প্রবন্ধ
বিদায় অপরাজিত দুর্গা - পথের পাঁচালীর দুর্গা
তপন কুমার বৈরাগ্য
মুক্তধারা
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস 'পথের পাঁচালী'কে চলচ্চিত্রে স্থান দেওয়ার জন্য হাত দিয়েছেন
অস্কার বিজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়। চলচ্চিত্রের কিশোরীদুর্গা চরিত্রের জন্য একজন কিশোরী মেয়ের দরকার। অনেক
খোঁজাখুঁজির পর পথের পাঁচালীর দুর্গাকে পাওয়া গেল। তাঁর নাম উমা দাশগুপ্ত। সত্যজিৎ রায়ের মেয়েটাকে খুব
পছন্দ।শুরু হলো চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ।অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৯৫৫খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পেল 'পথের পাঁচালী'।সত্যজিৎ
রায়ের খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল। আর সত্যজিৎ-এর দুর্গা উমা দাশগুপ্ত একটা মাত্র চলচ্চিত্রে অভিনয় করে
সারা বিশ্বে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে উঠলেন। চলচ্চিত্রে দুর্গার মৃত্যু হয়ছিল ১৪বছর বয়েসে; কিন্তু আসল দুর্গা
উমা দাশগুপ্তকে আমরা হারালাম ১৮ই নভেম্বর ২০২৪।কলকাতার একটা বেসরকারী হাসপাতালে ৮৪বছর বয়েসে তিনি
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শিল্পীর মৃত্যু নেই।তিনি আমাদের অন্তরে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তাঁর বিয়ের পর নাম হয়
উমা সেন।আমরা উমা দাশগুপ্ত অর্থাৎ পথের পাঁচালীর দুর্গা হিসাবেই তাঁকে মনে রাখব। নিশ্চিন্দপুরের দুর্গা,হরিহরের
কন্যা দুর্গা,সর্বজয়ার মেয়ে দুর্গা, অপুর দিদি দুর্গা। উমা দাশগুপ্ত যেন সত্যিকারের দুর্গা হয়ে গেছেন।পথের পাঁচালী
যেন পথের গান।যে চলচ্চিত্রের সুরকার ছিলেন পন্ডিত রবিশংকর। পথের পাঁচালী উপন্যাস প্রকাশ পায় ১৯২৯খ্রিস্টাব্দে।
উমা যেন দুর্গার মধ্যে একাত্ম হয়ে গেছে।যে মেয়েটার গায়ের রঙ চাপাচাপা,কাচের চুড়ি,পাতলা গড়ন,পরনে ময়লা শাড়ি,চোখগুলো ডাগর ডাগর সেই উমাই আমাদের কাছে
দুর্গা হয়ে উঠলেন। কাশবনের মধ্য দিয়ে অপু দুর্গার ট্রেন দেখতে যাওয়া,বর্ষাকালে ভিজে জ্বর হওয়া।ওষুধের অভাবে
তাঁর জ্বর বেড়ে যাওয়া।তারপর দুর্গার ঝড়ের রাতে মারা যাওয়া, আমাদের কাছে বাস্তব ও জীবন্ত সব প্রতিচ্ছবি।
উমা দাশগুপ্ত ১৯৪০খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৮৪খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০০খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনে যাদবপুর
বিদ্যাপিঠের শিশু ও প্রাথমিক বিভাগের শিক্ষিকা ছিলেন। তিনি এখানে অঙ্ক ও ইংরাজী পড়াতেন।তাই যাদবপুর বিদ্যাপীঠ তাঁর জন্য গর্বিত।
তাঁর উদ্দেশ্যে সমবেত কণ্ঠে বলতে ইচ্ছে করে----
সে ঢেউয়ের মতন ভেসে গেছে চাঁদের আলোর দেশে গেছে।
Comments :0