এদিন কেএমসি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড অ্যালাইড সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ইঞ্জিনিয়াররা। টিফিনের সময় স্কোয়াড মিছিলের পাশাপাশি বিক্ষোভ সভা হয়। সভার পরে কর্পোরেশনের কমিশনারকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে ইউনিয়নের তরফে।
রবিবার মধ্যরাতে গার্ডেনরিচের পাহাড়পুর অঞ্চলের ব্যানার্জি পাড়ায় টালের চালের একাধিক বাড়িত উপর ভেঙে পড়ে বেআইনি ভাবে নির্মীয়মাণ বহুতল। বাড়ির তলায় চাপা পড়ে এখনও অবধি ১১জন প্রাণ হারিয়েছেন। ২০ জনের কাছে গুরুতর আহত। এই ঘটনায় তৃণমূল যোগ প্রথম থেকে উঠে এলেও, মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও ঘটনাস্থল তথা ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামস ইকবাল দাবি করেছেন, তাঁরা কিছু জানেন না।
ঘটনার যাবতীয় দায় চাপানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড ও ১৫ নম্বর বরো’র দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের উপর। তাঁদের পাশাপাশি একজন এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকেও শো’কজ করা হয়েছে। ১৫ নম্বর বরো’র সমস্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট ও সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারদের শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে।
১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে ডেকে পাঠিয়ে ভর্ৎসনা করেছেন মেয়র। এর বিরুদ্ধেই আন্দোলন করেছেন ইঞ্জিনিয়াররা।
আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের বক্তব্য, কলকাতা শহরের যাবতীয় বেআইনি নির্মাণ তৃণমূলের মদতে হয়। রেট কার্ড ছাপানোর মত করে বেআইনি নির্মাণের কাটমানি যায় স্থানীয় থানা, কাউন্সিলর সহ শাসকদলের বিভিন্ন স্তরে। সেই দুর্নীতিতন্ত্র থেকে নজর ঘোরাতেই যাবতীয় দায় আধিকারিকদের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে।
এদিন মেয়রের বৈঠকের মূল নির্যাস ছিল, তিনি বেআইনি নির্মাণ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তিনি বাড়ি ভেঙে পড়ার পরে জানতে পেরেছেন। এবং তারপরেই সেটা রোখার জন্য নিয়মাবলি তৈরি করতে চাইছেন।
যদিও আধিকারিকরা বলছেন, প্রতি মাসে শহরের ১৬টি বরো’তেই বিল্ডিং বিভাগের তরফে কতগুলি বাড়ি তৈরি হচ্ছে তার তালিকা দেয়। সেই তালিকায় কতগুলি নির্মাণ আইনি, আর কতগুলি অবৈধ, সেটা নির্দিষ্ট করা থাকে। কাউন্সিলরদের কাছেও সেই তালিকা চলে যায়। তারপরেও মেয়র এবং কাউন্সিলরের ‘কিছু জানিনা’র দাবি হাস্যকর।
এরই মাঝে ভারতের নির্মাণ শ্রমিক ফেডারেশনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির তরফে কর্পোরেশনের মিউনিসিপ্যাল কমিশনারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বিল্ডিং আইনের ধারা মেনে গার্ডেনরিচ কান্ডের অভিযুক্ত প্রমোটার মহম্মদ ওয়াসিম নিজের সংস্থাকে নথিভুক্ত করান নি। তাঁর অধীনে কর্মরত নির্মাণ শ্রমিকদেরও প্রাপ্য মজুরি সহ সামাজিক সুরক্ষা দিতেন না তিনি। ১৯৯৬ সালে পাশ হওয়া বিল্ডিং অ্যান্ড আদার কন্সট্রাকশন ওয়ার্কার্স আইনের ২৮,২৯,৩০,৩১,৩৩,৩৬,৩৮,৩৯ এবং ৪০ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করেছেন তিনি।
একইসঙ্গে আইনে প্রস্তাবিত, নির্মাণের মোট খরচের ১ শতাংশ শ্রমিক কল্যাণ সেস হিসেবে কর্পোরেশনকে জমা দেননি তিনি বলে জানিয়েছে ফেডারেশন। সংগঠনের দাবি, গত ১০ বছর ধরে কলকাতা শহরে নিয়ম লঙ্ঘনকারী সমস্ত প্রমোটারের থেকে ১ শতাংশ হারে সেস আদায়, গার্ডেনরিচ কান্ডে নিহতদের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে অভিযুক্ত প্রমোটারের থেকে। একইসঙ্গে শহরে সমস্ত অবৈধ নির্মাণ বন্ধের দাবিও জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত প্রোমোটার এলাকায় তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তারসঙ্গে কাউন্সিলর শামস ইকবালের বহু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
Comments :0