বছরের শুরুতে তথ্য নিয়ন্ত্রণে বিধি প্রকাশ করল কেন্দ্র। প্রায় ১৪ মাস আগে কেন্দ্র তথ্য নিয়ন্ত্রণ যে ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা পার্সোনাল (ডিপিডিপি) আইন প্রণয়ন করে তার বিধি শুক্রবার প্রকাশ করেছে কেন্দ্রের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক। তা প্রকাশ করে মন্ত্রক এনিয়ে সাধারণ মানুষের মতামত চেয়েছে। আগামী ১৮ফেব্রুয়ারির মত জানানোর সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। তার পরেই দেশে নতুন বছরে পুরোপুরি চালু হয়ে যাবে তথ্য নিয়ন্ত্রণ ডিপিডিপি আইন। এই আইনে দেশে তথ্য কারবারিদের উপর কড়া নিয়ন্ত্রণ জারির উদ্যোগ নিল কেন্দ্র। ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটার সহ যাবতীয় সোশাল ডিজিটাল মিডিয়া, ই-কমার্স, গেমিং প্ল্যাটফর্ম এবারে নতুন আইনে কড়া নিয়ন্ত্রণ বেধে ফেলা হলো। এই আইন অমান্য হলে ২৫০ কোটি টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। বিধিতে তথ্য সুরক্ষিত রাখতে বোর্ড গঠনের কথা জানানো হয়েছে। বোর্ড সরকারের নির্দেশ মতো দেশের সংহতি সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা খতিয়ে দেখে তথ্য দেশের বাইরে প্রকাশের অনুমতি দেবে। বিধির ছত্রে ছত্রে রয়েছে সরকারের ডিজিটাল তথ্যে নজরদারির নানা ব্যবস্থা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বিধিতে তথ্যে গোপনীয়তা এবং জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুর শর্ত রাখা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে।অনেকেই মনে করছেন দেশের নিরাপত্তা অজুহাতে সরকারি তথ গোপনের চেষ্টা চলছে কেন্দ্রের।
বিরোধী দল মোদী সরকারের তথ্য জানার অধিকার কেড়ে নেওয়ার নানা উদ্যোগে আগেই সরব হয়েছেন। সংসদে দেখা গছে সরকার পক্ষ নানা বাহানায় তথ্য জানার অধিকার কার্যত খর্ব করেছে। কর্পোরেটের দেশের চালু বড় সংবাদপত্র এবং মিডিয়া চ্যানেলে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এবারে ডিজিটাল মিডিয়ায় কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ আনতে নিয়ে আসা হয়েছে ডিপিডিপি আইন। বিরোধীরা জানান ইউপিএ আমলে সাধারন মানুষকে তথ্য জানার অধিকার দিতে তৈরি হয় তথ্য জানার অধিকার আইন (আরটিআই)।এই আইনে সরকারি যাবতীয় তথ্য জানার অধিকার রয়েছে নাগরিকদের। তাতে মোদী জমানায় সংশোধন এনে বিভিন্ন সরকারি তথ্য প্রকাশ রোধে সরকারকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এবারে ডিজিটাল মিডিয়াকে এই আইনে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ফলে চলতি আরটি আইনে যে তথ্য জানার অধিকার রয়েছে সেই আইন লঙ্ঘন করে তথ্য জানার অধিকার কেড়ে নেওয়ার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ডিপিডিপি আইন।
প্রসঙ্গত, ডিপিডিপি আইনের এই বিধি আইনের বহু বিতর্কিত বিষয়ে কোন আলোকপাত করেনি বলেই জানায় ডিজিটাল সোসাল মিডিয়া সংগঠন ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডশন(আইএফএফ)। তারা জানাচ্ছে, আইন প্রণয়নের পর অনেক দেরিতে এই বিধি প্রকাশ করা হলো। এই বিধি খুব সামান্য বিষয় তুলেছে এবং আইনের বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়ে অস্বচ্ছ থেকে গেছে। তারা অস্বচ্ছতার উদাহরণ দিতে গিয়ে জানায়, আইনে ‘যুক্তিযুক্ত সুরক্ষা’, ‘যথোপযুক্ত ব্যবস্থা’ এবং ‘প্রয়োজনীয় কারন’ বলে শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছে তার কোনও ব্যাখ্যা বিধিতে দেওয়া হয়নি।