RSS Netaji

নেতাজীকে নিয়ে চরম ইতিহাস বিকৃতি সঙ্ঘের

জাতীয়

RSS Netaji

জানালায় নেতাজী। তিনি দেখছেন, আরএসএস কুচকাওয়াজ করছে।
এই ছবিই এবার থিম মমতা ব্যানার্জির ‘প্রকৃত দেশপ্রেমিক’ সংগঠনের। যদিও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ছবি ব্যবহার করা এই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটির ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কোনও ভূমিকা নেই। বরং তারা বারবার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই চলেছে।


সোমবার শহীদ মিনারে ‘নেতাজী লহ প্রণাম’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সঙ্ঘ। স্বয়ংসেবকরা কুচকাওয়াজ করবেন। সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবত এখন কলকাতায়। সোমবার নেতাজীর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু সুভাষচন্দ্র বসুর মতো দেশপ্রেমিকের সঙ্গে আরএসএস-এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও এবার দাবি করে বসেছে তারা। 
নিজেদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরএসএস কী জানাচ্ছে? 


তারা দাবি করছে,‘‘ভারতমাতার বীরপুত্র নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সাথে সঙ্ঘের প্রথম সরসঙ্ঘচালক ডঃ হেডগেওয়ারের প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৯২১ সালে কলকাতাতে কংগ্রেসের অধিবেশনে, তখন ডাক্তার হেডগেওয়ার বিদর্ভ কংগ্রেসের সচিব ছিলেন।’’ যদিও এটি সত্যিও হয়, সেই অধিবেশনে আরও অনেকের সঙ্গেই সুভাষ চন্দ্র বসুর দেখা হয়েছে। কারণ কংগ্রেস নামক মঞ্চটিতে থেকে তখন নানা মতের বিশ্বাসীরা কাজ করতেন। এই বক্তব্যে নেতাজী-সঙ্ঘের ঘনিষ্ঠতা প্রমাণিত হয় না। কারন আরএসএস তখন তৈরিই হয়নি।


তাই সঙ্ঘ আরও দাবি করেছে,‘‘নেতাজী এবং ডাক্তারজী, দুজনেরই বিশ্বাস ছিল যে রাষ্ট্রীয় ভাবধারায় অনুপ্রাণিত আদ্যন্ত অনুশাসিত সংগঠনই ভারতের স্বাধীনতার একমাত্র পথ। তাই একজন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ এবং অন্যজন আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব দিয়েছেন।’’ রাষ্ট্রীয় ভাবধারা মানে ‘হিন্দুত্ব’ — এমন কথা নেতাজী কখনও বলেননি। তিনি এই ধারণার তীব্র বিরোধী ছিলেন। তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজই প্রমাণ, ভারতের বৈচিত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকেই সুভাষ চন্দ্র তুলে ধরেছিলেন বাহিনী গঠনেও। দুটি সংগঠনের চরিত্রে এবং লক্ষ্যে কোনও মিল নেই।
সঙ্ঘ আরও কী প্রচার করছে ? 


তারা লিখছে,‘‘নেতাজীর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ সম্বন্ধে প্রথম অনুভব হয় একটি চলমান ট্রেনের কামরার জানালা দিয়ে, যখন তিনি সেই ট্রেনটিতে ভ্রমণ করছিলেন, নাগপুরের উপর দিয়ে ট্রেনটি যাবার সময় নেতাজী স্বয়ংসেবকদের গণবেশ পরে পথ সঞ্চলন (কুচকাওয়াজ) করতে দেখেন।’’ কবে ঘটেছিল এটি ? তার কোনও তারিখ দেওয়া হয়নি। এই ‘জানালা দিয়ে গণবেশ’ দেখার ঘটনার আর কোনও সাক্ষী, প্রমাণেরও হদিশ নেই লেখাটিতে। ঠিক এইভাবেই মনগড়া কাহিনীকে সত্যি বলে প্রতিষ্ঠিত করে সাম্প্রদায়িক, ফ্যাসিবাদী শক্তি। 
সঙ্ঘ আরও দাবি করছে, নেতাজী ‘‘খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এই স্বয়ংসেবকরা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের এবং তার প্রতিষ্ঠাতা হলেন তারই এক সময়ের কংগ্রেসের সতীর্থ ডাক্তারজী। 

তিনি ডাক্তারজীর সাথে দেখা করবার অভিলাষ ব্যক্ত করেন এবং ১৯৪০ সালের জুন মাসে নাগপুরে তাদের দেখা হয়। অনেক ঐতিহাসিকের মতে নেতাজী, ডাক্তারজীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনী এর সাথে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সংযুক্তির অভিপ্রায় নিয়ে।’’ আজাদ হিন্দ বাহিনী আর আরএসএস-কে মেলাতে চেয়েছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু! ইতিহাস বলছে, ১৯৪০-র এই সময়ে সুভাষ চন্দ্র মহম্মদ আলি জিন্নাহের সঙ্গেও দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন। ধর্মীয় পরিচিতির ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনার জন্য নেতাজী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। 


এই ‘অনেক ঐতিহাসিকরা’ যে নাগপুরে সঙ্ঘের সদর দপ্তরে জন্ম নিয়েছেন, তা বলাই বাহুল্য। তাঁরাই মমতা ব্যানার্জিকে ‘সাক্ষাৎ দূর্গা’ বলেছিলেন।
আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরি হয়েছিল ১৯৪২-এ, সিঙ্গাপুরে। তার প্রধান তখন ছিলেন রাসবিহারী বসু। ১৯৪৩-র ৪ জুলাই রাসবিহারী বসু ওই বাহিনীর নেতৃত্বভার সুভাষ চন্দ্র বসুর হাতে তুলে দেন। ১৯৪১-র ১৭ জানুয়ারি রাতে এলগিন রোডের বাড়ি থেকে নেতাজী অন্তর্ধান করেন। এমন ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত তথ্যের মাঝে ১৯৪০-র জুনে আজাদ হিন্দ ফৌজ এবং সঙ্ঘের একীভূতীকরণের কথা ভাববেন? কারণ আজাদ হিন্দ ফৌজ বা আইএনএ তখন রাসবিহারীই তৈরি করেননি! নেতাজীর ভাবনা তো অনেক পরের কথা!
সঙ্ঘের আরও দাবি,‘‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই সময় ডাক্তারজী গুরুতর অসুস্থ ছিলেন এবং এমত অবস্থায় ডাক্তারজীর সাথে নেতাজীর খুব অল্পই সাক্ষাৎ হয়, সেই সপ্তাহেই ডাক্তারজীর তিরোধান ঘটে।’’ 
বলাবাহুল্য এটি খুবই ‘সৌভাগ্যজনক।’ কারণ অন্তত সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা ‘ডাক্তারজী’ এই মারাত্মক ইতিহাস বিকৃতি থেকে বেঁচে গেছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment