গল্প | মুক্তধারা
অসমাপ্ত
রাহুল চট্টোপাধ্যায়
রোদ্দুরটা ঢুকছে না ঘরের ভেতর। কারণ সব জানলা বন্ধ। কেবল কয়েকটি মানুষ। নিজেরা কথা বলছে। নিজেরাই প্রশ্ন করছে, নিজেরাই শুনছে,উত্তর দিচ্ছে। যখন কথা শেষ হচ্ছে একে একে বেরিয়ে আসছে। কারোর মাথা নিচু,কারোর মুখ অন্যদিকে ফেরানো। একে একে গাড়িতে উঠে যাচ্ছে। কারোর সঙ্গে কথা বলা বারণ-
সুবিমল যখন বেরোলো তখন তার চারদিকে পুলিশ ঘিরে রেখেছে তাকে। দূর থেকে মুখটা দেখলো বিমলা। সুবিমলের মুখটা নিচের দিকে। একবার মাত্র মাথা তুলে তাকিয়েছিল । বিমলার মনে হল তার দিকে চোখ পড়েছে।একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল তার। হয়তো দেখে নি।এত মানুষের মধ্যে থেকে তার দিকে চোখ পড়বেই বা কিভাবে? নিজেকেই প্রশ্ন করে বিমলা। মাথা নাড়ে। তারপর পিছন ফিরে হেঁটে চলে সে। সামনের অসংখ্য মানুষের ফাঁক গলে কোনক্রমে বেরিয়ে যায়। সামনেই বাসস্ট্যান্ড। দাঁড়িয়ে পড়ে সেখান। দৃষ্টিটা দূরে।
সত্যি মিথ্যে কেমন গুলিয়ে ফেলে বিমলা। বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায় দুলতে থাকে। ছেলের কথা ভাবতে ভাবতে উদাস হয়ে যায়। ছেলে পার্টি করতো না,তবে বাপের মতো সত্যি কথা বলতে পারতো।সেটাই কি তার দোষ হয়ে গেলো। জানে না বিমলা।
সেদিন চায়ের দোকানে এক কাপ লিকার হাতে ছিল তার। দোকানদার টাকার হিসেব মেলাতে না পেরে কর্মচারীটার গালে সজোরে চড় কষিয়ে ছিল। সুবিমল চায়ের কাপটা রেখে দোকানের মধ্যে ঢুকে দোকানদারকে কষিয়ে চড় মারে। তারপর থানা,তারপর কোর্ট। কতদিন হয়ে গেল তার জামিন হল না। পয়সা নেই তাদের।খরচ করতে পারে না।জেলে পচে মরে।
বিমলা এত খবর ভালো করে জানত না। পরে শুনেছে।সবটা তাও শোনা নেই তার। কেবল তার ছেলে খুব বড়ো অন্যায় করেছে একথাই লোকমুখে তার কানে এসেছে। এমন অন্যায় থেকে নাকি ছাড়া পাওয়া দুষ্কর। দোকানদার নাকি এমন সব দোষ দিয়েছে যে ছাড়া পাবে না ছেলেটা। কি যে দোষ চাপলো ছেলের ঘাড়ে তা বিমলা ,ভাবতে পারে না। মনটায় উচাটন হয়। বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বুকটায় মোচড় দিতে থাকে তার।
সামনে দিয়ে হুস করে জেলের গাড়িটা বেরিয়ে যায়। ছেলেকে দেখতেও পায় না সে। ঘাড়টা উঁচিয়ে দেখতে চেষ্টা করে। কিছু দেখা যায় না। একরাশ রাস্তার ধুলাবালি উড়তে থাকে। কিছু লোক রে রে করে ওঠে। বিমলা আঁচলটা মুখে চেপে ধরে।
- বাসস্ট্যান্ডের অদূরে বাদাম গাছটায় হঠাৎ চাতক পাখিটা ডেকে ওঠে। বিমলার চোখ চলে যায় গাছটার দিকে।
Comments :0