'New India": Untold Story

পিছিয়ে চলেছে ‘নতুন ভারত’, মিডিয়া যা বলে না

জাতীয়

New India Untold Story

সৌরভ গোস্বামী

মোদীর ‘নতুন ভারত’ নিয়ে নানা প্রতিবেদনে প্রশংসার অন্ত নেই। কিন্তু সূচকের যে অংশ সরকারের পক্ষে অস্বস্তিকর, নিয়ম করে চেপে যাচ্ছে বাণিজ্যিক সংবাদমাধ্যমে প্রায় গোটাটাই। খতিয়ে নজর করলেই ধরা পড়ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং পোষিত সংবাদমাধ্যম ‘গোদি মিডিয়া’-র দাবিতে থাকা একাধিক অসঙ্গতি। 

দেশের একটি বহু প্রচারিত সংবাদ প্রতিষ্ঠান কিছুদিন আগে রিপোর্ট করেছে যে বৌদ্ধিক সম্পদের আন্তর্জাতিক সূচকে ৫৫টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ৪২। প্রতিবেদনটিতে গালভরা প্রশংসা করা হলেও এড়িয়ে যাওয়া হয় যে ভারত আসলে ২০২১ সালে ৪০ তম স্থান থেকে এবং ২০১৪ সালে ২৫ তম স্থান থেকে ক্রমশই নেমে গিয়েছে। 

প্রশ্ন হলো, আমরা যদি এতটাই এগিয়ে গিয়ে থাকি তবে কেন বিভিন্ন সূচকে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছি। তোষামুদে সংবাদমাধ্যম তা এড়িয়ে যাচ্ছে।  

স্মার্ট সিটি সূচক, যা ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী শুরু হয়, ভারতের চারটি শহর জায়গা পায়। বেঙ্গালুরু, মুম্বাই, দিল্লি এবং হায়দরাবাদ। সূচকটি স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, সুযোগ, গতিশীলতা এবং প্রশাসনিক দিক পর্যবেক্ষণ করে ঠিক হয়। বেঙ্গালুরু ৭৯ তম স্থান থেকে ৯৩ তম, মুম্বাই ৭৮ তম থেকে ৯০ তম, দিল্লি ৬৮ তম থেকে ৮৯ তম এবং হায়দরাবাদ ৬৭ তম থেকে ৯২ তম স্থানে নেমে এসেছে। চার শহর নেমে গিয়েছে সূচকের অঙ্কে।

সরকার আমাদের এই সম্পর্কে বলবে না। কিন্তু নতুন ভারত-এ শহরগুলি কতটা স্মার্টহয়ে উঠেছে তা নিয়ে কোটি কোটি টাকা অপচয় করে প্রচার করা হবে। একইভাবে ‘দ্য ইকনমিস্ট’-র ‘গ্লোবাল লাইভবিলিটি’ সূচকে, দিল্লি ১১০ তম থেকে ১১৮ তম এবং মুম্বাই ১১৫ তম থেকে ১২৪ তম স্থানে নেমে গেছে। এই সূচকে বসবাসযোগ্যতা বিচার করা হয়েছিল।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘গ্লোবাল ইকনমিক কম্পিটিটিভনেস’ সূচকে ভারত ৪০ তম থেকে ৬৮ তম স্থানে নেমে গেছে। লিঙ্গ বৈষম্য সূচকেও ভারত ১১৪তম থেকে নেমেছে ১৩৫’এ। 

নিয়মিত প্রচারে বলা হয় যে ভারতের ডিজিটাল নেটওয়ার্ক কত সস্তা এবং দুর্দান্ত। যা বলা হয় না তা হলো যে ভারতে ইন্টারনেট পরিষেবায় নিষেধাজ্ঞা জারির নিরিখে বিশ্বে একেবারে প্রথম সারিতে। বিশ্বব্যাপী সরকারি সিদ্ধান্তে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের মোট মেয়াদের অর্ধেকেরও বেশি ভারতে। 

আইনের শাসনের সূচকে, ভারত ৬৬ থেকে ৭৫’এ নেমে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ক্রমাগত অপব্যবহার, সংখ্যালঘুদের দলবদ্ধ নির্যাতন, বিজেপি শাসিত রাজ্যের পুলিশ দিয়ে বিরোধী দলের ওপর আক্রমণ, ভিন্ন স্বর হলেই জামিন ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য জেলে ঢোকানো দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। 

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার থাকা সত্ত্বেও ভারত থেকে টুইটারকে সরিয়ে নেওয়া এবং নিষিদ্ধ করার দাবির সংখ্যা গত এক বছরে এক থেকে হাজারে পৌঁছেছে। কারণ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে সরকার এবং বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা এখন বরদাস্ত করা হয় না।

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে (আইন, সরকার, দক্ষতা এবং বাজার) ১২০তম থেকে ১৩১ তম স্থানে নেমে গেছে। এশিয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩৯টি দেশের মধ্যে ভারত ২৭তম। সূচকের সামগ্রিক মানও বিশ্ব ও আঞ্চলিক গড়ের চেয়েও অনেক নিচে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার আরও একটি সূচকের কথা বলেছিল, তা হলো বিশ্বব্যাংকের স্বচ্ছন্দে ব্যবসা’ সূচক। ঘটনা হলো কয়েক বছর আগে এই সূচকের প্রকাশই বন্ধ হয়ে যায়। দেখা যায় যে কিছু দেশ তথ্যে কারচুপি করার চেষ্টা করছে। 

স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে বিজেপি রাষ্ট্র পরিচালনার সমস্ত ক্ষেত্রগুলিকে একে একে দখল করে নিয়েছে। প্রকাশিত তথ্যকে শাসকদের মনোগ্রাহী করে আমাদের কার্যত খাওয়ানোরব্যবস্থা চলছে। সর্বভারতীয় গণমাধ্যমে চলছে তার আয়োজন। সত্যিকে আড়াল করাই গোদি মিডিয়া’-র কাজে পরিণত হয়েছে।

(অলঙ্করণ: মনীষ দেব)

Comments :0

Login to leave a comment