এতে ব্যবস্থা গ্রহণে বিভ্রান্তি বাড়বে। আইএফএফ আইন ও তার বিধির অস্বচ্ছতা এবং সরকারের হাতে এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছে। তারা জানাচ্ছে,৫নম্বর বিধিতে এবং আইনের ৭(খ) ধারায় সরকারের তথ্য যাচাই করার সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তার ভিত্তিতে তথ্য কারবারির ভরতুকি পরিষেবা সার্টিফিকেট, লাইসেন্স এবং পারমিট দেওয়া হবে। ৬নম্বর বিধিতে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা এবং তা লঙ্ঘনের যে কথা বলা হয়েছে তা খুব অস্বচ্ছ। স্পষ্ট তার ব্যাখ্যা নেই।
এদিকে এই বিধিতে সরকারের ডিজিটাল মিডিয়ায় উপর নজরদারি আরও সুগম করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ডিজিটাল মিডিয়ায় বিভিন্ন তথ্য শিশুদের কাছে নিষিদ্ধ করতে আইনে যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তাতে কার্যত সরকারের উপর নির্ভর করতে হবে তা ডিজিটাল সংস্থাকে। এতে ‘ভেরিফায়েবল পেরেন্ট কনসেন্টের’ জন্য সরকারের থেকে অনুমতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যা নজরদারি ব্যবস্থার অন্যতম হাতিয়ার বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে বিধিতে তথ্য সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থা এবং তার অপপ্রয়োগ নিয়ে কোনও স্বাধীন তথ্য সুরক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়া হয়নি। এই আইনের বড় অংশ কার্যকরের দায়িত্ব থাকবে কেন্দ্রের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের। এতে আইনের অপপ্রয়োগ এবং তথ্য জানার অধিকার খর্ব হওয়ার সুযোগ থেকে যাচ্ছে। বহুদিন বাদে আইনের বিধি তৈরি হলেও আইনের এসব গলদ দুর করার কোনও চেষ্টাই হয়নি। উলটে সরকারকে এই ডিজিটাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এই আইনে তথ্যকে দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার যে কথা বলা হয়েছে তা বিতর্কিত বলেই জানাচ্ছেন ডিজিটাল তথ্য বিশেষজ্ঞ ধ্রুব গর্গ। তিনি বলেন, কিছু তথ্য যা বিদেশে পাঠানে যাবেনা বলে আইনে যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তা কার্যকর করা খুব জটিল বিষয়।তা কিভাবে সম্ভব হবে তা পরিস্কার করা হয়নি। এটা সরকারের ভালো ভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত নয়তো বিভ্রান্তি বাড়বে। বিধিতে দেশের সার্বভোমত্ব, নিরাপত্তা রক্ষায় নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য জানার চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সরকারকে।এতে বিতর্ক উঠবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রসঙ্গত, বিধিতে কনসেন্ট ম্যানেজার গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।কনসেন্ট ম্যানেজার তথ্য অনুমোদন করা ও বাতিল করার ক্ষমতা থাকবে। এতে কনসেন্ট ম্যানেজারের রেজিষ্ট্রেশনে ফি ধার্য করা হয়েছে ১২ কোটি টাকা। ফলে সোসাল মিডিয়ায় পুঁজির দাপট অবাধ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নয়া বিধিতে আগামী দিনে ডিজিটাল মিডিয়ায় কর্পোরেট আধিপত্যও সরকারের নজরদারি অবাধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ডিজিটাল মিডিয়ার সংগঠকরা।
Personal Data Rule
নয়া বিধিতে কড়া নজরদারি ডিজিটাল মিডিয়ায়
×
Comments :0