Editorial

কোটা সঙ্কট

সম্পাদকীয় বিভাগ

প্রতিবেশী বাংলা দেশে গত কয়েকদিন ধরে এক উত্তাল ছাত্র আন্দোলন চলছে। দেশের সর্বত্র এই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ততার জোয়ার এতটাই প্রবল যে আন্দোলন আর শুধু ছাত্র আন্দোলনের গন্ডির মধ্যে আটকে নেই। বিপুল জনসমর্থনের ঢেউও আছড়ে পড়ছে তার উপর। আন্দোলনের এমন কূল ছাপানো ব্যাপ্তি এবং আবেগের প্রাবল্যে রীতিমতো চিন্তিত সরকারও। স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র আন্দোলনে মৌলবাদীদের এবং সরকারবিরোধীদের অনুপ্রবেশ ও নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস দে‍‌শের রাজনৈতিক ভারসাম্য বদলে দিতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে সরকারও কঠোর হাতে আন্দোলন দমনে নেমে পড়েছে। পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সশস্ত্র প্রতিরোধের পাশাপাশি শাসক দলের কর্মী-সমর্থকরা ঝাঁপিয়েছে আন্দোলনকারীদের মোকাবিলায়। ফলে সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে যায়। তাতে ইতিমধ্যেই একশোর কাছাকাছি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। জখমের সংখ্যাও বিরাট। তেমনি গ্রেপ্তারির সংখ্যাও বেশ কয়েক হাজার।
একটা গণতান্ত্রিক দেশে এমনটা কাম্য ছিল না। আন্দোলন যেমন শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক হওয়া উচিত তেমনি সরকার ও শাসক দলেরও অনেক বেশি সহিষ্ণু ও ধৈর্যশীল হওয়া উচিত। যদি উভয় পক্ষে সংঘম থাকত তাহলে হিংসার এমন ব্যাপকতা দেখা যেত না এবং এত বিরাট সংখ্যায় হতাহতের ঘটনাও ঘটত না। তাছাড়া যে ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই আন্দোলন বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে সেটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। চাকরির বাজারে গভীর সঙ্কটের মধ্যে সরকারি চাকরি পাবার স্বপ্ন শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের কাছে ভীষণভাবে বাস্তব। সেই চাকরির বেশিটাই যদি কোটার মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কমযোগ্যদের কাছে চলে যায় তাহলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ অস্বাভাবিক নয়। আবার সেই ক্ষোভ থেকে দুর্বার সরকারবিরোধী আন্দোলনও অপ্রত্যা‍‌শিত নয়। তেমনি দলমত নির্বিশেষে ছাত্র-ছাত্রীদের এমন আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে পড়ে মৌলবাদীরা বিপথে চালিত করতে পারে। বিরোধীরা এই আন্দোলনকে সরকার পতনের লক্ষ্যে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারে। তাই উভয় পক্ষকেই সচেতন থাকা জরুরি।
আন্দোলনের মূল দাবি সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার। এই দাবিতে আন্দোলন নতুন নয়, আগেও একাধিকবার হয়েছে। কিন্তু সমস্যার সময়োপযোগী ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিপূর্ণ মীমাংসা হয়নি। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সহ মোট ৫৬ শতাংশ কোটা রয়েছে। সাধারণের জন্য আছে মাত্র ৪৪ শতাংশ। আন্দোলনের দাবি কোটার হার খানিকটা কমিয়ে সাধারণের জন্য উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র বড় করা হোক। ৫৪ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হবার পর দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যাদের জন্য কোটা তাদের অবস্থাও অনেক বদলেছে। তাই বর্তমান অবস্থার ঢুলচেরা বিচার করে আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধান সূত্র খোঁজা জরুরি। বিষয়টিকে পক্ষে-বিপক্ষে রাজনৈতিক সংঘাতের অস্ত্র বানানো ঠিক নয়। যে গণতান্ত্রিক দেশ ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে দেশের উন্নয়ন চায়, উন্নয়নের সুফল থেকে কোনও অংশের নাগরিককে বঞ্চিত করতে চায় না সেখানে কোটা থাকতেই পারে। তবে সেটা হতে হবে বাস্তবসম্মত, স্বচ্ছ। কোনোমতেই অন্যায্য সুবিধাদান হতে পারে না।

Comments :0

Login to leave a comment