাম বেশ কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। বেগুন ৭০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, চন্দ্রমুখী আলু ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর বাজারদর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি টাক্সফোর্স নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। বাজারের দাম কমাতে কৃষি বিপণন দপ্তরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কথা ছিল, নির্দিষ্ট দামে গাড়িতে করে সবজি বিক্রির ব্যবস্থা হবে। বাজারগুলিতে নজরদারি চালাবে সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর আলুর দাম কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। এবছর তাই মুখ্যমন্ত্রী বাজারদর নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও বৈঠক করেননি।  ৪০ টাকার টমেটো ৬০ টাকা হয়েছে। কলকাতা এবং কলকাতার শহরতলির বাজার এবং হাওড়ার বাজারগুলিতে চন্দ্রমুখী আলু ৩৫ টাকা এবং জ্যোতি আলু ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা আনাজের দাম একমাসে লাফিয়ে বেড়ে গেল কেন? এর উত্তর রাজ্যের কৃষি বিপণন দপ্তরের কাছে নেই। শিয়ালদহ কোলে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা বলছেন, ‘ফোড়েরা নতুন করে বাড়তি টাকা রোজগারের জন্য বাজারে কিছু কিছু কাঁচা আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণে রেখে হঠাৎ করেই টমেটো এবং বেগুনের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত টাকা লুটছে।’ 
প্রথমে বাড়ানো হয়েছে আলুর দাম। অথচ পটল, ঢ্যাঁড়স, কুমড়ো, করলা ৬০ টাকার মধ্যে রেখে দেওয়া হয়েছে। মধ্যবিত্ত মানুষ আলু এবং টমেটো কেনেন। এই দু’টি আনাজের দাম পাইকারি বাজারেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোলে মার্কেট থেকে আলু, টমেটো এবং যখন শহরতলির বাজারগুলিতে যাচ্ছে তখন খুচরো বাজারে তার দাম কিলোপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। সরকারি নজরদারির অভাব এবং একশ্রেণির ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত টাকা রোজগারের ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
জামাইষষ্ঠীর জন্য বাজারে কিছু ইলিশের আমদানি হয়েছে। ১ কেজি ওজনের ইলিশ দু’হাজার টাকা কিলো। ১ কেজির বেশি হলে দাম আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। গলদা চিংড়ি ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি মাপের ৮০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা কেজি। বাগদা চিংড়ির দামও গলদা চিংড়ির মতোই। বেশি ওজনের কাতলা কাটা ৫০০ টাকা কেজি। তবে চারাপোনার দাম ১৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে রয়েছে। পমপ্লেট মাছ সাইজ অনুযায়ী ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। বুধবার মৌরলা মাছ বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকা কেজি দরে। মাংসের দাম ৮০০ টাকার বেশি। মুরগির মাংস ২৫০ টাকা। পোলট্রির ডিম ১২ টাকা জোড়া, হাঁসের ডিম ২০ থেকে ২৪ টাকা জোড়া। কাঁচা আনাজ এবং মাছ মাংসের সঙ্গে বেড়েছে ফলের দাম। হিমসাগর এবং ল্যাংড়া আমের কিলো ১২০ থেকে ১৩০টাকা। লিচু ১২৫ থেকে ১৫০ টাকা কিলো দরে এদিন বিক্রি হয়েছে।
গতবছর ২৫ টাকা দামের একটা ‘জামাইষষ্ঠী সন্দেশ’ যে মাপের ছিল এবছর সেই মাপ আর নেই। জামাইষষ্ঠী লেখা সন্দেশের দাম হয়েছে ৪০ টাকা। একটা তালশাঁস সন্দেশের দাম ৩০ থেকে ৪০টাকা। দোকানগুলিতে ১০ টাকার কমে রসগোল্লা প্রায় নেই বললেই চলে। বড় রসগোল্লা যা রাজভোগ বলে বিক্রি হচ্ছে তার একটির দাম ২০ টাকা। মিষ্টি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুধ এবং ছানার দাম গত একবছরে প্রায় ২৫ গুণ বেড়েছে। ফলে মিষ্টির দাম বাড়াতে হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment