পরিযায়ীরা নাগরিকত্বর প্রমাণপত্র খুঁজতে হয়রান
ঘুম উবে গেছে কোচবিহারের সীমান্ত এলাকার গ্রামের পরিবারগুলির। কারণ এসব গ্রামের প্রচুর মানুষ ভিন রাজ্যে বিশেষত নয়ডা, বেঙ্গালুরু, দিল্লিতে কাজ করেন। এখন সেখানে পুলিশ প্রমাণ পত্র চাইছে। তারা বাংলাদেশি কি না। ভোটের কার্ড, আধার কার্ড দেখেও সন্তুষ্ট হচ্ছে না সেখানকার পুলিশ। পঞ্চায়েতের, বিডিও’র কাগজ চাইছে। আর তাতেই সীমান্তের গ্রামের মানুষের রাতের ঘুম উবে গেছে।
শহর জুড়ে যখন বড়দিন, নতুন ইংরেজি বছরের উৎসব চলছে তখন সীমান্তের গ্রামের মানুষেরা ভিন রাজ্যে থাকা পরিবারের সদস্যদের জন্য এক টুকরো সরকারি কাগজ খুঁজছেন, যা দেখিয়ে ভিন রাজ্যে থাকা পরিবারের লোকেরা প্রমাণ করতে পারবে ওরা ভারতীয়।
কোচবিহার জেলার ১২ টি ব্লকের মধ্যে ৯ টিই সীমান্ত এলাকার। এখানকার প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ ভিন রাজ্যে কাজ করে। রাজ্য সরকারের কাছে এদের কোনও তথ্যই নেই,যা দিয়ে সরকার বলে দেবে কে কোন গ্রামের বাসিন্দা। কাজ ছেড়ে এক টুকরো সরকারি কাগজের জন্য অনেকে ট্রেনে চেপে বাড়ি আসছেন।
পুলিশ ভিন রাজ্যে শুধু প্রমাণপত্র চাইছে এমনটা নয়। খোদ দিল্লি পুলিশের একটা দল এসেছে কোচবিহারে কাগজের সন্ধানে। তারা দিনহাটার সীমান্ত গ্রামগুলিতে খোঁজ নিতে শুরু করেছে। দিল্লি, নয়ডাতে কাজ করা শ্রমিকদের কাগজ নিয়ে এসে পরিচয়পত্রের সাথে মিলিয়ে দেখতে শুরু করেছে তারা ওই গ্রামের বাসিন্দা কি না। নাজিরহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলির ঠিকানা দেওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের দেওয়া পরিচয়ের তথ্য মিলিয়ে চাইছে রেসিডেন্সিয়াল সংশাপত্র।আর সেই সংশাপত্র জোটাতে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ির লোকেরা সরকারি অফিসের দরজায় কড়া নাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
আতঙ্ক ছড়িয়েছে দিল্লি,নয়ডাতে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের। কুর্শামারীর সনাতন বর্মনের বাবা অনাথ বর্মন বুধবার জানালেন তার ছেলে, বউমা ২ নাতিকে নিয়ে প্রায় ৪ বছর ধরে থাকে নয়ডায়। এই এলাকার আরও অনেক পরিবার আছে সেখানে। এদিন বাবার ফোনে সনাতন জানালেন,‘‘আমরা তো অনেকদিন ধরে নয়ডায় আছি। ভোটের কার্ড আধার কার্ড, এমনকি রেশন কার্ডও আছে। তবুও বাংলাদেশি ধরার নামে যেভাবে হয়রানি হচ্ছে তাতে আতঙ্কে আছি। মালিক হয়তো কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেবে। তখন গ্রামে ফিরে ঘরে বসে থাকা ছাড়া উপায় থাকবে না।’’
মাথাভাঙা মহকুমার সীমান্ত লাগোয়া বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ দিল্লি,নয়ডা আর বেঙ্গালুরুতে আছেন। ওরা কেউ নির্মাণ শ্রমিক, মহিলারা অনেকেই বাড়ির পরিচারিকার কাজ করছেন, কেউ বা ইটভাটায় কাজ করেন। পুলিশের জেরায় জেরবার এদের এখন কাজ হারাবার ভয় বুকে চেপে বসেছে। কাজ বাঁচাতে আর পুলিশের হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে।
নাজিরহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রচুর মানুষ দিল্লিতে কাজ করেন।তাদের বাড়ির লোকেদের রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছেন না। দিল্লির পুলিশ এসে কাগজ নিচ্ছে প্রমানপত্র নিচ্ছে। তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়ির লোকেরা। কিন্তু চিন্তা একটাই দিল্লি পুলিশ কি সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যাচ্ছে।
স্থানীয় পঞ্চায়েত কাগজ দিয়ে সাহায্য করলেও বিধায়ক, মন্ত্রী,সাংসদ কেউ নেই সীমান্তের পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে। নিজেদের ভারতীয় প্রমাণ করতে নিজেরাই এক টুকরো কাগজ খুঁজছেন অফিসে অফিসে ঘুরে।
Comments :0