গল্প
আমাদের ভবেনদা
রাহুল চট্টোপাধ্যায়
মুক্তধারা
শহুরে লাইন পেরিয়ে ট্রেন ছুটে চলেছে শহরতলীর দিকে। খুব ভীড়। একটু ও দাঁড়াবার জায়গা নেই। আষাঢ়ের বিকেল। খানিক বৃষ্টি,খানিক রোদ্দুর। কিন্তু ভ্যাপসা গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত সকলের। কামরার ছোট গলিগুলোর মধ্যে সকলেই মাথা ঝুঁকিয়ে দিতে চাইছে চলমান পাখাটার দিকে। কিন্ত অস্বস্তি কাটছে না।
আমি অনেক দিন পর ট্রেন কামরায়। চেনা মুখ নেই। কেবল আছে চেনা ভিড় চেনা গরম আর চেনা অস্বস্তি। এত ভিড়ের মধ্যেও কে যেন চিৎকার করছে-'বই! মামনির ছড়া, আদর্শলিপি , ধারাপাত -নেড়েচেড়ে দেখুন, কেনাকাটা আপনার ইচ্ছে, দেখাশোনা ফ্রি'
শব্দগুলো আমার চেনা। গলার স্বর যেন চেনা চেনা। আস্তে আস্তে গলার স্বর কাছে এল। দেখলাম ভবেনদা। ভবেন হকার নামে যে পরিচিত। উত্তরপুর স্টেশনে গুমটি খুলে চা বেচতো ভবেনদা। কতো গল্প কতো মজা হতো চা খেতে খেতে। একদিন স্টেশন গুমটি ভাঙা পড়ল।ভবেনদার মতো আরও অনেকে কাজ হারালো। অন্য কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লো অনেকে। কেউ কেউ বাইরের রাজ্যে চলে গেল কাজের সন্ধানে। আর ভবেনদা ট্রেনে হকারি শুরু করলো। সেই থেকেই ঐ 'বই বই, আরও বই'।
বই খুব ভালো লাগতো ভবেনদার। আজও সেই বই নিয়েই জীবন কাটছে তার। বিক্রি হোক বা না হোক দৌড়ে বেড়ায় ভবেনদা,বুড়ো মায়ের আর নিজের পেট চালানোর জন্য।
ভিড়ের মধ্যই ডাকলাম -'ভবেনদা, ভবেনদা'
ঘুরে তাকিয়ে একগাল হেসে বলললো-'কদ্দিন পর দেখা হল রে সেন্টূ, কেমন আচিস?'
ঘাড় নাড়লাম , বললাম 'ভালো গো ভবেনদা,তুমি কেমন?'
-'আর কেমন,মা টা আর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না,আর আমি তো এই দেখচিস'-
একগাল হাসলো ভবেনদা। পরের স্টেশনে নেমে গেল ভিড় ঠেলতে ঠেলতে।এবার অন্য বগি। কানে আসতে থাকলো-'বই বই, ধারাপাত, আদর্শলিপি, মামনির ছড়া'
শুনতে থাকলাম। বারবার ভবেনদার হাসিটা চোখে ভাসতে থাকলো। শুধু আমার চেনা ভবেনদা নয়। তার মতো কতো মানুষ রয়েছে যারা এক কাজ থেকে অন্য কাজে ঘুরে চলেছে,অন
Comments :0