MODI RAHUL OBC

জাতভিত্তিক গণনার দাবি ওড়াতে মোদী সামনে আনছেন সেই ‘ওবিসি’ পরিচিতি

জাতীয়

কংগ্রেসের জাতভিত্তিক গণনার দাবি বেশ বিপাকে ফেলে দিয়েছে বিজেপি-কে। তিন রাজ্যের ভোট প্রচারেই তা বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে। শনিবার মধ্য প্রদেশে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ফের অন্যান্য জাতভিত্তিক গণনার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে জাতভিত্তিক গণনাই প্রথমে করা হবে।’ দেশে কতজন ওবিসি রয়েছেন তার সঠিক তথ্য জানতেই ওই গণনা করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। আর এই দাবি যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে সমগ্র দলকে বেশ চাপে ফেলে দিয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে এদিন ছত্তিশগড়ের বিলাসপুরে এদিনই তাঁর ওবিসি পরিচিত সামনে এনে ভাষণেই। কংগ্রেসের জাতভিত্তিক গণনার দাবিকে স্বভাবসিদ্ধভাবে উড়িয়ে দিতে মোদী উলটে বলেন, ‘‘জাতপাতের নামে মহিলাদের মধ্যে বিভাজন আনতেই ওই দল জাতভিত্তিক গণনার দাবি জানাচ্ছে।’’ এমনকি তিনি নিজে অন্যান্য অনগ্রসর অংশের বলে তাঁর বিরুদ্ধেও ঘৃণা ছড়াতে কসুর করে না কংগ্রেস, এমন দাবিও করেছেন।
ভোটমুখী মধ্য প্রদেশের শাজাপুর জেলার কালাপিপাল কেন্দ্রে এদিন এক সমাবেশে রাহুল গান্ধী এদিন বলেন, ‘লোকসভা ভোটে জিতে তাঁরা ক্ষমতায় এলে প্রথমেই জাতভিত্তিক গণনা করা হবে দেশে কত পরিমাণ ওবিসি বা অন্য অংশের জনসংখ্যা আছে তা জানতে। কারণ এখনও পর্যন্ত এব্যাপারে সঠিক কোনও তথ্য কারোর কাছে নেই।’ কংগ্রেস সহ বিরোধীরা জাতভিত্তিক গণনার দাবি জানিয়ে আসছে বহুদিন ধরে। মহিলা বিল পাশের পর এর মাত্রা আরও বেড়েছে। এমনকি মহিলা সংরক্ষণ আইনেও ওবিসি-দলিতদের জন্য আসন সংরক্ষণের জোরালো দাবি জানিয়েছে। ওদিকে ভোট হারানোর শঙ্কায় বিজেপি কোনওভাবেই এর বিরোধিতাও করতে পারছে না। একারণেই এদিন ছত্তিশগড়ের বিলাসপুরে বিজেপি’র ‘পরিবর্তন যাত্রা’ শেষে মোদী নিজের ওবিসি পরিচিতকে সামনে এনে কংগ্রেসকে উলটে বিঁধতে চেয়েছেন। সেই রাহুল গান্ধীর ‘সব মোদী কীভাবে চোর হয়’ মন্তব্য টেনে সহানুভূতি আদায়ের মরিয়া চেষ্টায় মোদী এদিন দাবি করেন, ‘‘তিনি ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত বলেই তাঁকে এত অপছন্দ কংগ্রেসের। ওঁরা মনে করে প্রধানমন্ত্রীর আসন একমাত্র ওঁদেরই মানায়।’’ তাঁর নামে ঘৃণা ছড়াতে গিয়ে কংগ্রেস গোটা ওবিসি অংশকেই অপমান করে বলেও মোদী এদিন অভিযোগ করেছেন। মহিলা সংরক্ষণ বিলের ফায়দা লুটতে তিনি এদিন এও বলেন যে, ‘কংগ্রেস জাতপাতের নামে বিভাজন আনতে চায় মহিলাদের মধ্যে এবং একারণেই মিথ্যা ছড়ায়।’
তবে জাতভিত্তিক গণনার দাবিতে কংগ্রেসের অবস্থান যে অনড়, তা এদিন ফের স্মরণ করিয়ে দিলেন রাহুল গান্ধী। একই সঙ্গে দেশ বিজেপি নয়, আরএসএস চালাচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘আরএসএস এবং কয়েকজন পেটোয়া আমলা মিলে নীতি এবং আইন তৈরি করছে। বিজেপি’র জনপ্রতিনিধিরা মোটেই আইন তৈরি করছেন না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘৯০ অফিসার দেশ চালাচ্ছেন, এঁদের মধ্যে ক্যাবিনেট সচিব এবং অন্যান্য সচিব আছেন। বিজেপি সাংসদ, বিধায়করা এক্ষেত্রে কোনও ভূমিকাই নেই। আর এই আরএসএস কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছে দেশের জ্বলন্ত সব সমস্যা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার।’’ প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ পুঁজিপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্যই তাঁর সাংসদ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বলে এদিন ফের অভিযোগ করেন কংগ্রেস নেতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন আদানির দুর্নীতি, কারচুপি নিয়ে প্রশ্ন তুললাম তখনই আমাকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হলো। তাতে অবশ্য আমার কিছু এসে যায়নি। আমি সত্য কথা বলে যাবোই।’’ একথা বলতে গিয়েই তিনি বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রের সরকার মোটেই দেশর মানুষের স্বার্থ ভেবে কাজ করছে না। কয়েকজন শিল্পপতির স্বার্থ দেখতেই ব্যস্ত।’’
মহিলা সংরক্ষণ বিল ভালো বলেও ওই আইন যে এখনই রূপায়িত হচ্ছে না তার সমালোচনা করে রাহুল গান্ধী ফের ওবিসি মহিলাদের সংরক্ষণের দাবি জানান। ওই আইন রূপায়িত হতে অনন্তপক্ষে ১০ বছর লেগে যাবে কারণ ওর সঙ্গে দুটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে মোদী সরকার। এক, জনগণনা এবং দুই, আসন পুনর্বিন্যাস। তিনি মনে করেন, ‘এখনই ওই আইন রূপায়ণ করা যেত।’
রাহুল গান্ধী এদিন মধ্য প্রদেশকে ‘দুর্নীতির উৎকেন্দ্র’ বলে আক্রমণ করেন বিজেপি সরকারকে। ব্যপম কেলেঙ্কারি, এমবিবিএস ডিগ্রি বিক্রি, বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, মহাকাল লোক করিডর নির্মাণে দুর্নীতি সহ একগুচ্ছ কেলেঙ্কারির উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘মধ্য প্রদেশে বিজেপি’র ১৮ বছরের রাজত্বকালে ১৮ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন তিনজন করে কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন।’

Comments :0

Login to leave a comment